করোনায় মৃতদের দাফনে বাড়াবাড়ি নয়: আল্লামা কাসেমী
করোনায় মৃতদের লাশ দাফনে অবশ্যই একটা নিয়ম থাকতে হবে। তবে সেটা যাতে অপ্রয়োজনীয় বা অযৌক্তিক পর্যায়ের না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, করোনায় মৃতের লাশ নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আয়োজন জনমনে ভীতি তৈরি করছে। তাই সামাজিক বৈষম্য দূর করতে এই রোগে মৃতদের লাশ থেকে সংক্রমণের ভীতি দূর এবং আরও মানবিক ও মর্যাদাজনক উপায়ে দাফনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
শনিবার (২০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জমিয়ত মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, একজন জীবিত করোনা আক্রান্তের শরীরে ভাইরাস যেরূপ সক্রিয় এবং বিস্তারের প্রবল ঝুঁকি থাকে, করোনায় মৃতের শরীরে সেভাবে থাকে না। বরং তিন ঘণ্টা পর লাশের দেহে বিদ্যমান ভাইরাসগুলো সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। তাহলে তুলনামূলক অধিক ঝুঁকিপুর্ণ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা চলতে পারলে, কম ঝুঁকিপূর্ণ মৃতের লাশ নিয়ে কেন এত তড়িঘড়ি, অবহেলা ও অচ্ছ্যুত মনোভাব?
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, করোনায় মৃতদের লাশ দাফনে মাত্রাতিরিক্ত তড়িঘড়ি, অতি গোপনীয়তা এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের সুযোগে জায়গায় জায়গায় প্রতিবন্ধকতা, মৃতের চেহারা স্বজনদের জন্য শেষবার দেখার সুযোগ না থাকা ইত্যাদি কারণে এই ভাগ্যাহত মানুষগুলোর প্রতি মনের অজান্তেই সামাজিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া করোনা আক্রান্ত যেকোনো রোগী মৃত্যু পরবর্তী এমন অবজ্ঞামূলক পরিণতি কল্পনা করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মনের জোর হারিয়ে ফেলেন। এতে তার শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অবনতি দেখা দেয়। শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমতে থাকে ফলে ওষুধ ঠিকমতো কাজ করে না। কারণ, রোগীর সুস্থতার জন্য মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আল্লামা কাসেমী আরও বলেন, করোনা মহামারিতে মৃতদের লাশ আরও মর্যাদাজনকভাবে দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করে সরকার সহজেই এসব ভাগ্যাহত মানুষ ও পরিবারগুলোর প্রতি অমানবিক সামাজিক বৈষম্য ও মানসিক পীড়ন দূর করতে পারে।
তিনি বলেন, করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হওয়ার নির্ধারিত সময়ের পর মর্যাদাজনকভাবে গোসল ও কাফন পরিয়ে পরিবারের সকলের জন্য শেষবারের মতো চেহারা দেখার সুযোগ রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারের মনোনীত জায়গায় জানাজা ও দাফনের বাধাহীন সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় মৃত্যুর তিন ঘন্টা পর লাশের দেহে ভাইরাস সক্রিয় থাকে না- স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের এই অভিমত সকল প্রকার গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে বার বার প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি করোনায় মৃতদের জন্য রাষ্ট্রীয় সহানুভূতি ও মর্যাদার ঘোষণা রাখতে হবে। কারণ, ইসলামেও মহামারিতে মৃতদেরকে ‘শহীদ’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই করোনায় মৃতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা থাকাটা যুক্তিযুক্ত এবং মানবিকতাবোধের চাহিদাও।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, এসব নিয়ম শুধু প্রণয়ন নয়- বরং সরকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে তৎপর হলে এর বহুমুখী সুফল পাওয়া যাবে। তখন কেউ আর ‘করোনা’ রোগ গোপন করতে চাইবে না, বরং যে কারো লক্ষণ দেখা গেলে অন্যান্য রোগের মতো প্রকাশ্যেই চিকিৎসার আওতায় আসতে সক্রিয় হবে।