খালাস পেলেন ড. ইউনূস

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের করা মামলায় দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৭ আগস্ট) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। রায় ঘোষণার সময় ড. ইউনূসসহ চারজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

রায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ড. ইউনূসসহ অন্যরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক শুনানিতে বলেছিলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ মামলা হয়নি। তবে বাদীপক্ষের সাক্ষ্য এবং তাঁদের উপস্থাপিত দলিল থেকে প্রমাণিত হয়েছে, শ্রম আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের একজন পরিদর্শক মামলা করেছিলেন।

আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিতভাবে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে।

গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিজস্ব নীতিমালা আছে, যা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আবেদন বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমকে কোনো কিছু অবহিত করা হয়নি। এরপর ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট পুনরায় গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগের নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুমোদনের জন্য মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ আদেশ দেওয়া হয়নি।

রায়ে আদালত বলেন, গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগের নীতিমালা অনুমোদনে যথাযথ আদেশ না দেওয়ার বিষয়ে আসামিপক্ষ আদালতে আসতে পারতেন। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগের নীতিমালা অনুমোদন না হলেও নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগসহ অন্যান্য কার্য সম্পন্ন করেছে; যা শ্রম আইনের লঙ্ঘন।

রায়ে আদালত আরও বলেন, মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের তিনটি ধারা এবং শ্রম বিধিমালার একটি ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ও ৩০৭ ধারা অনুযায়ী আসামিদের ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।