অনলাইন ক্লাসের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও বাবা-মায়ের করণীয়
করোনাভাইরাসের প্রকোপে থমকে গেছে শিক্ষাব্যবস্থা। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ। মহামারি ভাইরাসটির প্রার্দুভাব সহজেই কমবে না –এমন শঙ্কা থেকে বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়।
এপ্রিলের শেষ দিক থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই প্রি-ক্যাডেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব লেভেলে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। লক্ষ্য একটায় ঘরবন্দী এ সময়েও যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাটা চালু রাখা যায়। সবশেষ গান, নাচ, আঁকাআঁকির ক্লাসও এখন অনলাইনে নেওয়া শুরু হয়েছে।
তবে অনলাইন ক্লাসে সুবিধা যেমন আছে, তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। অসুবিধাগুলো দুই ধরনের। শিক্ষাগত ও স্বাস্থ্যগত। শিক্ষাগত সমস্যার মধ্যে অন্যতম- স্কুল ছুট বা ঝরে পড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি, মোবাইল-ইন্টারনেট না থাকায় বড় একটি অংশ বঞ্চিত এবং স্কুল খোলা না থাকায় সময়ানুবর্তিতার বিষয়ে অসচেতন হয়ে পড়া।
তবে শিক্ষাগত দিকের চেয়ে অনলাইন ক্লাসের স্বাস্থ্যগত দিকের সমস্যায় বেশি। চলুন জেনে নিই বিশেষজ্ঞদের মতে অনলাইন ক্লাসের স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো:
অবসাদগ্রস্ত বা মানসিক ক্লান্তি:
যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে মানসিক বিকাশ হয়, সেই সময়ে ঘরে বসে থাকায় অবসাদগ্রস্ত হতে পারে স্কুলপড়ুয়ারা। চিকিৎসকরা বরাবরই সাবধান করছেন- স্মার্টফোনের আলোয় চোখের ক্ষতি হতে পারে। সেই সঙ্গে মানসিক ক্লান্তি আনে। অনলাইন ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার করতেই হয়। ফলে চোখের সঙ্গে অন্য সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে বাচ্চাদের।
অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারে ক্ষতি:
অনলাইন ক্লাসের জন্য দীর্ঘসময় বিভিন্ন ধরনের হেডফোন ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা। ফলে নানা ধরনের শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যার শিকার হচ্ছে তারা। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় জানান, প্রতিদিনই কানের সমস্যা নিয়ে আসছে ছোট শিক্ষার্থীরা। জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি বুঝেছেন, অনলাইন ক্লাস চলাকালীন হেডফোন ব্যবহারে ছোটদের কানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
আচরণে নেতিবাচক পরিবর্তন:
চিকিৎসকরা বলছেন, একটানা মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকায় ছেলে-মেয়েদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিচ্ছে। একটুতেই তারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি চরম বিরক্তি দেখাচ্ছে। জেদি হয়ে ওঠাসহ ব্যবহারিক নানা পরিবর্তনও ঘটছে।
অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ ও মুটিয়ে যাওয়া:
স্কুলে বা বাইরে কোথাও না যাওয়ায় খাদ্য অভ্যাসেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। ঘন ঘন ফ্রিজ খুলে নানা ধরনের খাবার খাচ্ছে। অথচ গেল ৬ মাস হাঁটা-চলা, খেলাধুলা বা শারীরিক কোনো পরিশ্রমের বালাই নেই! ফলে স্কুলপড়ুয়া শিশুরা মুটিয়ে যাচ্ছে। বয়সে তরুণদের এই বয়সে মেদ বাড়ছে!
ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে নিস্তেজতা:
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীর ভৌমিকের মতে, ছেলে-মেয়েরা এখন খেলতে মাঠে যেতে পারছে না। অথচ তারা যখন নিয়মিত স্কুলে যেত, তখন স্কুলের মাঠে একদফা খেলতো। আবার বাড়িতে ফিরে বিকেলে বাড়ির পাশে বা পাড়ার মাঠে খেলাধুলা করতো। স্বাভাবিকভাবে ওই সময়টাতে সূর্যের আলো গায়ে পড়তো।
তিনি আরও জানান, সূর্যের আলো থেকে যে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়, তাতে শিশু ও কিশোর বয়সীদের শরীর চনমনে থাকে। যেটা এখন পাচ্ছে না ওরা। অভিভাবকদের এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
সংকটের মধ্যেই যা করণীয়:
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অভিভাবক ও শিক্ষক সকলেই বলছেন- পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অনলাইন ক্লাসটা চালিয়ে নিতে হবে। না হলে পড়াশোনা পিছিয়ে যাবে। কিন্তু এ সময়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে শিশু-কিশোদের যত্ন নিতে হবে।
#সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
*অনলাইন ক্লাসগুলো একটানা না করিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে আরও আনন্দদায়ক করে তুললে সমস্যা কমবে।
*অনলাইন ক্লাসে যদি দেখার স্ক্রিন বা ফ্রেম বড় করা যায়, তাহলেও সুবিধে।
*জনসমাগম এড়িয়ে সন্তানদের নির্দিষ্ট সময় বাড়ির বাইরে নিতে হবে। তবে সেসময় অভিভাবকদের নজর থাকা জরুরি।
*হেডফোনের পরিবর্তে লাউড স্পিকার ব্যবহার করা।
*পড়ার সঙ্গেই ছোটদের ক্লাসিক সিনেমা দেখিয়ে মন ভালো রাখা।
*ফোন-কম্পিউটার স্ক্রিনের বাইরে ঘরেই কিছু খেলাধুলা করতে দিতে হবে। যেমন- ক্যারম, লুডু। সেগুলোতে অভিভাবকদের সঙ্গ খুব জরুরি।
সূত্র: আনন্দবাজার