মশার উপদ্রব কমাতে বাড়ির আঙিনায় রোপন করুন বিশেষ কিছু গাছ
বর্ষা আসলেই বাড়ে মশার উপদ্রব। দাপট দেখাতে শুরু করে মশাবাহী ভাইরাস ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া। এছাড়াও চুলকানি, ত্বকে লালচে দাগসহ আরও নানা সমস্যা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই জরুরি।
তবে মশা মারতে কামান দাগার প্রয়োজন নেই! মানে কাঁড়িকাঁড়ি পয়সা খরচ করে হরেক রকম মসকিউটো রেপেল্যান্ট ব্যবহার না করে বরং প্রকৃতির সাহায্য নিন। এই যন্ত্রণাকর কীটের কামড় থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে বিভিন্ন গাছ। যেগুলোর ঘ্রাণ মানুষের ভালোলাগলেও মশাদের জন্য অতি জঘন্য।
উদ্ভিদবিজ্ঞানে এই ধরনের গন্ধযুক্ত গাছ ও ফুলের কথা অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত। উদ্ভিদবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে মশা-মাছি দূরে রাখার কিছু উদ্ভিদ ও ফুলের কথা এখানে উল্লেখ করছি।
হলুদ গাঁদা ফুল:
হলুদ গাঁদা ফুল সবাই চেনেন। গাঁদাফুলের রেণু ও পাপড়ি থেকে নিসৃত বিশেষ গন্ধ মানুষের নাকে সুঘ্রাণ হলেও মশার জন্য অসহনীয়। তাই ঘরের সামনের বাগানে, বারান্দা কিংবা জানালার পাশে টবে এই গাছ থাকলে মশার উপদ্রব কমবে।
সিট্রোনেলা ঘাস:
বিশেষ ঘাসজাতীয় এই গাছ পাঁচ থেকে ছয় ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। বাগানের ধারে, কিংবা টবে এই ঘাস রোপণ করে রাখতে রাখতে পারেন। সিট্রোনেলার বিশেষ গন্ধ মশা দূরে রাখে। আবার এই ঘাস থেতলে তেল বের করে পানিতে মিশিয়ে ঘর মুছলে মশা এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব কমবে। তবে টবে রাখলে তাতে ভালো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পুদিনা বা মেন্থল:
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং খাবারের স্বাদ বাড়াতে মেন্থল বা পুদিনার বেশ সুপরিচিত। তবে মশা তাড়াতেও পুদিনা গাছের তীব্র ঘন্ধ অত্যন্ত কার্যকর। ছোট পাত্র, টব ইত্যাদিতে ঘরে বা বেলকণিতে পুদিনা গাছ রাখা যায়। এটি সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। মৃদু ছায়াতেও পুদিনা গাছ সহজেই বেড়ে উঠতে পারে।
ব্যাজল গাছ:
ব্যাজল এক ধরনের লতাগুল্ম। পুদিনা বা ধনেপাতার মতোই সুগন্ধিযুক্ত এই লতাগুল্ম খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য সুখ্যাতি আছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি তাড়াতেও এটি বেশ কার্যকর। কারণ ব্যাজল থেকে বের হওয়া গন্ধ মশা ও মাছি দূরে রাখে। এই গাছও টবে ঘরের বিভিন্ন স্থানে রাখতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, ব্যাজল গাছের চাই প্রচুর সূর্যের আলো, পানি এবং এই পানি বের হওয়ার উত্তম রাস্তা।
তুলসী গাছ:
তুলসির একাধিক স্বাস্থ্য ও আয়ুর্বেদিক গুণের কথা আমরা অনেকেই জানি। তুলসি গাছ পরিবেশকে জীবাণুমুক্ত, বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। তুলসির গন্ধ মশা, মাছি, পোকা-মাকড়কে দূরে রাখে। তাই বাড়িতে টবে হলেও তুলসি গাছ লাগান।
রসুন:
রসুন শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না, একই সঙ্গে দ্রুত ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে। কিন্তু আপনি জানেন কি, বাড়ির বাগানে বা বেলকণিতে টবে দু’চারটা রসুন গাছ লাগালে মশার উপদ্রব থেকেও সহজে মুক্তি পাওয়া যায়! বিশ্বাস না হলে বাড়িতে রসুন গাছ লাগান আর ফল পান হাতেনাতে।
রোজমেরি:
রোজামেরি ফুলের রঙ নীল। এই ফুলও গাঁদা এবং ল্যাভেন্ডারের মতো নিজস্ব উপায়ে মশা দূর করতে সক্ষম। তাই রোজমেরি ফুল গাছও মশা থেকে মুক্তির জন্য বাড়িতে লাগাতে পারেন।
তবে মনে রাখতে হবে, পুরোপুরি মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য ব্যবস্থাও নিতে হবে। এরমধ্যে অন্যতম- ঘরবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। আর গাছে দেওয়া পানি যেন কোথাও না জমে থাকে। কারণ জমে থাকা পানিই মশার বংশ বিস্তারে সবচেয়ে সহায়ক!