অনিরাময়যোগ্য রোগ ‘এস এল ই’ নিয়ে আমরা কতটা সচেতন?
মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে দেহকে সুস্থ রাখে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তথা ইমিউন সিস্টেম।
কিন্তু কখনো কখনো এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুলক্রমে দেহের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তে, দেহের সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে এবং নষ্ট করে ফেলে। এই প্রক্রিয়াকে ‘অটোইমিউন ডিজঅর্ডার’ বলে। সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেম্যাটোসিস (এস এল ই) হল এমনই এক ধরনের ক্রনিক অটোইমিউন ডিজঅর্ডার। সাধারণভাবে এই রোগটি লুপাস নামে পরিচিত।
লুপাসের কারণ
লুপাসের প্রকৃত কারণ এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করতে পারেনি। তাই রোগটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় অযোগ্য। তবে বেশ কিছু বিষয়ের কারণে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১. বাবা-মায়ের এই রোগ থাকলে জিনগত কারণে সন্তানেরও এই রোগ হতে পারে।
২. সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের ব্যবহার, ভাইরাস, মানসিক ও শারীরিক চাপ ও আঘাতের কারণে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন৩. পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। জানা গেছে, প্রতি একজন পুরুষের বিপরীতে নয়জন নারী এই রোগে আক্রান্ত হন। ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী অর্থাৎ নারীর ‘প্রজনন বয়সে’ এই রোগ বেশি দেখা যায়।
লুপাসের ধরন
লুপাসের মূলত দুইটি ধরন রয়েছে-
১. ডিসকয়েড লুপাস- এটি শুধুমাত্র ত্বকে হয়ে থাকে।
২. সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেম্যাটোসিস (এস এল ই)- যা ত্বক, কিডনী, অস্থিসন্ধি, ফুসফুস, হৃৎপিন্ড, রক্ত, মস্তিষ্ক ও নার্ভ সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এস এল ই একটি গ্রীক শব্দ।
লুপাসের লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:
১. অজ্ঞাত কারণে উচ্চমাত্রার জ্বর।
২. মুখে বাটারফ্লাই র্যাশ।
৩. অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
৪. মুখে ঘা হওয়া।
৫. চুল পড়ে যাওয়া।
৬. হাত শক্ত হয়ে যাওয়া।
৭. মাংসেপশীতে ব্যথা।
৮. হাড়ের ব্যথা।
৯. নারীদের মাসিক অনিয়মিত হওয়া।
১০. মানসিক অবষাদ।
রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে সাধারণ জ্বর, র্যাশ, নানা গাঁটে ব্যথা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে লোপ পায় কর্মক্ষমতা। হাঁটা-চলা, কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে খিঁচুনি, কিডনিতে সংক্রমণ হলে পা ফুলে ওঠে, রক্তচাপ বেড়ে যায়।
হৃৎপিণ্ডের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট এবং করোনারি আর্টারি ডিজিজ হয়। ফুসফুসে আক্রমণ হলে বুকে জল জমে যায়। চোখেও থ্রম্বোসিস হয়। রোগের মাত্রা তীব্র হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ইনফ্লামেশন বা জ্বালাপোড়া হয়। রোগের তীব্রতা যখন মারাত্নক পর্যায়ে তখন সময়মত চিকিৎসা না নিলে দেহের যেকোন অঙ্গ বিকল হয়ে ব্যক্তি মারা যেতে পারেন। লুপাস আক্রান্ত রোগীদের ক্যান্সার ঝুঁকিও বেশি।
লুপাসের চিকিৎসা
অনিরাময়যোগ্য রোগ হলো লুপাস। কোন ব্যক্তির শরীরে উপরে বলা লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত লুপাস নিশ্চিত করার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। লুপাস শনাক্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত ও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানবদেহের কোন কোন অঙ্গ লুপাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সেটার উপর ভিত্তি করে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি কিংবা প্রদাহ-বিরোধী পেইনকিলার, স্টেরয়েড গ্রহণের মাধ্যমে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির ব্যথা কমানো সম্ভব। নিয়মিত ডাক্তারের তত্ত্বাবধান ও পরামর্শ মেনে জীবন দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব।