ক্যাফে শুধু কফির জন্য নয়
ব্যাংকক থেকে: প্রায় এক ঘণ্টার উপর বসে আছি স্টারবাকসের একটি ক্যাফেতে। ল্যাপটপে খুটিনাটি ঘাটছি আর কিছু কাজ করছি। প্রায় অর্ধেক লেখা বইটাও পড়ে দেখছিলাম প্রথম থেকে। প্রায় ২ বছরের ব্যবধান ঘোচাতে সময় লাগছে। আজকে অনেকটা সময়ই থাকতে হবে এখানে।
আজকে বিকেলে আসলেও এখানে সোফাতে বসার সুযোগ পেয়ে গিয়েছি। এর আগে গত রোববার এখানে চাইলেও বসতে পারিনি। কারণ প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। পরে সামনে আরেকটি ক্যাফেতে বসতে হয়েছে।
থাই মানুষরা কফি প্রিয়। তবে শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষই সকল ধরনের কফির সঙ্গে বরফ ব্যবহার করেন। আর গ্লাসের ৬০ শতাংশ জায়গাই দখল করে নেয় বরফ। স্কাই ট্রেনের হা-ইয়াক-লাত-ফ্রাও স্টেশনের সঙ্গেই সেন্ট্রাল লাওপ্রাড শপিংমল। একটা বড় ধরনের স্টেডিয়ামের মতো জায়গা নিয়ে এই শপিং মল। কাপ্পা, ম-ব্লা, লিভাইস, জারা, এইচএন্ডএম, মুজি’র মতো ব্র্যান্ডগুলোর শো-রুম যেমন রয়েছে তেমনি লিভারপুল বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল দলের রেপ্লিকার দোকানও এখানে রয়েছে। প্রায় এক ফ্লোর জুড়ে রয়েছে সেরা কিছু খাবারের দোকানও।
বিটিএস স্টেশন থেকে সংযোগ সড়ক রয়েছে এই মার্কেটে প্রবেশের দ্বিতীয় তলায়। আর তার সঙ্গেই লাগোয়া স্টারবাকস ক্যাফে। অনেকেই ক্যাফের বাইরে বসে আছেন আর ব্যবহার করছেন ক্যাফের ওয়াইফাই। মোবাইল নাম্বার আর ইমেইল এড্রেস দিলেই ওয়াইফাই পাওয়া যায় আর গতি বেশ ভাল।
শুধু স্টারবাকস নয়, ক্যাফে আমাজন রয়েছে ঠিক রাস্তার সাথেই। আর ব্ল্যাক ক্যানিয়ন ও জামবাও রয়েছে একই ফ্লোরে। এর যে কোন একটিতে বসে পার করা যায় পুরো একটা বেলা।
ছুটির দিনে সকাল থেকেই ক্যাফেগুলো বেশ ভীড় হয়ে থাকে। বসার জায়গা পাওয়া কঠিন। আর যে যেখানে বসেছে অন্তত এক বেলার আগে আসন ছাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। শীতাতপে উষ্ণ থাকতে অনেকেতো একেবারে বাসা থেকে ছোট কম্বল নিয়ে জেঁকে বসে।
ল্যাপটপ বা ট্যাবের মতো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে বসলে এভাবে এক বেলা সময় কাটানো কঠিন কিছু না যদি চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। এটাই হচ্ছে এখানকার ব্যবস্থা যে প্রতিটি টেবিল বা সোফার সঙ্গে চার্জারের প্লাগ রয়েছে। তাই এক কাপ কফি বা ডিভাইসের চার্জ শেষ হয়ে গেলেও উঠে যেতে হয় না গ্রাহককে।
আরো অনেক মানুষ যেন এখানে বসে ডিভাইস বা বই পড়ে সময় কাটাতে পারে, তার জন্য লম্বা টেবিলের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে লাইব্রেরির মতো। আবার শিক্ষার্থীরা যেন দলবদ্ধভাবে পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য বর্গাকার বা গোলাকার মাঝারি আকৃতির টেবিলও রয়েছে। স্টারবাকস, আমাজন বা কফি ক্লাবের মতো বড় ক্যাফেগুলোতে এই গ্রুপ স্টাডির সুবিধা বিনামূল্যে থাকলেও ছোট ক্যাফেগুলোতে ফ্রি নয়।
যেমন এখানেই আরেকটি ক্যাফে রয়েছে, যার নাম ড্যাম গুড। এখানে টেবিলের উপর লেখা রয়েছে কেউ যদি টিউশনি করাতে চায় তাহলে প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০০ বাথ প্রদান করতে হবে। সেক্ষেত্রে কফি বা অন্য পাণীয় না নিলেও চলবে।
এখানে কি ক্যফেতে বসে সবাই কাজ করছে বা পড়াশোনা করছে? উত্তর না। অনেকেই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে সিনেমা দেখছে বা গেম খেলছে। তবে ক্যাফে আর পাব বা ক্লাবের মধ্যে একটা সরল পার্থক্য রয়েছে। ক্লাব বা পাব যেমন হৈ-চৈ পূর্ণ, ক্যাফে এমনটা নয়। ছোটখাট বৈঠক হচ্ছে বা যে যার মতো করে কাজ করছে, যতোটা সম্ভব নিচু স্বরে।
ব্যংককের সেরা ক্যাফে বলতে অস্ট্রেলিয়ান ‘কফি ক্লাব’কেই বোঝায়। শহরজুড়ে প্রায় ২৬টি ব্রাঞ্চ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। এখানে কফির মূল্য ৯৫ বাথ থেকে শুরু। ব্যাংককে ১০০ মিটারও আপনি অতিক্রম করতে পারবেন না ‘অল কফি’র ক্যাফে ছাড়া। কারণ জাপানি মালিকানাধীন সেভেন ইলেভেন সুপারশপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এই ক্যাফে। এখানে ২৫ বাথ থেকেই কফি পাওয়া যায়। আমেরিকান ‘ম্যাক ক্যাফেতো কফির মূল্য শুরু হয় ৩৯ বাথ থেকে।
এখানে শুধু ক্যাফে নয়, কেএফসি বা ম্যাকডোনাল্ডসের মতো চেইন ফাস্টফুডের দোকানগুলোতেও একটা পানীয় কিনে আপনি অর্ধেক বেলা কাটিয়ে দিতে পারবেন। কেউ জানতে চাইবে না, ‘কখন উঠবেন?’
‘চাও দই’ থাইল্যান্ডের উত্তরের চিয়াং মাই অঞ্চলের ব্র্যান্ড। দেশজুড়ে ৩০০ টিরও বেশি ক্যাফে রয়েছে এই ব্র্যান্ডের। আর কফির মূল্য শুরু ৪৫ বাথ থেকে। ট্র-কফিতে সর্বনিম্ন মূল্য ৭৫ বাথ। এছাড়াও অ-বান-পাইন, টম এন্ড টম্স এখানে বেশ পরিচিত ক্যাফে।
এসব ক্যাফেতে শুধুমাত্র যে বসে সময় কাটানো যায়, তা নয়। দুই একজনকে দেখা যায় দুপুরের সময় বেশ ঝিমোচ্ছে, প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছে বলা যায়। আমিও আজ অনেকটা সময় বসবো। আরো প্রায় ঘণ্টা খানেক। একেবারে রাতের খাবার সময় হলেই বের হবো। আমার অ্যমেরিকানো কিন্তু অনেক আগেই তলানীতে পৌঁছে গিয়েছে। এখন খুব ধীরে ধীরে চুমুক দিচ্ছি।