দুই কোটি রোগীর সুস্থ জীবনের জন্য ফিজিওথেরাপি, বেহাল সরকারি সেবা!



ডা. দলিলুর রহমান
দুই কোটি রোগীর সুস্থ জীবনের জন্য ফিজিওথেরাপি, বেহাল সরকারি সেবা!

দুই কোটি রোগীর সুস্থ জীবনের জন্য ফিজিওথেরাপি, বেহাল সরকারি সেবা!

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (NITOR/RIHD) অপারেশন তো হল, কিন্তু এই রোগীরা কিভাবে সুস্থ হবে, কিভাবে পায়ের শক্তি ফিরে পাবে, কিভাবে দাঁড়াবে, কিভাবে হাঁটবে, কিভাবে পূর্বের কাজে ফিরে যাবে? –জানি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দায়িত্বশীলরা দিবেন না, কারণ ১৭ কোটি মানুষের জন্য একমাত্র এই পঙ্গু পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর থেকে পঙ্গুদের পুনর্বাসনে প্রধান স্বাস্থ্য পেশাজীবী শত শত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তৈরি করলেও ১৯৮৩ সালের পর থেকে আজ অবধি  একজনকেও নিয়োগ দিতে পারে নাই ? কি বিস্ময়! তাই না। 

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ শারীরিক নানা ধরনের ব্যথা, ব্যথাজনিত উপসর্গ, প্রতিবন্ধিতা ও পঙ্গুত্বের শিকার। এদেরকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি অন্যতম চিকিৎসাসেবা। আর এই  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাওয়া তাদের অধিকার।


শারীরিক নানা ব্যথা, দুর্বলতা, প্যারালাইসিসের কারণে মানুষের প্রাত্যহিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। মানুষের কর্মক্ষমতা ও  উৎপাদনশীলতা কমে যায়। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের বাইরে এটা জাতীয় উন্নয়নের জন্যও অন্তরায়। এসব কারণে যিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না, উঠতে পারেন না, বসতে পারেন না; তিনি তো নিজের জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়ান। এ কারণে শারীরিক কষ্ট শেষ পর্যন্ত ভীষণ মানসিক পীড়ার কারণ হয়। এসব সমস্যার জন্য ফিজিওথেরাপিই অন্যতম চিকিৎসা, যা এসব মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে, টিকে থাকতে সহায়তা করে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছরেও দৃশ্যমান হয় নাই কোন সরকারী উদ্যোগ । পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে দেশে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন বলে অনুমেয়।

ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস–প্রতিকার ও প্রতিরোধ– উভয় টিতেই ফিজিওথেরাপি সমান কার্যকরী। হাঁটুসহ বিভিন্ন জয়েন্টের  অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।বিশ্বব্যপি  অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। অস্টিওআর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন বাত, শারিরিক ব্যথা, দুর্বলতা, প্যারালাইসিস, প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা এখন বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

ফিজিওথেরাপি ছাড়া আধুনিক চিকিৎসা অসম্পূর্ণ

ব্যথা, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বার্ধক্যজনিত সমস্যা, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, সেরিব্রাল পালসি, অটিজম, মেরুদণ্ডে আঘাত, সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যানসার, অবেসিটি, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগের কারণে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক বড় একটি অংশ আংশিক বা পুরোপুরি প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে। এই ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান চিকিৎসাব্যবস্থা ফিজিওথেরাপি। সড়ক দুর্ঘটনা, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, বিকলাঙ্গতা, পক্ষাঘাত এবং বড় কোনো অস্ত্রোপচারের পর রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি ভালো ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতের রোগীরা ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি নিয়ে ভালো ফল পান। সচেতনতার অভাবে রোগীরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না, তাঁদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন। সব বয়সের মানুষের রোগ বা সমস্যায় ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দরকার হয় ।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি কেন প্রয়োজন?


বিশ্বজুড়ে পঞ্চাশ কোটিরও অধিক মানুষ  অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত, বাংলাদেশেও এই সমস্যা ঘরে ঘরে  ।  এ রোগ ৬০% ক্ষেত্রে হাঁটুতে হয়ে থাকে । হাড়ের ক্ষয় পেশীর দুর্বলতা অতিরিক্ত মেদ, বয়স্ক জনগোষ্ঠী এ সমস্যার অন্যতম কারণ । এ সমস্যা জটিল হওয়ার আগেই দক্ষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি আপনার সব সমস্যা শুনে কিছূ শারীরিক পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট কিছু ফিজিওথেরাপি ও থেরাপিউটিক  এক্সারসাইজের মাধ্যমে আপনার কষ্ট লাঘব করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দেরী করলে জটিলতা বাড়ে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় , এমনকি অপারেশন করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়না। তাই এ ধরণের সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

লং কোভিডে ফিজিওথেরাপি কেন প্রয়োজন?


আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বাস্থ্য নির্দেশিকায় লং কোভিডের জন্য ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, ইতিবাচক চিন্তা ও পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, কোভিড–পরবর্তী শারীরিক সক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথাজনিত উপসর্গ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের দেশের কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কাটানোর চিকিৎসার জন্য কোনো প্রটোকল এখনো তৈরি হয়নি। যদিও কোভিড পরবর্তী শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথা নিয়ে আমাদের কাছে আসা রোগীদেরকে  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় দ্রুত সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারছি  ।

অর্থপেডিক সমস্যা ও ব্যথার রোগীদের ফিজিওথেরাপি ছাড়া বিকল্প কি? 


নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিসথেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বেশ কাজে দেয়। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অপরিহার্য । এছাড়া মাংসপেশি, জোড় ও হাড়ের সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায়, ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড়-জোড় ঠিকমতো কাজ করে না। এ ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। হাড়ের রোগ অস্টিওপোরোসিস, মাংসপেশির রোগ সারকোপেনিয়াতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিকল্পহীন।

শারীরিক ব্যথা ও সব ধরণের অর্থপেডিক সমস্যাগুলো যথাযথভাবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অর্থোপেডিক কিংবা মাস্কুলোস্কেলিটাল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ।

মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় ফিজিওথেরাপি


স্ট্রোক , স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভ ইনজুরির কারণে সৃষ্ট প্যারালাইসিস ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিকল্পহীন এবং  এ ধরণের সমস্যায় নিউরোলজীকেল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের  ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম । আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনেকে। এ ধরনের রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

ক্যান্সার ও ফিজিওথেরাপি


ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী অসুস্থতার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি। চিকিৎসাধীন অনেক ক্যান্সার রোগী দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ করে। আপনি বা আপনার যত্নশীল কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন, তাহলে ক্যান্সার পুনর্বাসন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব এবং মূল্য আপনার জানা উচিত। ফিজিওথেরাপি ক্যান্সার রোগীকে সামগ্রিক পেইন ম্যানেজমেন্ট করতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী নিষ্ক্রিয়তা কমাতে পারে,  ক্যান্সার এর  ওষুধ এবং কেমোথেরাপির কারনে স্নায়ুর ক্ষতিসমূহ কমিয়ে আনতে পারে এবং এর জন্য রোগীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে ডি-কন্ডিশনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের বিশেষ প্রয়োজনীয়তাগুলি বোঝে এমন একটি উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত  পুনর্বাসন ক্লিনিক খোঁজা এবং রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা দিয়ে অভিজ্ঞ  ফিজিওথেরাপিস্ট খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

শিশুরোগ ও ফিজিওথেরাপি


আমাদের কিছু শিশু জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি, ডাঊন সিন্ড্রোম,  অটিজম ও মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। ফলে তাদের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা বাঁধাগ্রস্ত হয়। আবার দেখা যায়, অনেক শিশুর হাত, পা বেঁকে যায় কিংবা বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। এসব শিশুর ফিজিওথেরাপি অত্যাবশ্যক এবং তা অবশ্যই পেডিয়াট্রিক/শিশু ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

স্পোর্টস ইনজুরি ও ফিজিওথেরাপি


খেলা ও ফিজিওথেরাপি যেন অবিচ্ছেদ্য। একে অন্যের পরিপূরক। খেলাধুলা করলে ইনজুরি হতেই পারে। তাই স্পোর্টস ইঞ্জুরি প্রতিরোধ এবং ইনজুরি গ্রস্ত খেলোয়াড়কে বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে  খেলার উপযোগী করতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে চলেছেন।

হৃদ্‌রোগ, শল্যচিকিৎসার পর ফিজিওথেরাপি

বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। রোগীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এক্ষেত্রে এরবিক এক্সারসাইজ এর প্রেসক্রিপশন মেনে ফিজিওথেরাপি করতে হয় এবং ভুল হলে রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। কার্ডিও-রেসপিরেটরি কিংবা আইসিইউ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা এই থেরাপি দেন-যদিও আমাদের দেশে এ ধরণের বিশেষজ্ঞের অনেক সংকট। 

অন্যান্য শল্য চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগীদের স্বাভাবিক চলাফেরা বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাদেরকে সুস্থ ও  স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি ভালো কাজ দেয়। এর জন্য শল্যচিকিৎসার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

পোড়া রোগীদের ফিজিওথেরাপি

আমাদের দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। পোড়া রোগীর সংখ্যা নেহাত ছোট নয়। পোড়া রোগীর দীর্ঘদিন ধরে মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে থাকে, অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়।  এই অবস্থায় অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণের আশঙ্কায় থাকেন। যদি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয়, তাহলে এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। মাস্কুলোস্কেলিটাল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা এই সেবা দিয়ে থাকেন।

পঙ্গু পুনর্বাসন ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ফিজিওথেরাপি

দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রবীণ, যারা হার-জোর- মাংস পেশীর ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ  বিভিন্ন রকম বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ।  বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হয়। মাংসপেশি ক্ষয় হয়। এ কারণে অনেকে চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এসব মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হাত-পা হারানো ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের প্রয়োজন হয়। কিংবা গাছ কিংবা উপর থেকে পড়ে গিয়ে কিংবা কোন দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি জনিত কারণে অনেকেই পঙ্গুত্বের শিকার হয়। এসব মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক করতে ফিজিওথেরাপি একমাত্র পদ্ধতি। অর্থোপেডিক ও নিউরোলজি ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া বেশি কার্যকর।

ওমেন্স হেলথে ফিজিওথেরাপি –

দেশের প্রায় ৫০% জনগোষ্ঠী নারী। হরমোন, স্ট্রাকচারাল মেকআপ, গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের কারণে সৃষ্ট  নারীদের শরীরে ব্যথা ও নানাবিধ সমস্যায়  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নারীদের  স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন জেনিটাল অঙ্গে ব্যথা ও দুর্বলতা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রসবপূর্ব এবং প্রসবোত্তর পেশীর ব্যথা,  স্তন ক্যান্সারে অস্ত্রোপচারের পরে পুনর্বাসন, লিম্ফেডেমা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার্যকরী। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোরকে শক্তিশালী করলে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় ও পেলভিক ফ্লোর সম্পর্কিত সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে  নারীদের জন্য অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।  বিশেষ করে মেনোপজের সময় স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারেন।

কর্পোরেট হেলথে ফিজিওথেরাপি

দ্য ওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে কর্পোরেট কর্মীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেশীর ব্যধি, বাত, পিঠে ব্যথা এবং জয়েন্ট, পেশী এবং টেন্ডনের নানা সমস্যায় ভুগছে।ফলে তাদের কাজের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, স্ট্যামিনা কমিয়ে দেয়, কাজ করার ঈচ্ছা ও একাগ্রতাকে বাঁধা গ্রস্ত করে এবং তাদের মেজাজের পাশাপাশি কাজের গতিশীলতা এবং কর্ম তৎপরতাকে  প্রভাবিত করে। কাজ সংক্রান্ত অসুস্থতার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ যা দ্বিগুণ প্রভাবিত করে। শুধু যুক্তরাজ্যেই এর জন্য ৯.৫  মিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং প্রায় ৭.৪ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ মোতাবেক এ সমস্যা গুলোর জন্য শুরুতেই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সুবিধা থাকলে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি খরচ কমাতে, কাজের ছুটি কমাতে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে  সাহায্য করে।

বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি অবকাঠামো, বাধা

বিশ্ব উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। ১৯৮০ দশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও গবেষণারও অনেক উন্নতি হয়। বর্তমানে বিশ্বমানের সব বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ডক্টর অফ ফিজিওথেরাপি, পিএইচডি, মাস্টার্স, ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করছে।

স্বাস্থ্য মানেই শুধু চিকিৎসাই নয়, আর চিকিৎসা মানেই শুধু ঔষধ নয়। স্বাস্থ্যের মুল ভিত্তি প্রতিকার (চিকিৎসা)-প্রতিরোধ-পুনর্বাসন-প্রমোশন– ৪টিতেই ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম। ফিজিওথেরাপির এরকম অপরিহার্য গুরুত্ব বিবেচনায় স্বাধীনতা উত্তর আমেরিকান অর্থপেডিক  সার্জন ডাঃ আর জে গাস্টের পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের   মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে পঙ্গু হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে ( RIHD/NITOR) ফিজিওথেরাপি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি কোর্স চালু হয়। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি পেশার সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫১ বছরে ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কোন উদ্যোগ নেই কিন্তু জনমানুষের চিকিৎসার অধিকারের স্বার্থে দেশে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার নিয়ন্ত্রিত প্রসার দরকার।

আমাদের দেশে সনদপ্রাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সরকারি চাকরির সুযোগ নেই। ফলে ফিজিওথেরাপি পেশা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থা দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইতিমধ্যে কাজের সুযোগ বা অনুশীলনের সুযোগ না পেয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। অনেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কারণ, স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশা চর্চার কোনো সনদ দেওয়া হয় না। ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু ফিজিওথেরাপিস্টকে সাময়িক সনদ দিতে শুরু করলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রায় অকার্যকর বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৮। যদিও এই আইনে বলা হয়েছে, ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হলে সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত ফিজিওথেরাপি বিষয়ে চার বছর একাডেমিক শিক্ষা ও ১ বছরের ইন্টার্ন সম্পন্ন করে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে।

ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য দুটি সরকারি হাসপাতালে পদ রয়েছে মাত্র ১৯টি। এগুলোর মধ্যে পঙ্গু হাসপাতালে ১৪টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২টি, জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে ১টি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি। যুগের পর যুগ প্রায় সব পদই শূন্য পড়ে আছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সরকার উক্ত শূন্য পদে অস্থায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। কিন্তু ১২ বছরেও সে নিয়োগ হয়নি। আবার নতুন পদ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) চেষ্টায় ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগ সাড়ে চার শতাধিক পদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করে তা আটকে দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি নামে একটি স্বতন্ত্র কলেজের জন্য মহাখালীতে ৫ দশমিক ২৮ একর জমি দেয় সরকার। ২০০৯ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক এর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন, অবকাঠামো হয়েছে। কিন্তু এই কলেজটি আর হয়নি। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা, হাইকোর্টের নির্দেশ—সব ফাইল চাপা পড়ে আছে। ফিজিওথেরাপি সংশ্লিষ্টদের ২৮ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্তাদের সুদৃষ্টি আজও পায় নাই । আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতার কোটি রোগী।

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশে কয়েক হাজার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বেসরকারি পর্যায়ে খুব সুনামের সাথে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ রোগীদেরকে দেশব্যপি  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করে চলেছেন । প্রতিদিনই ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রগুলোতে রোগী বেড়েই চলেছে। যদিও সরকারী সুযোগ সুবিধার অভাবে দেশে আধুনিক ও যুগোপযোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সুযোগ এখনো অনেক সংকুচিত। ফিজিওথেরাপি বিষয়ে এখনই আমাদের নজর দেওয়া উচিত। তা না হলে একটা বড় জনগোষ্ঠীকে আমরা দীর্ঘ রোগভোগের মধ্যে রেখে তিলে তিলে কষ্ট দেব। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে তাদের অবহেলিত রাখব। অথচ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ ও কর্মক্ষম করে জাতীয়  উন্নয়নে তাদের অবদান রাখার সুযোগ আছে । তাই ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও সেবার আমাদের উদাসীনতা দেখানোর কোন সুযোগ নেই  । 

ডা. দলিলুর রহমান, আইপি প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) 

   

তাপ ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোক এক নয়, জেনে নিন-লক্ষণ এবং করণীয়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তাপ ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোক এক নয়, জেনে নিন-লক্ষণ এবং করণীয়

তাপ ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোক এক নয়, জেনে নিন-লক্ষণ এবং করণীয়

  • Font increase
  • Font Decrease

শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, মধ্যবয়সী-যুবক প্রচন্ড গরমের সকলের নাজেহাল অবস্থা। তার উপর নেই বৃষ্টির ছিটেফোঁটা সম্ভাবনাও। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও কয়েক ডিগ্রি তাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হবে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷

সরকারপক্ষ থেকে রাজধানীতে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে৷ কৃত্রিম ভাবে পানি দিয়ে শহর ভিজিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি দেওয়া বা ছাউনি তৈরি করা৷ এছাড়া গাছ লাগানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ চলছে জোরদমে৷ তবুও গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা কমছে না। সাধারণ কিছু গরম জনিত সমস্যা ছাড়াও হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ৷

গরমে সাধারণত দুইটা সমস্যার বেশি আধিপত্য দেখা যাচ্ছে৷ হিট এক্সহসশন বা তাপক্লান্তি এবং হিটস্ট্রোক৷ হিটস্ট্রোক খুবই গুরুতর একটি সমস্যা, যা মৃত্যু ঘটাতেও সক্ষম৷ হিট এক্সহসশনকে বলা যায় হিটস্ট্রোকের আগের অবস্থা। তবে অনেকেই এই সমস্যা দু'টোকে একই মনে করেন৷ তবে এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে৷  জেনে নেওয়া যাক সেসব পার্থক্য-

হিট এক্সহসশন বা ক্লান্তি: সাধারণত শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই হয়। গরমের মধ্যে বাইরে গেলে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হতে থাকে৷ 

তাপমাত্রা এখন দিন দিন আরও বাড়ার কারণে ঘামও তুলনামূলক বেশি হয়৷ এই কারণে শরীর থেকে পানি আর লবণ বের হয়ে যায়৷ ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। একেই হিট এক্সহসশন বলে৷

হিট এক্সহসশনের উপসর্গ হলো হিট ক্র‍্যাম্পস বা পেশিতে ব্যথা হওয়া।

পানিশূন্যতাও এর একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত ১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৮.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলেই হিটএক্সহসশনের সমস্যা দেখা যায়৷

এছাড়া অনেকের বমি হয়৷ বা বমি বমি ভাব হয়৷ হিট এক্সহসশনের সময় হৃদকার্য দুর্বল হয়ে যায়। তবে হার্টবিট দ্রুত হতে থাকে৷

তাপক্লান্তি হলে করণীয়: তাপক্লান্তিতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে৷ অথবা ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে৷ যেন শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়৷

দ্রুত হালকা ঠান্ডা পানি খাওয়াতে হবে৷। বা জলদি শক্তি আনার জন্য এনার্জি ড্রিংক (খেলোয়াড়দের জন্য ব্যবহৃত) খাওয়াতে হবে।

রোগীকে ঠান্ডা স্থানে স্থানান্তরিত করতে হবে। তাকে রিলাক্স করতে টান করে শুয়িয়ে রাখতে হবে৷

বমির সমস্যা গুরুতর প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। বমিরোধী ঔষধ সেবন করাতে হবে।

হিটস্ট্রোক: যখন অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকে তখন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে৷ সংকুচিত হওয়ার কারণে লোমকূপ ঘাম বের হতে পারেনা৷ এতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ব্যর্থ হয়৷

সে কারণে তাপ শরীরের ভেতরেই থেকে যায় আর শরীর শীতল হতে না পেরে স্ট্রোক হয়৷

সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বেড়ে যায়৷ হৃদপিণ্ড খুব দ্রুত এবং শক্তিশালীভাবে কম্পিত হতে থাকে৷

হিটস্ট্রোক হলে মানুষ সাধারণত অজ্ঞান হয়ে যায়৷ অথবা সজ্ঞান হারিয়ে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। তাদের চোখ, ত্বক পরিবর্তন হয়ে যায়।

ত্বকে লালচে এবং শুষ্ক হয়ে যায়৷ অনেকের ক্ষেত্রে খিচুনি উঠতে দেখা যায়। শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে যায়। রোগীর প্রশ্বাস গ্রহণে অসুবিধা হতে দেখা যায়৷

হিটস্ট্রোক হলে করণীয়: রোগীকে দ্রুত ঠান্ডা এবং ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যেতে হবে৷

রোগীর গায়ের অতিরিক্ত কাপড় এবং জুতা খুলে দিতে হবে৷ যেন বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে।

শরীর এবং মাথায় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ঢালতে হবে। রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাওয়াতেও হবে। কোনোভাবেই ঠান্ডা পানি খাওয়াবেন না। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ আরও বেগতিক হবে৷

শরীরে ঠান্ডা বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ অতি দ্রুত জরুরি চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ জরুরি প্রয়োজন ৯৯৯ নম্বরে কল করতে হবে।

;

কাঠফাটা রোদে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে? ঠান্ডা দুধ লাগিয়ে পাবেন সমাধান



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত জনজীবন। প্রচণ্ড রোদে ত্বক পুড়ে গেলে ত্বকের লাবণ্য কমে যায়। এর প্রধান কারণ হলো সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। এদিকে রোদে পোড়া দাগ বা সানবার্ন নিয়ে অনেকের চিন্তার শেষ নেই। সানবার্ন নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। এখান থেকে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় সানবার্নের জেরে চামড়া উঠতে শুরু করে। ত্বকের ওই অংশ লাল হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে সানবার্নের সমস্যায় ভুগলে এখান থেকে বার্ধক্যের লক্ষণও জোরালও হয়। সানবার্ন থেকে মুক্তি পেতে গেলে সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে বেরোনো যাবে না। আর যদি সানবার্নের মুখোমুখি হন, সেক্ষেত্রে ঠান্ডা দুধকে কাজে লাগান।

ঠান্ডা দুধ সানবার্নের সমস্যা দূর করে

১) প্রখর রোদ সানবার্নের জন্য দায়ী। ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি ত্বকের উপর প্রদাহ তৈরি করে। সানবার্নের উপর ঠান্ডা দুধ লাগালে নিমেষের মধ্যে কমে যায় ত্বকের জ্বালাভাব ও লালচে ভাব।

২) দুধের মধ্যে প্রোটিন ও লিপিড রয়েছে, যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। সানবার্নের উপর ঠান্ডা দুধ লাগালে ত্বকের শুষ্কভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

৩) দুধের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড রয়েছে, যা মাইল্ড এক্সফোলিয়েটর। এটি ত্বক থেকে মৃত কোষ পরিষ্কার করে এবং ক্ষত দ্রুত নিরাময় করে। সানবার্ন দূর করে ঠান্ডা দুধই সেরা।

সানবার্নের উপর যেভাবে ঠান্ডা দুধ প্রয়োগ করবেন -

১) ফ্রিজারে দুধ রেখে বরফ বানিয়ে নিন। রোদে বেরিয়ে ত্বক পুড়ে গেলে, বাড়ি ফিরেই সানবার্নের উপর ওই দুধের বরফ ঘষে নিন।

২) এছাড়া ফ্রিজে থাকা ঠান্ডা দুধে তুলার বল ডুবিয়ে নিন। এবার ওই তুলার বল সানবার্নের উপর কয়েক মিনিট রেখে দিন। আলতো হাতে বুলিয়েও নিতে পারেন।

৩) ঠান্ডা দুধ না থাকলে ঠান্ডা টক দইও মাখতে পারেন সানবার্নের উপর। দুধ ও দই দুটোই সানবার্নের চিকিৎসায় সেরা ফল। ত্বক থেকে ট্যান তুলতেও এই উপায় কাজে লাগাতে পারেন।

তথ্যসূত্র- টিভি৯ বাংলা

;

তাপপ্রবাহের কারণে হওয়া সাধারণ কিছু সমস্যা



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে দেশ। আমাদের দেশে মূলত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকে। তবে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর কারণে গত কয়েক বছরে আবহাওয়ায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন গরমে তাপমাত্রা বেশ বাড়তি থাকে। তাই গরমে এখন অসুস্থ হওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে। গরমের কারণে হওয়া সমস্যাগুলোকে অনেকেই গুরুত্ব দেয় না। তারা মনে করেন ঠান্ডা পানি পান করলেই সমাধান হবে। তবে গরমে অসুস্থ হওয়াকে অবহেলা করলে মৃত্যু ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখার পরই সাবধান হতে হবে।

চিকিৎসক থমাস ওয়াটার্স এই নিয়ে সাবধান হওয়ার জন্য জোর দিয়েছেন। গরমে যে সব সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায়, সেগুলো হলো-

১। ফুসকুঁড়ি বা হিট র‍্যাশ

গরমে ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাপ অতিরিক্ত বেশি হওয়ার কারণে গরমে ঘাম এবং ঘাম জমেও বেশি। কনুই, হাঁটুর পেছনের অংশ, ঘাড় ইত্যাদি স্থানে ঘাম জমে লাল ছোট ছোট ঘামাচি ও ফুসকুঁড়ি দেখা যায়।


২। হিট ক্র্যাম্পস

গরম আবহাওয়ায় অনেকেই ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন। গরমের মধ্যে পেশিতে চাপ পড়ার কারণে অনেক সময় ব্যথা হতে পারে। একে হিট ক্র্যাম্প হতে পারে। কারণ এমনিতেই গরমে ঘাম বেশি হয়। এরপর যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন তাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ এবং তরল বের হয়ে যায়।

৩। ক্লান্তি বা হিট এক্সহসশন

প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখার কিছু কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে। গরমের সময় শরীরের ভেতর থেকে ঘাম বের করে দেয়। এতে অভ্যন্তরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে শরীর ঘাম বের করা বন্ধ করে দেয়। কারণ শরীররের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়। এই কারণে শরীর ঠান্ডা হতে পারেনা।


৪। হিট স্ট্রোক

অতিরিক্ত গরমে শরীরে তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায়। হঠাৎ এই পরিবর্তন শরীর নিতে পারে না। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা হলেই হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোক অনেক গুরুতর হতে পারে। এমনকি এই কারণে মৃত্যুও হতে পারে।

দিন দিন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিহীন একটানা খা খা রোদের কারণে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই জরুরি কাজ ছাড়া সকালে ১ টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।

তথ্যসূত্রঃ ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

;

জেনে নিন ওটস খাওয়ার অপকারিতা



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুভ সূচনায় সুন্দর দিন। সকাল সক্রিয়তার সাথে শুরু করতে পারলে পুরোদিন অনেক ভালো কাটে।  তাই সকালের খাবার হতে হয় পুষ্টিসম্পন্ন। ব্রেকফাস্টে উন্নত পুষ্টির খাবার খেলে পুরোদিন শরীরে তা সরবরাহ হয়।  সকালে অনেকেই ভারী খাবার খেতে পারেন না। তাই হালকা কিন্তু পুষ্টি সম্পন্ন খাবার খেতে পছন্দ করেন, যা পেটও ভরাবে। 

সকালের নাস্তায় অনেকে ওটস খেতে পছন্দ করেন। ওটস একটি পুষ্টিকর খাবার, উচ্চ ফাইবার এবং প্রোটিন, এবং অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে, যেমন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি। বিশ্বাস করা হয়, ওটস খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। তবে এইটা কতটা সত্য, তা নিয়ে এখন সন্দীহান বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন চিকিৎসক স্টিভেন গুন্ড্রি ওটস বা ওট থেকে বানানো খাবার খাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।  

তিনি জানান, আমেরিকায় যেসব ওটস জাতীয় খাবারে গ্লাইফোসেটের উপস্থিতি রয়েছে,এই ব্যাপারটি তিনি বেশ জোর দিয়ে বলেন। তিনি উল্লেখ করেন গ্লাইফোসেট একটি ভেষজনাশক। স্টিফেন তার বর্ণনায় একে ‘সবচেয়ে  বিষাক্ত’ বলে অভিহীত করেন।

ওটস, ওটস দুধ এবং এই জাতীয় পণ্য প্রচুর পরিমাণে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে মেরে ফেলে। এছাড়া কিছু কোম্পানির ওটসে এক প্রকার  নিষিদ্ধ হার্বিসাইড সনাক্ত করা হয়েছে। এই হারবিসাইড ক্যান্সার সহ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে।

প্রতিদিন ওটস খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও ব্যথা হয়। ওটস খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস জমিতে থাকে। যাদের বেশি পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই তারা হঠাৎ ওটস খাওয়া শুরু করলে সমস্যা দেখা যায়। তাদের পেট ফোলা ও ফাঁপা ছাড়াও অস্বস্তির সমস্যা দেখা যায়।

ওটস খাওয়া অন্ত্রের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এন্টারোকোলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ, ডাইভারটিকুলাইটিস ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংবেদনশীল খাবার খেতে হয়।  তাই এই ধরনের রোগীদের ওটস এড়াতে হবে।   

এছাড়া ওটসে বেশি পরিমাণে শ্বেতসার থাকে। তাই ডায়বেটিসের রোগীদের ওটস খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।  কারণ তাদের নিয়ন্ত্রিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া নিশ্চিত করতে হয়।

পাশাপাশি যারা রক্তশূণ্যতায় ভুগছেন তাদেরও ওটস এড়িয়ে চলা উচিত। অন্ত্রের ট্র্যাক্ট থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় আয়রন সম্পূর্ণভাবে শোষিত হতে পারে না ওটসের কারণে। 

তথ্যসূত্রঃ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস+এইচএসএন স্টোর

;