মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ হলি হেলথ্ ডেন্টাল সেন্টার

  • ডা. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন শিখন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

 

দাঁত ব্রাশ করার সময় বা কুলি করার সময় অনেকেরই মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে!  এমন সমস্যাকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী মাড়ির এ রোগকে বিশেষজ্ঞরা নীরব ঘাতক বলেই আখ্যায়িত করেন। আবার কেবল যে দাঁত ও মাড়ির রোগই এমন হয়, তা-ও নয়। এটি হতে পারে অন্য কোনো জটিল রোগের লক্ষণ। তাই এ সমস্যাকে কিছুতেই অবহেলা করা চলবে না।

বিজ্ঞাপন

দাঁত ও মাড়ি থেকে রক্তপাতের কারণ

(১) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়মিত দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার না করার কারণে মুখনিঃসৃত লালার বিশেষ উপাদান, মুখের মধ্যের জীবাণু ও খাদ্যকণা মিলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে ডেন্টাল প্লাক নামের সাদা আঠালো পদার্থ তৈরি করে। কিছুদিনের মধ্যে প্লাক শক্ত পাথরে পরিবর্তিত হয়ে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। প্রাথমিক পর্যায়ে মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায়। পরবর্তী সময়ে ব্রাশ করার সময়, শক্ত কিছু খেলে বা আলতো চাপে রক্ত পড়ে।

(২) অনেক সময় সুস্থ মাড়িতেও ভুল পদ্ধতিতে ডেন্টাল ফ্লস বা টুথব্রাশের আঘাতে রক্তপাত হতে পারে।

(৩) বিশেষ কিছু ভিটামিন বা মিনারেল যেমন ভিটামিন সি, ডি, কে, আয়রনের অভাবে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

(৪) অসামঞ্জস্য কৃত্রিম দাঁত, অর্থোডন্টিক তার বা

অন্য কিছুতে আঘাতের কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে  পারে।

(৫) রক্তের নানা রোগ যেমন হিমোফিলিয়া থেকে

লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানের তারতম্য, ডেঙ্গু, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এইডস প্রভৃতি রোগের প্রাথমিক উপসর্গও হতে পারে মাড়ি থেকে রক্তপাত।

(৬) রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের কিছু ওষুধ সেবনেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

(৭) গর্ভাবস্থায় বা বিশেষ সময়ে হরমোনের তারতম্যের কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

(৮) অতিরিক্ত মানসিকচাপ,দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ধূমপানসহ নানা  কারণে  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও এমনটা হতে পারে। কারণ যা-ই হোক, সেটা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। কারণ মাড়ির রোগ শুধু দাঁতকে নষ্ট করে তা নয়, এটি হতে পারে অন্য জটিলতারও উপসর্গ।

প্রতিকারের উপায়:

(১) প্রতিদিন সঠিক  নিয়মে সকালে  নাশতা করার পর ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে  দাঁত ব্রাশ করতে হবে(১.৫-২ মিনিট) ।

(২) ভালো মানের টুথপেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।

দীর্ঘদিন এক টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।

(৩) ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে দুই দাঁতের মাঝখানে লেগে থাকা খাদ্যকণা দূরীভূত করতে হবে।

(৪) নিয়মিত ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

যেমন- আমলকী, কমলালেবু, বাতাবিলেবু, আমড়া ইত্যাদি।

(৫) কুসুম কুসুম গরম পানিতে লবন মিশিয়ে কুলকুচি করতে হবে।

(৬) সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন তাজা ফরমালিনমুক্ত ফল,শাকসবজি,দুধ, টক দই, ডিম, ছােট মাছ, সামুদ্রিক মাছ দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ রাখে।

(৭) ছয় মাস পরপর BMDC (Bangladesh Medical & Dental Council)  রেজিস্টার্ড  BDS  ডিগ্রিধারী ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন এবং সঠিক নিয়ম মেনে

চলুন। খুব সহজেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।

(৮) প্রতিবছর  অন্তত একবার  BMDC(Bangladesh Medical & Dental Council)  রেজিস্টার্ড    BDS ডিগ্রিধারী ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হয়ে দাঁত ও মাড়ির স্কেলিং ও পলিশিংয়ের মাধ্যমে মাড়ি থেকে ক্যালকুলাস সরিয়ে ফেলুন।