নারীদের থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিকতায় যেসব সমস্যা হয়
থাইরয়েড হলো একটি ছোট প্রজাপতি আকারের গ্রন্থি। ঘাড়ের সামনে গলার ‘অ্যাডম‘স আপেল’-এর পাশে এর অবস্থান। শরীরের অ্যান্ডোক্রাইন গ্রন্থির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এটি। হরমোনের সংশ্লেষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এই অঙ্গ। বিপাক নিয়ন্ত্রণ, শক্তি উৎপাদন এবং শারীরিক বৃদ্ধিসহ অনেক কাজে ভূমিকা রাখে থাইরয়েড। এর ফলে এই গ্রন্থি আমাদের হৃদস্পন্দন, পরিপাকতন্ত্র, ওজন এবং মেজাজকে প্রভাবিত করতে পারে। থাইরয়েড দুটি প্রধান হরমোন তৈরি করে। থাইরক্সিন (টি৪) এবং ট্রায়োডোথাইরোনিন (টি৩)। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি এবং হাইপোথ্যালামাসের নিয়ন্ত্রণে থাইরয়েড এদের উৎপন্ন করে। সেখান থেকেই নিঃসৃত হয় এবং সমগ্র শরীরের সুস্থতা নিয়ন্ত্রণ করে।
অত্যধিক সক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোনগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের বিপাক দ্রুত হয়। হাইপার-থাইরয়েডের কারণে ওজন হ্রাস, হাত কাঁপানো এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন সমস্যা দেখা যায়। এইজন্য পরবর্তীতে হার্টের সমস্যা এবং হাড় ভঙ্গুর হওয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
অপরদিকে হাইপো-থাইরয়েডিজম সমস্যা হলো পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে সক্ষম না হওয়া। এর ফলে ওজন বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ধীর হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা হয়। হাইপো-থাইরয়েডিজমের চিকিৎসা করা না গেলে গলগন্ড এবং হৃদরোগও হতে পারে।
থাইরয়েড জনিত সমস্যায় মাসিক স্বাস্থ্য এবং সন্তানধারণ ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে। সুস্থ থাকতে থাইরয়েড পরীক্ষা এবং চিকিৎসা করতে হবে। তাই হাইপার-থাইরয়েডিজম এবং হাইপো-থাইরয়েডিজম উভয়ই ক্ষতিকর অবস্থা।
অতিরিক্ত থাইরয়েড উৎপাদনের কারণে ঋতুস্রাব অনিয়মিত এবং অল্প হয়। এই সমস্যা প্রজননের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিজম ‘সেক্স হরমোন বাইন্ডিং গ্লোবুলিন’(এসএইচবিজি) এর মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। এতে মাসিক, ডিম্বস্ফোটন এবং প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়।
অন্যদিকে, হাইপো-থাইরয়েডিজম থাইরয়েডের কাজের গতি কমিয়ে দেয়। এই কারণে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে। ভারী পিরিয়ড বা হালকা পিরিয়ড এমনকি পিরিয়ড একেবারেই না হওয়ার (অ্যামেনোরিয়া) সমস্যাও অযাচিত নয়। বন্ধ্যাত্ব এবং সাবক্লিনিক্যালের উপর হাইপোথাইরয়েডিজমের সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য প্রজনন ব্যাধিও দেখা যেতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজম এবং থাইরোটক্সিকোসিস গর্ভাবস্থায় নানা জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে। যেমন গর্ভপাত, প্লাসেন্টার সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, অকাল জন্ম এবং শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি সীমিত হওয়া।
তথ্যসূত্র: নিউজ১৮