গ্যাসের রান্না হতে পারে হাঁপানি বাড়ার কারণ

  • লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্যাসের চুলায় রান্না / ছবি: সংগৃহীত

গ্যাসের চুলায় রান্না / ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা ব্যবহার করা সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজলভ্য উপায়। আগে আমাদের দেশে মাটির চুলা, বন্ধুচুলা, স্টোভ, কাঠের ভুসির চুলা ইত্যাদি ব্যবহার করে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে নিত্যদিনের খাবার রান্না হতো। সময়ের সাথে সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন গ্রামের চুলা ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়। তবে এই গ্যাসের চুলাই হতে পারে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ!

দিন দিন বায়ু দূষণের সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। সাধারণত ধারণা করা হয় কল-কারখানা আর যানবাহনের কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের কারণ। তবে রান্নার সময়ও বায়ুদূষণ হয় এই কথাটি অনেকের কাছেই নতুন লাগতে পারে। তবে রান্নার মাধ্যমে আমাদের ঘরের মধ্যেও বায়ুদূষণ হয়ে তা আমাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের হাঁপানিজনিত রোগ হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।  

বিজ্ঞাপন
হাঁপানি / ছবি: সংগৃহীত

হাঁপানি এমন একটি রোগ যা সরাসরি শ্বাসনালীতে প্রভাব ফেলে। এতে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায়। তার ফলে শ্বাসক্রিয়ার সময় বায়ু প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। যদিও ইনহেলার ব্যবহার করে এবং অ্যাজমা প্রতিরোধ পরিকল্পনা করে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার একটি জরিপে দেখা যায়, দূষিত বায়ুর কারণে প্রায় শতকরা ১২ ভাগ শিশুরা হাঁপানিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানে শতকরা ৩৮ ভাগ মানুষই রান্নার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। সেসব অঞ্চলে রান্নায় গ্যাসের চুলা ব্যবহারকারীদের ঘরের বাতাসে কার্বন মনো অক্সাইড পাওয়া গেছ, যা অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। এছাড়া পিএম২.৫, বেনজিন ফরমালডিহাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড পাওয়া গেছে। এই উপাদান সবগুলোই মানবদেহ এবং শ্বসনালীর জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সূত্রপাত হয়।      

বর্তমানে রান্নার জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস অনেক জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক চুলার চেয়ে গ্যাসের চুলায় রান্নার সময় ৩ গুণ বেশি নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। তাই এইসব কুকার রান্না করা শিশু এবং পরিবারের জন্য তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের কারণে ইলেকট্রিক চুলা এবং কুকারের খরচ বহন করা কষ্ট সাপেক্ষ। অথচ তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিত এলাকাতেই বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট রোগের আধিক্য দেখা যায়।

ইলেকট্রিক চুলা / ছবি: সংগৃহীত

রান্নার সময় সৃষ্টি হওয়া ক্ষতিকর নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস স্বাদহীন, বর্ণহীন, অদৃশ্য। তাই এর উপস্থিতি এবং পরিমাণ নির্ণয় করা কঠিন। তাই পরিবারের সকলকে সুরক্ষিত রাখতে কী কী করতে পারেন, জেনে নিন:

১. গ্যাসের চুলা ব্যবহার সীমিত করা সবচেয়ে প্রভাবশালী পদক্ষেপ হতে পারে।

২. রান্নাঘরে চিমনি অথবা এক্সহস্ট ফ্যান  লাগাতে পারেন।

৩. প্রাকৃতিকভাবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারেন। এইজন্য রান্নাঘরে জানালা বা ছোট দরজা থাকলে তা খোলা রাখতে পারেন। সম্ভব হলে একটু খোলামেলা রান্নাঘর তৈরি করা ভালো।

৪. হিটার ও ইলেকট্রনিক কুকারে রান্না করলে বায়ু দূষণের সম্ভাবনা অনেকাংশই কমে যায়।    

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস