ওজন কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর
ওজন কমানোর চিন্তা মাথায় এলে প্রথমেই মাথায় চিন্তা আসে খাবার খাওয়া কমানোর। যদিও ওজন কমানো খুব সহজ কাজ নয়, এবং ব্যায়ামসহ কিছু সামগ্রিক কাজের সমন্বয়েই ওজন কমানো সম্ভব। তবুও এখনো অনেকের ধারণা, একমাত্র বেশি খাবার খাওয়ার কারণেই ওজন বাড়ে আর খাবার খাওয়া কমালেই ওজন কমানো সম্ভব।
তবে হতে পারে, খাওয়া কমিয়ে দিলে হয়তো ওজন বাড়ার ক্ষেত্রে তা উপকারী প্রভাব ফেলার পরিবর্তে বরং ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা বুঝে খাওয়া বন্ধ করে দিলে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনের চাপ বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাবও দেখা দিতে পারে।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকার একটি বিশেষ ভূমিকা থাকে। ওজন কমাতে চাইলে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এই কথা যেমন সত্য, তেমন তা কি ওজন কমানোতে সাহায্য করছে কিনা তাও বিবেচনায় রাখতে হবে এই কথাও সত্য।
ভারতীয় চিকিৎসক ঋতুজা উগালমুগল বলেন,‘ যখন আমরা খাবার খাওয়া কমিয়ে দেই তখন শরীরে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা অনুভূত হয়। হঠাৎ করে শরীরে খাবার প্রবেশের পরিমাণ কমে গেলে বেঁচে থাকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াস্বরূপ শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে। যেমন, সংরক্ষিত হিসেবে থাকা শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করে এবং চর্বি বিপাক ধীর গতিতে চলতে থাকে। এরফলে উল্টো আরও শরীরে চর্বি জমে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ঘটনাও দেখা যায়। এরকম হলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া বিপরীত ক্রিয়া করে ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে পরে।’
ডা. ঋতুজা খাবার খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কিভাবে আরও ওজন বাড়তে পারে, সেই ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করেছেন-
পেশী ক্ষয়: খাবার খাওয়া কম হলে শরীরে ক্যালরি ইনটেইক কমে। এই ক্যালরি ইনটেইকের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে পেশী ক্ষয়ও হতে পারে। কারণ এরকম পরিস্থিতিতে চর্বির টিস্যু ক্ষয় না হয়ে পেশির টিস্যু আগে ক্ষয় হতে শুরু করে। এরফলে বিপাকেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। হজমের কমতি হওয়া মানে আপনার শরীরের ক্যালরি ক্ষয় কম হচ্ছে। এরকম হলে ওজন কমার বদলে আরও বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব: কড়াকড়িভাবে ডায়েট শুরু করলে প্রায়শই সারাদিনের গ্রহণকৃত খাদ্য অনেকটা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। এর একটি বড় সমস্যা হরমোনের অসামঞ্জস্যতা।
হরমোন: ঘেরলিন এবং লেপটিন এই দুটি হরমোন ক্ষুধার সাথে সম্পৃক্ত। মূলত ক্ষুধা ও তৃপ্তি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নামে এগুলো পরিচিত। ডায়েটে কম খাওয়ার কারণে পুষ্টির ঘাটতি হলে এসব হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও দেখা যেতে পারে। এই হরমোনগুলোর ভারসাম্যহীনতা ক্ষুধার অনুভূতি বাড়াতে পারে এবং অতিরিক্ত খাওয়া বা তৃষ্ণার কারণ হতে পারে। এর ফলে ওজন বরং আরও বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
কর্টিসল উৎপাদন: অল্প সময়ে ওজন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রায়ই কঠোর ডায়েটিং করার কারণে অনেক সময় মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। এই চাপের ফলে শরীরে কর্টিসলের উৎপাদন বেড়ে যায়। এই হরমোন একরকম ভিসারাল ফ্যাট, যা ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দায়ী; বিশেষ করে পেটের আশেপাশের অংশে।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস