আয়ু বাড়াবে যেসব অভ্যাস
সুস্বাস্থ্যের চেয়ে মূল্যবান কোনো সম্পদ হয় না। সকলেই চায় দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে। তবে সেই পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তি নিজেই। আমাদের নিত্যদিনের সকল অভ্যাসের উপর অনেকাংশ নির্ভর করে আমাদের স্বাস্থ্য এবং আয়ু। জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে চাইলে সবচেয়ে প্রথমে জীবনধারায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এই অভ্যাসগুলো শুধুমাত্র প্রচলিত বা বড়দের উপদেশ নয়; বিশেষজ্ঞদের মতে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিতও।
১. নেশাজাত দ্রব্য ত্যাগ: শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেশিদিন ভালো রাখতে যেমন তাকে ভালো জিনিসের জোগান দেওয়া প্রয়োজন; একই ভাবে শরীরের অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে সেসব জিনিস ত্যাগ করাও প্রয়োজন। যেকোনো নেশাজাত দ্রব্য সেবনের অভ্যাস থেকে থাকলে তা দ্রুত ত্যাগ করা প্রয়োজন। যেমন অ্যালকোহল বা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে হৃদরোগ, ফুসফুসে ক্ষত, যকৃতে সংক্রমণ, ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বেশিদিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে চাইলে এইসব অভ্যাস ছাড়তে হবে।
২. কায়িক পরিশ্রম: শারীরিক পরিশ্রম সুস্থ থাকার এবং আয়ু বাড়ানোর পূর্বশর্ত। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী শারীরিকভাবে অধিক সচল মানুষ অন্যদের তুলনায় বেশিদিন বেঁচে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্বাভাবিকভাবে প্রতি সপ্তাহে এক বা একাধিকবার মিলিয়ে অন্তত ১৫০ মিনিট বাইরের খোলা বাতাসে কায়িক পরিশ্রম করার পরামর্শ দেয়। অথবা ৭৫ মিনিট শরীরকে সচল রাখার কার্যক্রম; যেমন- হাঁটা, সাঁতার বা অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রম করা প্রয়োজন। এই অভ্যাস কেবল সুস্থ থাকতেই সাহায্য করে না; বরং হৃদরোগ, ডায়বেটিস সহ বিভিন্ন ক্রোনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।
৩. মানসিক সুস্থতা: শরীরের মতো মস্তিষ্কও সজীব রাখলে তা মানুষকে দীর্ঘজীবী করতে প্রভাব ফেলে। বয়স বাড়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ককে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব। যেমন ধাঁধা ও পাজল সমাধান,নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন বা এমন কোনো কাজ যা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে সমাধান করা যায়। এসব অভ্যাসের মাধ্যমে মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও বাড়ে।
এছাড়াও, মানসিক চাপমুক্ত থাকাও অনেক জরুরি। হাইপার টেনশন ও অত্যধিক মানসিক চাপ শুধু দ্রুত বয়সের ছাপই ফেলে না, বরং নানারকম প্রাণনাশী রোগ সৃষ্টি এবং তাদের প্রভাব বাড়াতে পারে। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে যোগাসন, শ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যানের মতো পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।
৪. ঘুম: ঘুম হলো একমাত্র সময় যখন আমাদের শরীর বিশ্রাম পায়। একটানা পরিশ্রম করার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পরে। সিডিসি অনুসারে তাই সারাদিন শেষে শরীরকে আবার চাঙ্গা করতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। এই সময় শারীরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষতিপূরণ ঘটতে থাকে। এই অভ্যাসের গড়তে প্রতিদিন একই সময় বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন। সন্ধ্যার পর ক্যাফেইনজাতীয় খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা এবং বিভিন্ন ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। রোজ পর্যাপ্ত ঘুম হলে হৃদরোগ, ডায়বেটিস, ওজনবৃদ্ধির মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়।
৫. খাদ্যাভাস: আমরা যেসব খাবার খাই সেসবের প্রভাব সরাসরি আমাদের স্বাস্থ্যে পরে। তাই যেকোনো বয়সের মানুষকেই সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস অতি দ্রুত গড়ে তুলতে হবে। বেশি করে পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর ও যতটা সম্ভব বেশি করে শস্যজাতীয় খাবার খেতে হবে। হজম, সঞ্চালন, তাপমাত্রা রক্ষার মতো নানারকম শারীরিক কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখতে দৈনিক গড়ে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। নিজের ওজন বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। তাজা ও সবুজ ফলমূল, শাক-সবজি, চর্বিহীন আমিষ, শস্যজাতীয় খাবার শরীরের জন্য সর্বোত্তম কাজ করে।
তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল রিসার্চ.কম