পানি পান করুন, সুস্থ থাকুন
নিজের সুস্বাস্থ্যের প্রতি সবচেয়ে বেশী খেয়াল রাখা প্রয়োজন এই রমজান মাসে। কারণ শারীরিক সুস্থতা ব্যতীত রোজা রাখা বেশ কষ্টসাধ্য তো বটেই অনেকক্ষেত্রে অসম্ভবও। দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, শারীরিক সুস্থতার মূলমন্ত্রটি খুব ছোট ও সাধারণ। আর এই মূলমন্ত্রটি হচ্ছে- পানি।
বছর জুড়ে তো বটেই, রমজানের এই এক মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা খুবই জরুরি। শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে তৈরি হতে পারে নানান ধরণের শারীরিক সমস্যা ও জটিলতা। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেই পানি পান সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নয়। ইফতারি ও সেহরির সময়ে পানি পান করাই অনেকের কাছে যথেষ্ট বলে মনে হয়। এতে করে শরীরে দেখা দেয় পানি শূন্যতা।
কেনো পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন?
মানবদেহের ৬০-৭০ শতাংশ হলো পানি। যার ফলে শরীরের অভ্যন্তরের প্রতিটি ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা আবশ্যিক। শরীরে জন্য প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি দেখা দিলে কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য, মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তিভাব সহ নানান ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। গুরুত্বর ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।
এই বছরের পুরো রমজান মাস জুড়ে থাকবে গরমের তান্ডব। পাশাপাশি দিনের সময়কাল বেশী হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষের জন্যে রোজা থাকাটা কষ্টকর হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে ইফতারির পর থেকে সেহরি আগ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এতে করে রোজা রাখতে তুলনামূলকভাবে কষ্ট কম হবে এবং শরীরও সুস্থ থাকবে।
পানি ব্যতীত অন্যান্য পানীয় পান করলে সমস্যা আছে কী?
একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে যে, পানির কোন বিকল্প নেই। পানির পাশাপাশি যেকোন ধরণের পানীয় কিংবা ফলের শরবত পান করা যেতে পারে। তবে পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে না একেবারেই। তার মূল কারণ হলো, পানি ছাড়া অন্যান্য সকল পানীয়তে বাড়তি চিনি থাকে। যা যোগ করে বাড়তি ক্যালরি। এছাড়াও বেশী ফলের শরবত পানের ফলে পেটে গ্যাস হওয়া, পেটব্যথা হওয়া, খাদ্য পরিপাকে সমস্যা সহ দেখা দিতে পারে নানান ধরণের শারীরিক অসস্থি ও সমস্যা। যে কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণে ফলের শরবত সহ অন্যান্য পানীয় পান করতে হবে।
কীভাবে পিপাসা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে?
রোজার মধ্যে পিপাসাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে, প্রতিদিনের খাদ্যভাসের উপর কিছুটা সচেতন হতে হবে। এই সচেতনতাই কমিয়ে আনবে পিপাসাবোধ।
১/ ইফতারির পর সেহরির আগ পর্যন্ত অন্তত পক্ষে আট গ্লাস পানি পান করে হবে। যদি শরীরচর্চা বা ভারী কাজ করা হয় তবে পরিমানটি আরো কিছুটা বাড়িয়ে নিতে হবে।
২/ ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার পিপাসা তৈরি ও বৃদ্ধি করে থাকে। তাই চেষ্টা করতে হবে রান্নায় যথাসম্ভব ঝাল ও মশলা কম ব্যবহার করতে।
৩/ সালাদ কিংবা অন্যান্য রান্নাতে লবণের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
৪/ তাজা সবজী ও ফল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রাকৃতিক এই সকল খাদ্য উপাদানে প্রচুর পরিমাণ পানি ও আঁশ থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী।
৫/ একসাথে অনেক বেশি পরিমাণে পানি পান না করে কিছুক্ষণ পর পর স্বল্প পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৬/ সকল ধরণের ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। কারণ ক্যাফেইন হলো মূত্রবর্ধক উপাদান। যা দ্রুত শরীর থেকে পানি বের করে দিয়ে পিপাসা তৈরি করে। যেকোন ধরণের কোমল পানীয়, কড়া লিকারের চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করার চেষ্টা করতে হবে।