নিয়মিত গোসল করছেন তো?
বেশিরভাগ মানুষের ভেতর অদ্ভুত ধরনের একটি বদঅভ্যাসটি দেখা যায় অহরহ। অদ্ভুত সেই বদঅভ্যাসটি হলো- নিয়মিত গোসল না করা। শীতের সময়ে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। শীতকালে দিনের পর দিন গোসল না করেই কাটিয়ে দেন অনেকে।
এদিকে গরমকালে দিনের ভেতর কয়েকবার গোসল করার মতো অবস্থা তৈরি হলেও ব্যতিক্রম থাকে এখানেও। অলসতা কিংবা ব্যস্ততার অজুহাতে গরমকালেও গোসল না করে দিন পার করেন বহু মানুষ। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর।
গোসল যে শুধু শরীর পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে তাই নয়, শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতেও প্রতিদিন গোসল করা অপরিহার্য। আয়ুর্বেদিক তত্ত্বানুসারে, প্রাত্যহিক জীবনে থেরাপির কাজ করে থাকে সকালের গোসল। এমনকি শারীরিক সুস্থতা ও অসুস্থতার অনেকটাই নির্ভর করে এই গোসলের উপরেই।
এমন তথ্য জেনে নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন! তবে আজকের ফিচার থেকে জেনে নিন, প্রতিদিনের সাধারণ এই কাজটি কীভাবে আপনার শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে থাকে এবং কেন প্রতিদিন গোসল করা অপরিহার্য।
পেশি রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে
পেশির ব্যথাভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে গোসল। একইসাথে পেশির ফ্লেক্সিবিলিটি ও ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে গোসল। রাতে ঘুমের বেকায়দা ভঙ্গির ফলে অনেক সময় পেশিতে টান পরে কিংবা বালিশে ঠিকভাবে মাথা না রাখার ফলে ঘাড়ে ব্যাথাভাব দেখা দিয়ে থাকে। সকাল সকাল গোসল করার ফলে পেশি অনেকটাই শিথিল হয় এবং এই সকল ব্যথাভাব কমে যায়।
রক্ত চলাচল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
হালকা গরম পানিতে গোসল করার ফলে শরীরে রক্ত চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে শরীরের সকল অঙ্গে পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে সরবরাহ হয়। পাশাপাশি রক্ত চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদরোগ দেখা দেবার সম্ভবনা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
নিয়মিত গোসল করার প্রধান ও মূল কারণ হলো- শরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শরীরকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাস মুক্ত রাখা। ঠাণ্ডা পানির সাহায্যে গোসলের ফলে রক্তে শ্বেত রক্ত কনিকা বেশি উৎপাদিত হয়। যা সকল ধরনের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। এছাড়া ঘামের সাহায্যে শরীর থেকে যে সকল ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়, সেটাও ধুয়ে ফেলা সম্ভব হয় গোসলের সাহায্যে।
মন খারাপ দূর করবে গোসল
হুট করেই কি খুব মন খারাপ লাগছে? দ্রুত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল সেরে নিন। ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের ফলে রক্তে বেটা-এন্ড্রোফিনস ও নোরাড্রেনালাইন্স বৃদ্ধি পায়। যা ডিপ্রেশন কিংবা অহেতুক মন খারাপভাব দূর করতে কাজ করে।
ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
গোসল করার সময় পানির নিচে নিঃশ্বাস নেওয়ার ফলে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটি হয়ে থাকে কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে। গোসলের সময় আমরা সাধারণত লম্বা নিঃশ্বাস গ্রহন করে এবং কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস আটকে রাখার পর প্রশ্বাস ছাড়ি। এতে করে ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আপনাকে সামাজিক হতে সাহায্য করে
এমন অদ্ভুত কথা পড়ে নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন! নিশ্চয় ভাবছেন, এর সাথে শারীরিক সুস্থতার সম্পর্ক কীভাবে থাকতে পারে! উত্তরটা খুব সহজ। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পানিতে লম্বা একটা গোসলের পর নিশ্চয় আপনি অনেক সতেজ ও পরিচ্ছন্ন বোধ করেন। এতে খুব সূক্ষ্মভাবে আপনার মাঝে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। ফলে আপনি আশেপাশের মানুষের সাথে বেশি চলাফেরা করতে, কথা বলতে ইচ্ছুক হয়ে ওঠেন। ফলাফল স্বরূপ আপনার মন অনেক প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। আর কে না জানে, মনের সাথে শরীরের যোগাযোগটা খুব পুরনো। মন ভালো তো শরীরও ভালো।
প্রতিদিনের হাজারো কাজের মাঝে মাত্র তিরিশ মিনিট সময় নিজের একান্ত ব্যক্তিগত এই কাজটির জন্য আলাদা করে রাখা নিশ্চয় খুব একটা কষ্টসাধ্য হবে না। নিয়মিত গোসল করার এই সুঅভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারলে শরীরের পাশাপাশি সুস্থ থাকবে মনও। তাই দারুন অপরিহার্য প্রাত্যহিক এই অভ্যাসটি গুরুত্ব সহকারে পালন করার প্রতি নিজে সচেষ্ট হোন, পরিবারের মানুষদেরও সচেতন করে তুলুন।