না জেনেই খাচ্ছি সাদা বিষ!
ফিচারটির টাইটেল পড়েই নিশ্চয় ভ্রু কুঁচকে ফেলছেন। ভাবছেন কোন সাদা বিষের কথা বলা হচ্ছে এখানে? তাও নাকি আবার নিয়মিত খাওয়া হচ্ছে সেই বিষ! অবাক করার মতো বিষয় হলেও সত্যিটা হচ্ছে, নিয়মিত আমরা সকলেই খাচ্ছি ও পান করছি এই সকল সাদা বিষ।
অনেকে না জেনে অথবা অনেকে জেনেও অবহেলায় নিয়মিতই খাচ্ছেন সাদা বিষ তথা সাদা চালের ভাত, পাস্তুরিত গরুর দুধ, রিফাইন্ড লবণ ও রিফাইন্ড চিনি। এই চারটি উপাদান বাড়িয়ে দেয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি। কারণ, এই সকল উপাদানে সঠিক পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল নেই। এছাড়াও হাইপারটেনশন ও ডায়বেটিস দেখা দেবার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করার জন্য দায়ী এই খাদ্য উপাদানগুলো।
এখানে আরো বিস্তারিত তুলে ধরা হলো, কেন এই খাদ্য উপাদানগুলো খাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন খুব দ্রুত।
পাস্তুরিত গরুর দুধ
পাস্তুরিত তরল গরুর দুধে শুধু একটিই ভালো দিক রয়েছে। এটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকে, নষ্ট হয় না। তবে এই পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ার ফলে গরুর দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। দুধ থেকে এনজাইম, ভিটামিন- এ, বি১২ ও সি সরিয়ে ফেলা হয়। গবেষকেরা জানান, দুধ পাস্তুরিত করার সময়ে দুধে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোবাকিলাস অ্যাসিডফিলাস (Lactobacillus acidophilus) কে নষ্ট করে ফেলা হয়। এছাড়াও প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত আয়োডিনের মাত্রা কমিয়ে ফেলা হয় পাস্তুরিত দুধে।
সাদা চাল তথা রিফাইন্ড চাল
সাদা চাল প্রস্তুত করার সময় চালের উপরিভাগের লেয়ার ও জীবাণু সরিয়ে ফেলা হয়। ফলে চালের ভেতরের অংশটুকু (এন্ডোস্পার্ম) রয়ে যায়। যে অংশে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ তথা শর্করা থাকে। দৈনিক সাদা চালের ভাত খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায়। ফলাফল স্বরূপ দেখা দেয় ডায়বেটিসের সমস্যা। এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাদা চালের ভাত খাওয়ার ফলে ডায়বেটিস দেখা দেবার সম্ভবনা ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
সাদা চিনি তথা রিফাইন্ড চিনি
চিনির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কমবেশি সকলেই জানি আমরা। সাদা চিনি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আরো বড় ব্যাপার হচ্ছে, এই খাদ্য উপাদানটির কোন ইতিবাচক দিক একেবারেই নেই। সাধারণত আখের রস থেকে তৈরি করা হয় সাদা চিনি। চিনি তৈরির এই প্রক্রিয়ার সময় মেশানো হয় লেবুর রস। যা এতে উপস্থিত উপকারী ভিটামিনকে বিনষ্ট করে দেয়। এছাড়াও চিনি ব্লিচিং করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম সালফেট ও সালফিউরিক অ্যাসিড। চিনিকে সাদা করার জন্যে ব্যবহার করা হয় এই দুইটি কেমিক্যাল।
রিফাইন্ড লবণ
প্রাকৃতিক লবণে থাকে আয়োডিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে রিফাইন্ড লবণ তৈরির জন্য লবণ থেকে আয়োডিন সরিয়ে ফেলা হয়। রিফাইন করার সময় এতে যুক্ত করা হয় ফ্লোরাইড। অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া রিফাইন্ড লবণ খাওয়ার ফলে দেখা দেয় উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা।
না জেনে কিংবা না বুঝে প্রতিদিন নিজেদের ক্ষতি করছি আমরা। সুস্বাস্থ্যের জন্য তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন আজ থেকেই।