লক্ষণ জানুন, আত্মহত্যা প্রতিরোধ করুন
বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যা প্রতিরোধে ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখ ‘ওয়ার্ল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে’ তথা বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশনের সাথে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফোর মেন্টাল হেলথ একসাথে এই দিনটি পালন করে।
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যার হার ও আত্মহত্যা প্রবণতা উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণায় দেখা গেছে গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়াতে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। গবেষকেরা এই সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে দুষছে ঋণ, একাকীত্ব ও বন্দী জীবনযাপনকে।
বাইরের দেশের কথা রেখে এবারে নিজ দেশের দিকে তাকানো যাক। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রতি এক লাখ মানুষের মাঝে ১২৮ জন আত্মহত্যা করছে। দ্য ডেইলি স্টারের তথ্যানুযায়ী ২০০২-২০০৯ সাল পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ৭৩,৩৮৯ জন।
সঠিক পদক্ষেপ সঠিক সময়ে গ্রহণ করতে পারলে খুব সহজেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। একজন আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে তার জন্য আত্মহত্যার লক্ষণ, কারণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি।
আত্মহত্যা প্রবণতার লক্ষণ
একজন আত্মহত্যা প্রবণ মানুষ অথবা বিষণ্ণতার দরুন নিজের ক্ষতি করার মতো চিন্তা করতে পারে, এমন মানুষের মাঝে কিছু বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ও কমন লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো হলো-
১. নিজেকে ট্র্যাপট বা কোন অবস্থায় ও অবস্থানে বন্দী মনে করা।
২. প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে থাকা।
৩. মৃত্যু বা সহিংসতা নিয়ে অধিক চিন্তায় সময় কাটানো।
৪. ঘনঘন মেজাজের পরিবর্তন হওয়া। কখনো ভালো আবার পরক্ষণেই খারাপ।
৫. অপরাধবোধ, লজ্জা বা প্রতিশোধ নেওয়া মূলক কথা বলা।
৬. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া।
৭. নিত্যদিনের রুটিনসহ ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন দেখা দেওয়া।
৮. মদ্যপান বা মাদকে আসক্তি তৈরি হওয়া।
৯. চারপাশের সবকিছুতে নির্লিপ্ততা চলে আসা।
১০. নিজের পছন্দের জিনিসপত্র অন্যকে দিয়ে দেওয়া।
১১. বিষণ্ণতা, প্যানিক অ্যাটাকের মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেওয়া।
১২. নিজেকে অনেকটা গৃহবন্দী করে ফেলা।
১৩. নিজেকে অন্যের বোঝা মনে করা।
১৪. নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত বিরূপ ধারণ পোষণ করা।
১৫. বেঁচে থাকা কতটা যন্ত্রণাদায়ক ও এই বিষয়ক কথা বলা।
আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দেওয়ার কারণ
নানান কারণ ও ঘটনা প্রবাহের দরুন একজনের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দিতে পারে। সেটা হতে পারে আর্থিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, শারীরিক অসুস্থতা, সম্পর্কজনিত সমস্যা কিংবা কোন দুর্ঘটনার প্রভাব। মূলত অপ্রতিরোধ্য ও অনিয়ন্ত্রিত দুঃখ ও কষ্ট থেকেই আত্মহত্যার মতো চিন্তা কাজ করে। প্রধান যে সকল কারণে এমন চূড়ান্ত বিষয়টি কারোর মাঝে কাজ করতে পারে তার কয়েকটি এখানে জানানো হলো।
১. পরিবারের কারোর মানসিক সমস্যা থাকা
২. পরিবারের কোন সদস্যের নির্যাতনের ঘটনা ঘটা।
৩. সমস্যাযুক্ত পরিবারের গঠন।
৪. পরিবারের কারোর আত্মহত্যার ঘটনা।
৫. সবসময় আশাহীন বোধ হওয়া।
৬. অনেক মানুষের মাঝে থেকেও নিজেকে একা লাগা।
৭. লিঙ্গ ও যৌনতা নিয়ে সমস্যা থাকা।
৮. মাদকসেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়া।
৯. মানসিক অসুস্থতা দেখা দেওয়া।
১০. ইতোপূর্বে কোন কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করা।
১১. অপরিশোধযোগ্য ঋণের বোঝ থাকা।
১২. ঘুমের অভাব ও ঘুমের সময় ঠিক না থাকা।
১৩. বায়পোলার ডিসঅর্ডারে ভোগা।
১৪. সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভোগা।
১৫. অপমানসূচক আচরণের মুখোমুখি হওয়া।
কীভাবে রোধ করা যায় আত্মহত্যা প্রবণতা?
একজন আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে এই বিপদজনক স্থান থেকে সরিয়ে আনতে তার পরিবারের মানুষ ও বন্ধুদের সাহায্য প্রয়োজন সবার আগে ও সবচেয়ে বেশি। আত্মহত্যা প্রবণতার লক্ষণগুলো বেশিরভাগ সময়ে খুব স্পষ্ট হয়। এমনটা কারোর মাঝে ধরা পড়লে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফোর মেন্টাল হেলথ এক্ষেত্রে পরামর্শ দেয় তিনটি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।
১. আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তির সাথে কথা বলা, জিজ্ঞাসা করা যে সে কোন কারণে বিষণ্ণ হয়ে আছে। কী কারণে সমস্যা বোধ করছে।
২. অবস্থা বুঝে দ্রুত তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া। বিশেষত ধারালো কোন জিনিস ও তরল কেমিক্যাল জাতীয় জিনিস তার নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া।
৩. তার সাথে কথাবার্তা বলার সময় বারবার আশ্বস্ত করা, উৎসাহ দেওয়া ও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করা। এতে সে মনের ভেতর চাপা কষ্ট বা ক্ষোভ উগড়ে দিতে পারবে।
আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তা দূরে রাখুন!