সুস্বাস্থ্য অর্জনে মহাত্মা গান্ধীর জীবনের ৮ দর্শন

  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মহাত্মা গান্ধী

মহাত্মা গান্ধী

অক্টোবরের ২ তারিখ শুধুই একটি তারিখকে প্রকাশ করে না।

আজ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের মাঝে একজন ও প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। আজকের দিনে জন্ম নেওয়া মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বিশ্বের দরবারে মহান আত্মা (মহাত্মা) হিসেবে পরিচিত ও সম্মানিত। এছাড়া আজ শুধুই তাঁর জন্মদিবস নয়, ২০০৭ সালের ১৫ জুন আজকের দিনকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবেও ঘোষণা করে জাতিসংঘ।

জীবনভর তিনি কঠোরভাবে নিয়ম ও শৃঙ্খলার মাঝে জীবনযাপন করেছেন। যার ফলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ছিল তাঁর অন্যতম বড় শক্তি। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিন কিছু শেখো, প্রতিদিন পরিণত হও।’ তাই তাঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জানুন মহান এই নেতার জীবনের আটটি নিয়ম সম্পর্কে। যা তিনি নিজে পালনের পাশাপাশি, অন্যদের পালন করার জন্যেও উদ্বুদ্ধ করতেন।

বিজ্ঞাপন

উপবাস সুস্থতাকে ত্বরান্বিত করে

উপবাস, উপোস বা রোজা রাখা- বিষয়টিকে যেভাবেই বলুন না কেন, এই অনুশীলনটি সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। শরীরকে ডিটক্স করতে এবং পাকস্থলীকে অপ্রয়োজনীয় খাদ্যাংশ থেকে পরিষ্কার রাখতে কাজ করে উপবাস। এতে করে সহজেই শরীরের ইনফেকশনের সমস্যা ভালো হয়ে যায়। আরও বড় বিষয় হলো বাওয়েল প্রবলেম তথা কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় উপবাস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিনের উপবাস শরীরকে ঝরঝরে রাখতে কাজ করবে। মহাত্মা গান্ধী নিজে ২১ দিনের উপবাস করেছিলেন হিন্দু ও মুসলিমদের মাঝে সৌহার্দ্য তৈরির জন্য।

খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে

গান্ধী বলেছেন, ‘শরীরকে ময়লার ভাগাড়ের মতো ব্যবহার করো না, তার যা প্রয়োজন সেটাই তাকে দাও’। শারীরিক সুস্থতায় গুরুত্ব আরোপের জন্য তিনি নিজে ছয় বছর ভেগান জীবনযাপন করেছেন। ভেগান ডায়েটে কোন ধরণের প্রাণী ও প্রাণীজাত খাদ্য উপাদান না থাকলেও, এই খাদ্যাভ্যাস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি অ্যাসিড, আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া সম্ভব। যার ফলে নিজেকে ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগসহ ক্ষেত্র বিশেষে ক্যানসার থেকে দূরে রাখা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

Mahatma Gandhi

ঘুম থেকে উঠতে হবে ভোরে

মহান এই নেতা তার জীবদ্দশায় সবসময় অন্যদের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য ও সকালে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠার জন্য পরামর্শ দিতেন। তিনি নিজে রাতে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়ে একদম কাকডাকা ভোরে উঠে যেতেন। এটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে রাতে দেরী করে ঘুমানো স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।

এড়াতে হবে তামাক ও অ্যালকোহল

নিত্য জীবন থেকে এই দুইটি জিনিস সম্পূর্ণভাবে বর্জনের প্রতি জোর দিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী। এই দুইটি জিনিস জীবনে মন্দ ছাড়া ভালো কোনকিছুই বয়ে আনে না। একদিকে তামাকজাত পণ্য উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, অন্যদিকে অ্যালকোহল বাড়ায় ডায়বেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা।

অভ্যাস করতে হবে হাঁটাহাঁটির

সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা অনেকখানি ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই শরীরচর্চা খুব কঠিন ও ভারি হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাধারণ হাঁটাহাঁটিও অনেকখানি অবদান রাখতে পারে সম্পূর্ণ শারীরিক সুস্থতার উপর। মহাত্মা গান্ধী প্রায় চল্লিশ বছর প্রতিদিন ১৮ কিলোমিটার হাঁটতেন! তার মতো হাঁটা সম্ভব না হলেও, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাসটি অবশ্যই রপ্ত করতে হবে। এতে করে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি হাড়ের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে, হৃদযন্ত্র ভালো কাজ করবে এবং টাইপ-২ ডায়বেটিস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

Mahatma Gandhi

ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তোলা

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতবর্ষে ধ্যানের অনুশীলন হয়ে আসছে। ধ্যানের সপক্ষে বেশ কিছু গবেষণা জানাচ্ছে, ধ্যান মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাকে দূরে রাখে। ফলে সহজেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে দমিয়ে রাখা যায়।

ভাবতে হবে ইতিবাচকভাবে

মহাত্মা গান্ধীর খুব বিখ্যাত একটি উক্তি আছে এই বিষয়ে। ‘একজন মানুষ তার নিজের চিন্তার ফসল। সে তাই হয়, যা সে ভাবে।’ খুব সহজ ও বোধগম্যভাবে বিষয়টিকে তিনি উপস্থাপন করেছেন। নিজের চিন্তা ও ভাবনার ক্ষেত্রকে এমনভাবে উন্নত করতে হবে যে, একটা সময়ে নিজেকেও সেখানে দেখা সম্ভব হয়। ইতিবাচকভাবে চিন্তা করার শক্তি দক্ষতা ও কাজ করার ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করে দেয়।

Mahatma Gandhi

সবশেষে, হতে হবে দয়াবান

গান্ধী বলেছেন, ‘চোখের বিনিময়ে চোখ এই পৃথিবীকে অন্ধত্ব এনে দিবে।’ প্রতি হিংসাপরায়ণ মানসিকতা নয়, দরদ ও দয়াশীলতাই আনতে পারে শান্তি ও সৌহার্দ্য। অন্যের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া, অন্যকে বুঝতে শেখা, অকারণ সমালোচনা না করার মাধ্যমে নিজেকে খুব সহজেই একজন দয়াবান ব্যক্তিতে পরিণত করা সম্ভব।

মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে শুধু তার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন নয়, তার জীবনযাপনের ধরণ সম্পর্কে জেনে তা মেনে চলার চেষ্টাও করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে নিজেকে একজন সুস্থ ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

আরও পড়ুন: যোগব্যায়ামের সাথে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা