চিত্রগ্রাহকের চোখে বিষণ্ণতা দেখতে যেমন!
ডিপ্রেশন তথা বিষণ্ণতা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম এক মানসিক সমস্যা।
যে সমস্যাটিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যাওয়া হয়। ফলাফল স্বরূপ আড়ালেই থেকে যায় বিষণ্ণতা ও বিষণ্ণ ব্যক্তি। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে পুরো বিশ্বে ৩০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত, যার মাঝে নারীদের সংখ্যাই বেশি। শারীরিক অসুস্থতা ও রোগের মতো দৃশ্যমান নয় বলেই অবহেলা ও হাস্যরসের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ডিপ্রেশন। অথচ ডিপ্রেশনের শেষ পর্যায়ে ঘটতে পারে আত্মহত্যার মতো ঘটনা।
আপনার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, ‘বলুন তো বিষণ্ণতা দেখতে কেমন?’ তবে কী উত্তর দিবেন! যে অসুখটি মনের, তাকে কীভাবে দেখা যাবে! বিষণ্ণতার দরুন মনের ভেতরে ঘটা তোলপাড়, ভাঙচুর, আর্তনাদ, ব্যথা ও দমবন্ধভাবকে ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার নাসিফ ইমতিয়াজ।
‘হোয়াট ডিপ্রেশন লুকস লাইক’ নামক একটি অ্যালবামে দশটি ভিন্ন ছবিতে ভিন্ন আঙ্গিকে ‘ডিপ্রেশন’ কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম এর সাথে কথা হলে জানান, মোটেও শখের বশে করা কোন কাজ নয় এই সিরিজ। লম্বা সময়ের পরিকল্পনা ছিল বিষণ্ণতা নিয়ে কাজ করার। নাসিফ জানান, এক সময়ে নিজেও ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে সময় পার করেছেন। তখন থেকেই এই সিরিজ করার বিষয়টি মাথায় আসে তার।
‘প্রথমে ভেবেছিলাম নিজের একটা সেলফ পোর্ট্রেট সিরিজ করবো। কিন্তু পরে সেটার করার সাহস পেলাম না বাংলাদেশের সমাজিক বিভিন্ন দিক চিন্তা করে। এখানে ডিপ্রেশসড ব্যক্তিকে এটেনশন সিকার বা সিম্পাথি সিকার বলে মনে করা হয়। তাই আমি মডেল ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ডিপ্রেশনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছি।’
অনেকেই বিষণ্ণতা লোকদেখানো ও তুচ্ছ বিষয় হিসেবে মনে করেন। বিশেষত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সংখ্যাটা অন্যান্য দেশের চাইতে অনেকটা বেশি। সাধারণ মন খারাপ কিংবা মুড অফ থাকার সাথে বিষণ্ণতার কোন তুলনা চলে না। অথচ না জেনে ও বুঝেই বিষণ্ণতাকে সাধারণের মাপকাঠিতে ফেলে দেওয়া হয়। ফলাফল স্বরূপ বন্ধ দরজার ওপারেই রয়ে যায় বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি।
সামাজিক চাপ, পারিবারির চাপ, পড়ালেখার চাপ, একাকীত্ব, অর্থনৈতিক সমস্যা, সম্পর্কে সমস্যা, বিভীষিকাময় ছেলেবেলা, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাসহ নানা কারণেই জন্ম নিতে পারে ভয়াল এই মানসিক সমস্যাটি।
খুব ভুল একটি ধারণা আমরা লালন করি আমাদের মাঝে- টাকা দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে বিষণ্ণতা দেখা দিলেও, টাকার মাধ্যমে বিষণ্ণতাকে ভালো করা সম্ভব নয়। মোটা অংকের টাকা, জনপ্রিয়তা, ভালোবাসা কোনকিছু দিয়েই মনের অন্ধকার দূর করা যায় না। এ কারণেই কালে কালে হারাতে হয়েছে কালজয়ী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো থেকে শুরু করে সংগীতশিল্পী কার্ট কোবেইন, অভিনেতা ও কমেডিয়ান রবিন উইলিয়ামস, অলিম্পিক মেডেলিস্ট জেরেট পিটারসনসহ জনপ্রিয় ব্যান্ড লিনকিং পার্কের ভোকালিস্ট চেস্টার বেনিংটনকে।
সেই বিষণ্ণতাকে তুলে ধরে একেবারেই ভিন্নমাত্রিক এই সিরিজটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আকর্ষণ তৈরি করে ফেলেছে। নাসিফের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সামনে এই সিরিজে আরও ছবি যুক্ত হবে কিনা। ইতিবাচক উত্তরে জানালেন, সামনে এই সিরিজে আরও নতুন ছবি যুক্ত হবে। ডিপ্রেশনের উপরে আরও কাজ করার পরিকল্পনা আছে তার।
আরও পড়ুন: