শরীরে জিংকের ঘাটতির লক্ষণ সমূহ
শরীরে ভিটামিন কিংবা অন্যান্য পুষ্টিগুণের ঘাটতি দেখা দেওয়ার মতোই জিংকেরও ঘাটতি দেখা দেয়।
প্রায় মহামারী আকারের এই সমস্যাটি সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষ একেবারেই সচেতনতা নন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) এর তথ্য মতে, পুরো বিশ্বের প্রায় ৩১ শতাংস জনসংখ্যা জিংকের ঘাটতিতে ভুক্তভোগী। শুধু তাই নয়। এই সমস্যাটিকে শীর্ষ শারীরিক সমস্যার মাঝে পাঁচ নাম্বারে রাখা হয়েছে। কারণ শরীরে জিংকের ঘাটতির ফলে দেখা দিতে পারে গুরুত্বর বেশ কিছু রোগের প্রকোপ।
একদম শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ, প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জিংক তথা জিংক সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। জিংককে বলা হয়ে থাকে শরীরের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। মানব শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু, হাড় ও তরলে জিংকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। নিশ্চয় বোঝা আচ্ছে কেন জিংক শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ও তার ঘাটতি দেখা দিলে শরীর কতটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে!
আরো পড়ুন: শারীরিক ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে উপকারী পানীয়
খুবই দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ জিংকের ঘাটতি ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুই জানে না। শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণের জন্য কিছু লক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে, শরীরে জিংকের ঘাটতি রয়েছে কিনা! এখানে প্রাথমিক তিনটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা প্রকাশ করে শরীরে জিংকের ঘাটতির সমস্যা।
নিউরোলোজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়
মগজের কার্যকারিতা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে জিংক খুবই জরুরি একটি উপাদান। মগজের কোষে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে মগজের কার্যক্ষমতা স্লথ হয়ে যায়। শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমেই তার প্রভাব দেখা দেয় নিউরোলজিক্যাল ক্ষেত্রে। শিশুদের ক্ষেত্রে মনোযোগে সমস্যা দেখা দেয়। বয়স্কদের মাঝেই অমনোযোগিতার প্রভাব দেখা দেয়। তবে এমনটা হলে জিংক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। তার পরিবর্তে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে বেশি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যাওয়া
শরীরে সঠিক মাত্রায় জিংকের উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর রাখে। প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরে জিংকের মাত্রা ঠিক থাকলে টি-সেল উৎপাদন সঠিক মাত্রায় থাকে। হরমোন রিসেপ্টরের জন্যেও জিংকের প্রয়োজন হয়। এই সকল কিছু সম্মিলিত ভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বজায় রাখে।
আরো পড়ুন: ভিটামিন ডি ঘাটতি: ঝুঁকি, উপসর্গ এবং বৃদ্ধির উপায়
পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়
জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে অকারণেই কিছুদিন পরপর ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর পুরো বিশ্বে প্রায় ২ মিলিয়ন শিশু ক্রমাগত ডায়রিয়ার সমস্যায় আক্রান্ত হয়। ধারণা করা হচ্ছে যে, তাদের বেশিরভাগ জিংকের ঘাটতি জনিত সমস্যা ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে। এছাড়াও পাকস্থলিস্থ সমস্যার কারণে মলের আরো কিছু সমস্যা, অ্যালার্জির সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে।
উপরের সমস্যাগুলো কোনটা যদি আপনার অথবা আপনার বাসার শিশুর সাথে মিলে যায় তবে বুঝতে হবে শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করলে সমস্যা আরো গুরুত্বর আকার ধারণ করে। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে সবসময়ই বলা হয়ে থাকে জিংকের ঘাটতি পূরণে সামপ্লিমেন্ট হিসেবে কোন ওষুধ নয়, প্রাকৃতিক খাদ্য খেতে হবে বেশি করে। যে সকল খাবারে জিংকের উপস্থিতি বেশি, সেই খাদ্য উপাদানগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কাজুবাদাম, মটরশুটি, মাশরুম, মুরগির মাংস, দই, কচু শাক প্রভৃতিতে পাওয়া যাবে প্রচুর পরিমাণে জিংক। চেষ্টা করতে হবে এই খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়ার।