টাঙ্গাইলে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভের বেহাল দশা
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পুনর্বাসন এলাকায় নির্মিত জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি বেহাল দশায় পড়ে থাকলেও সংস্কারে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) জাহাজমারা দিবস। ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ জাহাজে বহন করা অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জ্বালানি ও রসদ বোঝাই দুইটি হাজার ধ্বংস করে। গত ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য সম্মুখ সমরের স্থান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ কাজ করে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগ।
সোমবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে উপজেলার পুনর্বাসন (লেংরা বাজার) এলাকায় জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো স্মৃতিস্তম্ভে বিভিন্ন ধরনের গাছ জন্মে ঢেকে গেছে স্তম্ভটি। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য স্মৃতিস্তম্ভে যে বাংলাদেশের মানচিত্র নকশা তৈরি করা হয়েছিল সেটিও আগাছাতে ঢেকে গেছে। স্মৃতিস্তম্ভে রাতে আলো জ্বালানোর জন্য স্থাপিত ৬টি ল্যাম্পপোস্টে মরিচা ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের দুইপাশে দুইটি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক সময় বালুবাহী ট্রাক রাখা হচ্ছে সেখানে। এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভের গাইডওয়াল পুকুরে ধসে পড়ছে। পুরো স্মৃতিস্তম্ভটি লতাপাতা গাছ ও ময়লা আর্বজনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য সম্মুখ সমরের স্থান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর নির্মাণ কাজ শেষ করে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগ উপজেলার সিরাজকান্দির (লেংড়াবাজার) যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত করে। এছাড়া পরবর্তীতে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপজেলা এলজিইডি স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকার প্রকল্প নিয়ে সংস্কার কাজ করে।
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে মাটিকাটা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী পাকবাহিনীর অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জ্বালানি ও রসদ বোঝাই এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ জাহাজ থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। বীরবিক্রম হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেগুলো উদ্ধার করার পর জাহাজ দুটিকে ধ্বংস করে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। ধ্বংস হওয়ার কারণে কামালপুর, বাহাদুরাবাদ ঘাট ও নকশী সংঘর্ষের পর জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গ রংপুর, দিনাজপুরে পাকবাহিনীর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের বলিষ্ঠ সাহসিকতার নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” ও “জাহাজমারা হাবিব” উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭১ সালে ধ্বংস করা জাহাজ বা জাহাজমারা ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে ওই এলাকায় নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভটি। ইতিহাসে জাহাজমারা যুদ্ধ মহান মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা।
তৎকালীন কমান্ডার হাবিবুর রহমানের সহযোগী (হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা) আব্দুর রশিদ গেরিলা জানান, এই দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু এ বছর বন্যা ও করোনাভাইরাসের জন্য কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সময় গণপূর্ত বিভাগ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবহিত করেনি। তারা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। সেটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখানে সন্ধ্যার পর মাদকের স্থানে পরিণত হয়।
টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের পরই সেটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্মাণের পর আর সংস্কার কাজ হয়নি। সংস্কারের জন্য গণপূর্তের কোন বরাদ্দ নেই। স্থানীয় প্রশাসন যদি সংস্কারের জন্য কোন প্রকল্প গণপূর্তে পাঠান তাহলে সেটা বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করা হবে।