সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন
মেহেরপুর: মেহেরপুর জেলার সড়ক-মহাসড়কে দাপটের সঙ্গেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন। স্যালো-ইঞ্জিন চালিত নানা প্রকার যানবাহন ছাড়াও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও পাখিভ্যান দেদারসে চলাচল করছে। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। মাঝেমধ্যে প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে এসব অবৈধ যানবাহন।
জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট সদর উপজেলার ইসলামনগর-খোকসা গ্রামের মাঠে স্যালো-ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যান আলমসাধুর ধাক্কায় খেজমত আলী (৫২) নামের এক কৃষক নিহত হন। এর আগে ৯ জুলাই মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর মাহবুব (৫৮) বিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় গরু বোঝাই ট্রলির ধাক্কায় নিহত হন।
নিহত খেজমত আলীর ছবিসহ অফিসিয়াল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার। তিনি লিখেছেন- ‘প্রতিদিন সড়ক মহাসড়কে আলগামন, নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, লাটাহাম্বা- এই সকল অবৈধ যানের কারণে দুর্ঘটনায় অজস্র মানুষ হয় প্রাণ হারাচ্ছে অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করছে। ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলা পুলিশ এই সকল অবৈধ যানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। আসুন, আমরা সকলেই আন্তরিকভাবে মেহেরপুর জেলা পুলিশকে সহযোগিতা করি।‘
পুলিশ সুপারের এই স্ট্যাটাস থেকে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র সহজেই অনুমেয়। মেহেরপুর জেলার অবস্থাও একই। প্রতিদিন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও দুর্ঘটনা হয় না এমন একটি দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদ্র আয়তনের মেহেরপুর জেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক তিনটি। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া-মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর-মুজিবনগর ও কেদারগঞ্জ-দর্শনা এই তিনটি আঞ্চলিক মহাসড়ক ছাড়াও রয়েছে জেলা ও উপজেলা সড়ক। আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩৪ কিলোমিটার। এই সড়কগুলো দিয়েই মূলত জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ হয়। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই যানবাহন চলাচল করে। মেহেরপুর থেকে বিভিন্ন প্রকার যাত্রীবাহী বাস ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা ও রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এছাড়াও পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক ও ট্যাঙ্কলরি চলাচল করে থাকে।
মেহেরপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব সোনা জানান, জেলা থেকে তিনটি সড়কে বাস চলাচল করে। দূরপাল্লার ও আন্তজেলা বাস চলাচল স্বাভাবিকভাবে হয় না। সড়কে সব সময়ই অবৈধ যানবাহন চলাচল করে। ফলে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারেন না চালকরা। আবার দুর্ঘটনা ঘটলে অবৈধ যানবাহনের চেয়ে বাস চালকের ওপরেই দায় বেশি পড়ে। হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় বাসটিকে। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে তারা বাস চলাচলকৃত সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জেলার সড়কগুলোতে স্যালো-ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানবাহনের পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও পাখিভ্যানেও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ধীরগতির এসব যান চলায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দ্রুতগতির যানবাহন গুলো। এমনটি বলছিলেন কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদারও ভিন্নতা এসেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরে যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখন এসব অবৈধ যানবাহন। এছাড়াও কৃষি পণ্য পরিবহনে এর জুড়ি নেই। ফলে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলেও এসব যানবাহনের উপরেই আস্থা রয়েছে সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর।
স্যালো-ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানের কয়েকজন চালক জানান, এটি অবৈধ হলেও দরিদ্র পরিবারগুলোতে হাসি ফুটিয়েছে। ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে একটি নছিমন কেনা যায়। যা ঋণ নিয়ে ক্রয় করেছেন দরিদ্র কোনো পরিবার। ভাড়ার আয় থেকে ঋণ পরিশোধ ও পরিবারে সচ্ছলতা আসছে। এভাবেই কয়েক হাজার পরিবার দারিদ্রতা জয় করেছে। স্থানীয়ভাবে যানবাহন তৈরি কারখানায় কাজ করে উপার্জন করছে বহু শ্রমিক।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান (পিপিএম) জানান, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ মাঠে নেমেছে। যেকোনো মূল্যে জেলার আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে।