যেখানেই অনিয়ম সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা: আতিক
এই শহরে ব্যবসা করতে হলে নিয়ম মেনে সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত ট্যাক্স দিয়েই করতে হবে। আমরা যেখানে অনিয়ম দেখব সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
রোববার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরা জসিম উদ্দিন মোড়ে অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদ পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন এই শহরে ব্যবসা করবেন, কিন্তু পারমিশন নিবেন না এটা তো হতে পারে না। যে সাইনবোর্ড ভাঙছি, তাদেরকে বারবার বলা হয়েছে, একমাস যাবত বলা হয়েছে। আমরা পেপারে নোটিশ দিয়েছি, গণ-বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তারপরেও তারা কর্ণপাত করছেন না। এই যে ভবনগুলো দেখছেন, এখানে এতগুলো সাইনবোর্ড আছে, এরা কেউই সাইনবোর্ড বাবদ ট্যাক্স দেন নাই। কিন্তু তারা বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।
আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, এই শহরকে নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। এই শহরের অভিভাবক আছেন। মেয়র ও কাউন্সিলরগণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়রের দায়িত্ব জনগণের জন্য একটা কমফোর্টেবল শহর বাস্তবায়ন করা। এই যে সাইনবোর্ডগুলো দেখছেন, এটা সম্পূর্ণ একটি বিশৃঙ্খলা।
ডিএনসিসির অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হবে বলে মেয়র জানান। তিনি বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মগবাজার, কাওরানবাজার, মালিবাগ যত জায়গা আছে সব জায়গায় যাবো। যেহেতু আমাদের লোকবল সংকট আছে, তাই আমরা আস্তে আস্তে কাজটি করছি।
আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হলে, মশক নিধন করতে হলে, এমনকি আমাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে হলে, আমাদেরকে ট্যাক্স আদায় করতে হবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আসুন একটা সুন্দর শহর তৈরি করি। এই শহর আমাদের সকলের। এখনো সময় আছে যারা সাইনবোর্ডের অনুমোদন নেননি, মাপ দেখে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করুন।
উল্লেখ্য রোববার ডিএনসিসির পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত ও সড়কে অবৈধভাবে রাখা নির্মাণ-সামগ্রী নিলাম ও অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিন প্রায় ৯০০টি অবৈধ সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৬টি মামলায় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া সড়ক ও ফুটপাতে রাখা নির্মাণ-সামগ্রী এবং অপসারণকৃত সাইনবোর্ড নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৫ টাকা পাওয়া যায়।
অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়নের পরিচালনায় কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১৫০টি অবৈধ সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। উচ্ছেদকৃত এসব সাইনবোর্ড নিলামে ৩ হাজার টাকা বিক্রয় করা হয়। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২টি মামলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অঞ্চল-৬ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরিনের পরিচালনায় উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টরে উচ্ছেদ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় ২টি অবৈধ বিলবোর্ড ও ৭০টি সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। উচ্ছেদকৃত এসব বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড ২টি নিলামে ১৮ হাজার টাকা বিক্রয় করা হয়। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৬টি মামলায় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অঞ্চল-৭ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদের পরিচালনায় জসিম উদ্দিন মোড়, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর, রবীন্দ্র সরণি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় ২০০টি অবৈধ সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। ৩ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনের সড়কে নির্মাণ-সামগ্রী রাখায় তা নিলামে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা বিক্রয় করা হয়। এছাড়া আরো দুইটি স্থানে ফুটপাত ও সড়কে নির্মাণ-সামগ্রী রাখায় তা ৯২ হাজার টাকা নিলামে বিক্রয় করা হয়। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২টি মামলায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হামিদ মিয়ার পরিচালনায় মাসকট প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৩০০টি অবৈধ সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। এ এলাকার অনেক ব্যবসায়ীগণ প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাইনবোর্ড অনুমোদন গ্রহণ করেন।
নিলাম ও উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, সচিব মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।