পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য রাজশাহীতে চালু হচ্ছে নৌ-বন্দর
ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানির লক্ষ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীতে নৌ-বন্দর চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দরটি চালু হলে পদ্মা নদী হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌ-বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেয়া করা সহজ হবে।
শিগগিরই এ পথে পরীক্ষামূলক পণ্যের চালান পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে তিনি বন্দরের জন্য সম্ভাব্য স্থান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় কমডোর গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে একটি টিম স্পিড বোটে পদ্মা নদীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত ঘুরে দেখেন। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।
নদীপথ পরিদর্শন শেষে গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে নৌ-পথ চালু করলে দুই দেশই উপকৃত হবে। আজকে আমরা নদীর নাব্যতাসহ সবকিছু দেখে গেলাম। খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। আমরা এক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই নৌপথ চালু করতে চাই।
উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মুহিদুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একসময় গোদাগাড়ী দিয়েই ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। সেটা অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার সেটি চালু হলে খুব ভালো হবে। আগে এই পথে পাটজাত পণ্য ভারতে যেত। আবারও সেসব পণ্য পাঠানো যাবে। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর মাছ উৎপাদন হচ্ছে। সেই মাছও ভারতে রফতানি করা যাবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তাই আমরা চাই দ্রুতই যেন নৌ-বন্দরটি চালু হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির। অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ড।
পরে কমডোর গোলাম সাদেক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথেও সাক্ষাত করেন। নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাৎকালে নৌ-বন্দর চালুর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ পদ্মা নদীর এই নৌপথে বাণিজ্য চালুর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলক চালান পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। বিআইডব্লিউটি’র কর্মকর্তারা এখন নৌপথটির অবকাঠামো পর্যালোচনা করছেন।
সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এই নৌপথটি চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সহজ হবে। কেননা নৌপথে স্বল্প খরচে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যায়।
এদিকে, রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। এখন নতুন পথটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌ-বন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এই পথের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার।
অনেকটা আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে পণ্যবাহী নৌযান। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি নৌযানে ২০০-৩০০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। আর বর্ষা মৌসুমে নাব্যতা বেশি থাকলেও প্রমত্তা পদ্মায় স্রোত বেশি থাকে। তখন অবশ্য পণ্য পরিবহন কিছুটা কঠিন হবে। ইতিমধ্যে গোদাগাড়ী এলাকায় একটি শুল্ক কার্যালয় চালুর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের ‘পাকুর পাথর’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বেশ উন্নতমানের পাথর। এখন সড়কপথে পাথর আমদানি করতে খরচ বেশি পড়ছে। গোদাগাড়ী-মায়া নৌপথটি মূলত পাকুর পাথর আমদানিতে বেশি ব্যবহার হবে।