বাড়ির চারপাশে এতো নিরাপত্তা, কে এই মতিন?

  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এমএ মতিন

এমএ মতিন

উঁচু প্রাচীরে ঘেরা রহস্যময় বাগান বাড়ি। বাড়ির চারপাশে লাগানো হয়েছে শত শত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। কেনো এতো ক্যামেরা, কি হয় এই বাড়িতে আর কেনই বা এতো নিরাপত্তার আয়োজন, তা যেন অধরাই স্থানীয়দের কাছে। গেটের সাথেই রাখা হয়েছে হিংস্র কুকুর। বাড়ির ভিতরের খবর আছে হাতেগোনা কয়েকজনের কাছেই। রহস্যময় এই বাড়ির মালিক এমএ মতিন। যার নির্দিষ্ট কোনো পরিচয়ও জানে না স্থানীয়রা।

কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা, কখনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা আবার কখনো ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে আশুলিয়ার বাইপাইলের মধ্য গাজিরচট বসুন্ধরা এলাকায় বাগান বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করেন এমএ মতিন। কর্মজীবনের প্রথমদিকে নাকি পালন করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বও।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ আছে এই মতিন সুযোগ বুঝে প্রতিবেশীদের বাড়িসহ জমিতে থাবা মারেন। কেড়ে নেন সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে কেনা জায়গা ও বাড়ি। এমন অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দেড় ডজন। তবে অজানা প্রভাব খাটিয়ে তিনি অভিযোগের তোয়াক্কা না করেই দখলদারিত্ব বজায় রেখেছেন। বাঁধা দিলেই লাইসেন্স করা শটগান দিয়ে ছোড়েন ফাঁকা গুলি। সম্প্রতি জমি দখলের অভিযোগে প্রভাবশালী এমএ মতিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এর পর থেকেই আত্মগোপনে যান তিনি।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়ার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার শেষ দিকে গিয়ে দেখা যায়, উঁচু প্রাচীরে আবৃত দাঁড়িয়ে আছে একটি বাগান বাড়ি। রয়েছে ৩টি ভিন্ন ভিন্ন ফটক। যার চারপাশে সিসি ক্যামেরার বাহার। মনে হবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। শুধু ভিতরেই নয়, বাইরের সড়ক পর্যন্ত নজরদারি রাখা হয় সেই টাওয়ার থেকেই। শত শত সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত এই বাড়ি, এমনটাই জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগীরা জানান, এমএ মতিন খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি কর্মজীবনের প্রথমে দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের। করেছেন জাহাজের ব্যবসা। সব শেষে প্রায় ২০ বছর আগে এই আশুলিয়ার ওই এলাকায় খুঁটি পুঁতে প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। ধীরে ধীরে রূপ নেয় ভূমিদস্যুর। শুরু করেন দখল। ভয়ে কেউ অভিযোগ করারও সাহস পেতো না। তবে ভুক্তভোগীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকায় জমা হতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। অবশেষে দায়ের হয় মামলা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, 'আমি মতিনের বাড়ির পাশের এক বাড়ির কেয়ারটেকার। আমি আমাদের বাড়ির গাছের ডাল কাটছিলাম। বাড়ির ভিতর থেকে সিসি ক্যামেরায় দেখে পেয়াদা পাঠায় মতিন। তারা এসে আমাকে মারধর করে বাড়িতে আটকে রাখেন। জানতে পেরে আমার বাড়ির মালিক থানায় খবর দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নেয়।

শত শত সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত এই বাড়ি

অপর ভুক্তভোগী জানান, আমারা বেপজার ১০ জন কর্মচারী মিলে ২০১৯ সালে মতিনের বাড়ির পাশে একটি জায়গা ক্রয় করি। যখন বাড়ির কাজ শুরু করি তখন মতিন সাহেব আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাঁধা দেয়। পরে তার সাথে আমরা বসলে মতিন সাহেব আমাদের বলেন, আপনারা জায়গাটা কষ্ট করে কিনেছেন। তাই আমি আপনাদের টাকা দিয়ে দেবো আপনারা আমাকে জায়গাটা দিয়ে দেন। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও পরে তিনি আর যোগাযোগ করেননি। তার খোঁজও পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে তিনি আর কোনো কথাই বলছেন না। এক সময় তিনি বলেন, এই জায়গা আমি আর ক্রয় করবো না, এই জায়গা আমার। কাগজপত্র নিয়ে ২৭ নম্বরের মিনাবাজারের ওপরে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তার সাথে বসলে তিনি বলেন, জায়গা মাপার পরে তোমরা যদি পাও তাহলে দেওয়া হবে। তার সার্ভেয়ার দিয়ে মাপা হলে দেখা যায় তার কোনো জায়গা আমাদের জায়গার ভিতরে নেই। তবুও কাজ করতে দিচ্ছে না। তার লোকজন দিয়ে আমাদের জিনিস পত্র রড কেটে নিয়ে গেছে। মালামাল যা ছিলো সবই নিয়ে গেছে। পুরো এলাকা দখল করার পাঁয়তারা করছেন তিনি। এ ঘটনায় ৩টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন খান বলেন, আমি জমি দখলের খবর শুনে ওই এলাকায় যাই। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই তিনি এসব করেন। হামলার শিকার হয়ে আমি ফিরে আসতে বাধ্য হই।

২০১৭ সালে ১২ মে তার বাড়ির কেয়ারটেকার ফারুক হোসেনের মরদেহ তারই সীমানায় মাটি চাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে মতিনের সহযোগী চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই মতিনই আসামিদের জামিনে বের করেছেন বলে জানা যায়। তবে ঘটনার রহস্য থেকে যায় অন্ধকারেই।

গত ১৩ নভেম্বর রাতে আগের মতই আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তির ১৬ শতাংশ জমির বাউন্ডারি ভেঙে জমি দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মতিন। পরে ১৪ নভেম্বর মতিনসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

গত ১৯ নভেম্বর তার মতিনের বিরুদ্ধে আরো একটি সিআর মামলার তদন্তভার আসে থানায়। মামলাটি করেন আলি আজম ভুইয়া। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সুদীপ কুমার গোপী জানান, এ সংক্রান্ত একটি আদালতের আদেশ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।