প্রমত্তা পদ্মার বুকে ‘স্বপ্ন জয়ে আখ্যান’



মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পদ্মা সেতু/ছবি: স্টার মেইল

পদ্মা সেতু/ছবি: স্টার মেইল

  • Font increase
  • Font Decrease

পদ্মা সেতুতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ার বা খুঁটির ওপর বসানো হলো ৪১ তম স্প্যান। বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পূর্ণাঙ্গ অবয়বে মাথা তুলে দাঁড়ালো। আর এর সঙ্গে সঙ্গে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বিজয়ের মাসে লেখা হয়ে গেলো আরেকটি ‘ঐতিহাসিক জয়ের আখ্যান’।

দুপুর ১২টা ২মিনিট, ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার; দিনটাকে ঐতিহাসিক না বলে পারা যাচ্ছে না। পদ্মার ওপর এই জয়ের আখ্যান লেখা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ১০ জুলাই। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদিন ‘কার কাছে হাত পেয়ে সহায়তা নয়, নিজস্ব অর্থায়নে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর কত সমালোচনা, গুজব, বাধা বিপত্তি, সর্বগ্রাসী পদ্মাকে বাগে আনার সাফল্যসহ মহাকাব্য রচনা করে আজকের এই সাফল্যের দিনটি এলো।

বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদিন ‘কার কাছে হাত পেয়ে সহায়তা নয়, নিজস্ব অর্থাযনে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন

পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানো শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তিন বছরে বসলো ৪১টি স্প্যান। সবশেষ ৪১ তম স্প্যানটি বসানোকে ঘিরে পদ্মা পাড়ে আজ ছিলো উচ্ছ্বাসের আমেজ। উচ্ছ্বাস তো হবে, তীরবর্তী এসব মানুষের কেউ কেউ বছরের পর বছর পদ্মার কড়ালগ্রাসে হারিয়েছেন সর্বস্ব। আজ তারাই দেখছেন উত্তাল পদ্মাকে হারিয়ে স্থাপন হয়েছে ‘এক জয়ের নিশান’।

তবে পদ্মার পাড়ের মানুষের এ উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। ওইদিন নির্মাণে কাজের উদ্বোধনের পর থেকেই সেতুর নির্মাণ কাজ নিয়ে আগ্রহ উত্তেজনা ছিল মানুষের মধ্যে। সেই থেকে সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছে পদ্মার পাড়সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তো আজকের দিনটা তাদের কাছে শুধু ঐতিহাসিক না, নানা দিক থেকে গুরত্বপূর্ণও বটে!

পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানো শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।

তবে এই সাফল্যের কর্তৃত্ব যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উপর। প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ় অঙ্গীকারের ফলে নানা সমালোচনা ও দুর্গম পথ অতিক্রম করে আজ বিশাল কর্মযজ্ঞের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশ। জয় করেছেন দুর্নীতির অপবাদ ঘুচিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভৌগলিক বিভেদ।

‘পদ্মা সেতু আমাগো গর্বের সেতু। সরকার বিরাট কাম ঘটাইছে। ভাবা যায়না সেতু বাস্তব হচ্ছে। আমরা ১৫ বছর ধরে মাওয়া ঘাটে ফল বিক্রি করি। সেতু হলে হয়ত এখানে থাকতে পারব না। কিন্তু পদ্মা সেতু যে দ্যাশের অহংকার। কত মানুষের উপকার হবে। আমি একটা করে খাওয়ার ধান্দা ঠিক করে নিবোনে। সেতু হওয়াতে বলে বোঝাতে পারবনা কতটা খুশি।’

গোটা দুনিয়াকে জানান দিলো-১৬ কোটি মানুষের দেশটি শুধু স্বপ্ন দেখেই না, মাথা উঁচু করে সেই পূরণ করতেও পারে

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সরজমিনে রিপোর্ট করতে গিয়ে প্রতিবেদকের কাছে এভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করলেন মাওয়া ঘাটের ফল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন। আজকে হয়ত আনোয়ার হোসেনের মতো অনেকের দূর থেকে বিশাল পদ্মার বুকে দুই পার জুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে গর্বে বুকে ছাতিটা বড় হচ্ছে। আচ্ছা এই স্বপ্ন জয় কি শুধুই গর্বের, নাকি দীর্ঘ যাত্রার এই গল্পটা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মাথা আরেকবার উঁচু করলো। গোটা দুনিয়াকে জানান দিলো-১৬ কোটি মানুষের দেশটি শুধু স্বপ্ন দেখেই না, মাথা উঁচু করে সেই পূরণ করতেও পারে।   

পদ্মা সেতুতে স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে যান চলাচল

বর্ষায় প্রবল ঢেউয়ে উত্তাল পদ্মা, গ্রীষ্মে কাল বৈশাখী ঝড়ের চোখ রাঙানি আর শীতে ঘুন কুয়াশা- এর প্রভাবে ফেরি চলাচল বিঘ্ন-বন্ধ; পদ্মা পাড়ি দিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের এসব নিত্য সঙ্গী। উফ! স্বপ্ন সেতু তো হয়েই গেল! বাকি আনুসাঙ্গিক কাজ, অপেক্ষা আর মাত্র এক বছর। সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২১ সালের স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।    

২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। আজকে ৪১ তম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে মিলন ঘটেছে সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত আর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২৯ জেলার সঙ্গে ঢাকার সহজ যোগাযোগের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। আর পদ্মার পাড় ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন ‘ভৌগোলিক বিভেদ’ ঘুচানোর অপেক্ষায় প্রহর গুনবে।

সরকার ঘোষণা দিয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে

দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতুতে এসব স্প্যান বসছে ৪২টি পিয়ার বা খুঁটির ওপর। স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সমীক্ষায় জানানো হয়, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন।

এরইমধ্যে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়নের নানা উদ্যোগ চলছে। সেতু এলাকা ও আশপাশে এরই মধ্যে কলকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে। দেশের অর্থনীতিতেও এই সেতুর প্রভাব হবে উল্লেখযোগ্য। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানও বাড়াবে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের।

মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগিত ৯১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের ৭৫.৫০ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার কাজের শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২.৫০ শতাংশ। রেল ও গাড়ি চলাচলের রাস্তা নির্মাণের অংশ হিসেবে পৃথকভাবে স্লাব বসানোর কাজ জোরগতিতে এগিয়ে চলছে। তাছাড়া সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।

মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগিত ৯১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের ৭৫.৫০ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার কাজের শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে

পদ্মা সেতু প্রকল্পে উভয় তীরে সংযোগ সড়ক ১৪ কিলোমিটার। নদীশাসনের এলাকা ১২ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুতে বসবে দুই হাজার ৯১৭টি সড়ক স্লাব। এরই মধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার ২৮৫টি স্লাব। মাওয়া ও জাজিরার সংযোগ সেতুতে বসাতে হবে ৪৮৪টি সুপারগার্ডার। এর মধ্যে বসানো হয়েছে ৩১০টি। রে ল সড়কের জন্য আলাদা স্লাব বসানো হচ্ছে।

মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হয় ৬.১৫ কিলোমিটার। দুই পারে আরো ৩.১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩০ কিলোমিটার। চার লেনের সেতুর প্রস্থ ৭২ ফুট। সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে যানবাহন সেতুতে ওঠার জন্য এবং সেতু থেকে নামার জন্য দুই দিকে ভাগ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এটি মূলত ভায়াডাক্ট বা ডাঙায় সেতুর অংশ। দুই প্রান্ত মিলিয়ে সেতুর এই অংশের দৈর্ঘ্য ৩.১৫ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান

পদ্ম সেতু বহুমুখী প্রকল্প

পদ্মা সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (সিএমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতু ও নদীশাসনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার উভয় তীরে সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ যৌথভাবে করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচসিএম। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন।

পদ্মা সেতুর সংশোধন করে ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এসে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে মোট খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫.০২ কোটি টাকা। ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বিজয়ের মাসে আরেক বিজয়

পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর কর্মযজ্ঞ চলছে

পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের আদ্যোপান্ত

প্রমত্তা পদ্মার বুকে ‘স্বপ্ন জয়ে আখ্যান’

হয়ে গেলো পদ্মা সেতু!

   

মালয়েশিয়ায় প্রতারিত হওয়া শ্রমিকরা পাচ্ছেন আড়াই কোটি টাকা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাউথ ইস্ট এশিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মালয়েশিয়ার জোহরবারুতে প্রতারিত হওয়া ৭৩৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে তাদের পাওনা বেতন বাবদ আড়াই কোটি টাকার বেশি প্রদান করা হবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে জোহরবারুতে ৭৩৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের খোঁজ মেলে। তাদেরকে প্রায় ৪ মাস ধরে বিনা বেতনে কাজ করানো হচ্ছিল এবং প্রতিশ্রুত কাজও দেয়া হয়নি। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জোহর শ্রম অধিদফতর এই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার জন্য ৪৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।

শ্রম বিভাগ জানিয়েছে মোট অপরিশোধিত বেতনের পরিমাণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৭ বাথ। যা বাংলাদেশি অর্থে আড়াই কোটি টাকারও বেশি।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় শুক্রবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কর্মসংস্থান আইন ১৯৫৫ এর ধারা ৬৯(৪) এর অধীনে জোহর শ্রম অধিদফতর এখন নিয়োগকর্তাকে দায়রা আদালতে এনে শ্রম আদালতের জারি করা আদেশ কার্যকর করবে।

মালিকপক্ষ দোষী সাব্যস্ত হলে, কোম্পানি প্রতিটি অপরাধের জন্য ৫০ হাজার রিঙ্গিত বা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে এবং শ্রমিকদের পাওনা মজুরি নিষ্পত্তি করতে হবে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে চলা মোট ১০টি তদন্তের মধ্যে ৪টিতে মামলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাকি ৬টি অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও কোম্পানিটিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোটা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং নিয়োগকর্তাকে নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, একটি বিশেষ ‘নিয়োগকর্তা পরিবর্তন প্রক্রিয়া’ (পিটিএম) এর মাধ্যমে মোট ৬৯২ জন ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মীকে এরই মধ্যে নতুন কর্মস্থলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

;

সকাল ৯টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা কিছুদিন বৃষ্টিপাতের পর গত ২-৩ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সিলেট বিভাগে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। 

শুক্রবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ১১টা থেকে শনিবার (১৮ মে) সকাল ৯টার মধ্যে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। 

নদীবন্দরের জন্য দেয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়, সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে সন্ধ্যায় দেয়া আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়, সিলেটে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৩, নওগাঁর বদলগাছী ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ২, বগুড়ায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় রংপুরেও সামান্য বৃষ্টি হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। 

এর পরের ২৪ ঘণ্টা ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। 

;

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের আনন্দ শোভাযাত্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে চট্টগ্রামের ওমরগণি এম ই এস কলেজ ছাত্রলীগ।

শুক্রবার (১৭ মে) নগরীর জিইসি মোড় থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে এম.ই.এস কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে যোগ দেয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশে ফিরে আসে তখন থেকে বাঙালি স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টা করে বাঙালির সেই স্বপ্নকে নষ্ট করতে চেয়েছিল খুনিরা। কিন্তু শত বাধা,ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।

'আজকে শেখ হাসিনা মানেই উন্নত বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই তারুণ্যের চোখে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন। ১৯৮১ সালে আজকের দিনে বিদেশের মাটি থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বদেশে এসে খুনি, স্বৈরাচার জিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঘোষণা করেন, আমার হারানোর কিছুই নাই, এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমি লড়াই করবো।'

তারা আরও বলেন, আজ বাংলার মানুষ ভোট এবং ভাতের অধিকার ফিরে পেয়েছে, তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সমুদ্র জয় থেকে মহাকাশ জয় শুধু শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সাহসিকতার জন্য সম্ভব হয়েছে। আজকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমরা এম ই এস কলেজ ছাত্রলীগ ধন্য।

শোভাযাত্রায় কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইমাম উদ্দীন নয়ন, রাকিব হায়দার, নুরুন নবী সাহেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাজ্জাদ হোসেন, রবিউল ইসলাম খুকু, আব্দুর রাজ্জাক, সাজ্জাদ আলম, নুর মোহাম্মাদ সানি, আওরাজ ভূইয়া রওনক, নুরুজ্জামান বাবু, তৌফিক চৌধুরী প্রমুখ।

;

লালমনিরহাটে নির্মিত হলো দেশীয় প্রযুক্তির প্রথম টার্ন টেবিল



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাট রেল বিভাগে ব্রিটিশ আমলের প্রযুক্তি সরিয়ে দেশেই তৈরি হলো প্রথম টার্ন টেবিল। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা লালমনিরহাটে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর টার্ন টেবিলটি প্রায় তিন দশক আগে বিকল হলে তা ব্যবহার বন্ধ করে রেল বিভাগ। তাই ইঞ্জিন বা কোচ ঘোরানোর জন্য ঢাকায় যেতে হত। লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের সিক লাইন এলাকায় প্রস্তুত দেশে তৈরি এ টার্ন টেবিলটি উদ্বোধন হলে সময় ও অর্থ দু'টোই সাশ্রয় হবে রেলওয়ের।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দফতর জানায়, রেলের কোচ বা ইঞ্জিনকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টার্ন টেবিলের ওপর রেখে ঘোরানো হয়। এতে বাঁ দিকের চাকা ডান দিকে, ডান দিকের চাকা বাঁ দিকে চলে যায়। ফলে দুই পাশের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয়। এতে চাকার স্থায়িত্ব বাড়ে ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমে। ব্রিটিশ আমলে তখনকার কর্মকর্তারা যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে লালমনিরহাটে টার্ন টেবিল প্রস্তুত করেন। যা ১৯৯৩ সালে বিকল হয়ে পড়লে ব্যবহার বন্ধ করে রেলওয়ে দফতর।

'এরপর থেকে লালমনিরহাট বিভাগের কোচ ও ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য কোচ ও ইঞ্জিনগুলো কয়েক মাস পর পর ঢাকায় নেয়া হত। যাতে সময় ও অর্থ অপচয় হত। তাই দেশেই টার্ন টেবিল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। লালমনিরহাটে সিক লাইন এলাকায় এটি নির্মাণের জন্য ৯শতক জমি নেয়া হয়। নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া ২৫ লাখ টাকা। বিভাগীয় রেলওয়ে দফতরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামানের (বাবু) নকশা ও প্রযুক্তিতে এ টার্ন টেবিলটি তৈরি হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে আর শেষ হয়েছে গত মার্চ মাসে। খুব শীঘ্রই এটি উদ্বোধন করা হবে।

বিভাগীয় রেলওয়ে দফতরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামানের (বাবু) বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এ টার্ন টেবিলের কার্যকারিতা সফলভাবে যাচাই করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম টার্ন টেবিল। ৩৫০ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম এ টার্ন টেবিলে ১৪ টন ওজনের একটি ব্রিজ রয়েছে। এটি এই যন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ওপরে ইঞ্জিন ও কোচ তুলে ঘোরানো হয়। স্থাপনাটির তিন ধাপে পাকা দেয়াল রয়েছে, যা সীমানা প্রাচীর, সুরক্ষা প্রাচীর ও লাইন দেয়াল নামে পরিচিত। এর মেঝে আরসিসি ঢালাই দেওয়া। এতে পানি জমলে পানির পাম্প দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, টার্ন টেবিলটি নির্মাণে ৩৫০ টন ভার বহনে সক্ষম একটি রোলার থ্রাস্ট বিয়ারিং, আটটি এক্সেল বিয়ারিং, ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমএস লোহার তৈরি এইচবিম, অব্যবহৃত রেললাইন, ট্রেনের অব্যবহৃত চারটি চাকা, এমএস টপ প্লেট, চেকার প্লেট, বলস্টার প্লেট, এমএস অ্যাঙ্গেল ও জিআই পাইপের রেলিং ব্যবহার করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবদুস সালাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প টাকা ব্যয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মিত হয়েছে। এতে অব্যবহৃত লাইন, চাকাসহ অন্য লৌহজাত নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। রেলের কর্মকর্তারা সব সময় নিজেদের মেধা দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। এটি তার উদাহরণ।

;