ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন মমেকের সাবেক ছাত্র

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন ডা. লোটে শেরিং

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন ডা. লোটে শেরিং

 

অন্যরকম এক উচ্ছ্বাসের ঢেউ লেগেছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে (মমেক)। শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক, সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কলেজের সাবেক এক ছাত্র। তবে যাকে নিয়ে আলোচনা তিনি বাংলাদেশের কেউ নন, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া ডা. লোটে শেরিং। তিনি ছিলেন এই কলেজেরই ছাত্র। পড়াশোনা করেছেন মমেক-এর  ২৮তম ব্যাচে।

বিজ্ঞাপন

ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন লোটে শেরিং। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে অভিষিক্ত হলেই তাকে বাংলাদেশে তার স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহে আমন্ত্রণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তার মমেকের বন্ধুরা।

ডা. লোটে শিরিংয়ের ঘনিষ্ট বন্ধু একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা: মো: শফিকুল বারী তুহিন। লোটে শেরিং-এর কথা বলতেই গালভরা হাসিতে তুহিন বলে উঠলেন, ‘বন্ধু লুটে আমাদের নিমন্ত্রণ পেলে না করতে পারবেন না। আরেকটিবার দেখে যাবে তার স্মৃতি বিজড়িত মমেক ক্যম্পাস। কত কথাই না হবে তার সাথে!’

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/20/1537441212293.jpg

এতো শুধু ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের চিত্র। গোটা শহরটিই যেন ডা. লোটে শেরিংকে নিয়ে এক অন্যরকম উত্তেজনায় কাঁপছে। শিক্ষিত শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে এখন একটিই আলাপ। তাদের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক সময়কার ছাত্র কোন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে চলেছেন।

১৯৯১ থেকে ২০০৩, টানা ১২ বছর বাংলাদেশেই কাটিয়েছেন লোটে শেরিং। তারপর দেশে ফিরে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। তার রাজনীতির বয়স খুব বেশি দিন নয়, মাত্র ৫ বছর।

কতটুকু মেধাবী হলে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভুটানের আম-জনতার মন জয় করে নিজেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে নিয়ে যেতে পারেন। লোটে শেরিংকে নিয়ে তার বন্ধু শফিকুল বারী তুহিন আবেগমাখা স্মৃতিচারণ করলেন বার্তা২৪.কমের সঙ্গে।

তিনি জানান, ১৯৯১ সালে লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ২৮ তম ব্যাচে এসে ভর্তি হন। ওই সময় আমরা ছিলাম ১৭৭ জন শিক্ষার্থী। সে (লোটে শেরিং) ছাড়াও মালয়শিয়া, ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশের ১৮-২০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল সেইসময়।

‘তবে বিদেশি সব শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদাই ছিলেন লোটে। ও যেমন সবার সঙ্গে এক চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলতো, আবার পড়াশুনার ক্ষেত্রেও ছিল মনোযোগী।’

‘পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে ময়মনসিংহের দর্শনীয় নানা স্থানেও ঘুরে বেড়াতেন লোটে। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় লুটের অসম্ভব প্রিয় ছিলো। ব্রহ্মপুত্রের তর্জন-গর্জন তাকে আনমনা করতো।’

স্মৃতিকাতর হয়ে ডা. তুহিন বলেন, ‘লোটেকে নিয়ে ১৯৯২ সালের গোড়ার দিকে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমার গ্রামের বাড়ি গফরগাঁওয়ে। সেই সময় সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। ভীষণ উপভোগ্য ছিল সেই ট্রেনভ্রমণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস লোটে আজও ভুলেনি সেই দিনগুলোর কথা।’

ডা. লোটে খেলাধুলাতেও পারদর্শী ছিলেন জানিয়ে ডা. তুহিন বলতে থাকেন, ‘লোটের প্রিয় খেলা ছিল লন টেনিস। এ খেলাটি যারা ভালো খেলতো তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিলো তার।’

লোটে শেরিং-এর আরেক সহপাঠী বর্তমানে মমেক-এর অধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কলেজের  ছাত্র ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এই খবরে আমরা উচ্ছ্বসিত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে আমাদের কলেজে এনে সংবর্ধনা দেব।’

১৯৯৮ সালে এমবিবিএস পাস করার পর লোটে শেরিং বাংলাদেশেই জেনারেল সার্জারি বিষয়ে এফসিপিএস করেন। নিজ দেশে ফিরে গিয়ে যোগ দেন সিভিল সার্জন হিসেবে। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর ২০১৩ সালের দিকে ভুটানের রাজনৈতিক দল ডিএনটি-তে নাম লেখান তিনি।