সিংগাইরে আবাদ কমলেও ফলন বাড়ছে গাজরের



খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
সিংগাইরে আবাদ কমলেও ফলন বাড়ছে গাজরের

সিংগাইরে আবাদ কমলেও ফলন বাড়ছে গাজরের

  • Font increase
  • Font Decrease

গেলো কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আবাদ বাড়লেও চলতি মৌসুমে গাজরের আবাদ কমেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়। তবে আবাদ কমলেও বেড়েছে ফলনের লক্ষমাত্রা। পাইকারি বাজারে চাহিদা ও বাজারদর ভালো থাকায় চলতি মৌসুমে গাজর চাষাবাদে লাভবান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কৃষকেরা।

রাজধানীর সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের বাড়তি নজরও রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার থেকে মধ্যমাচ্যের বিভিন্ন দেশেও সিংগাইর উপজেলার গাজর রফতানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার অধিকাংশ মাটি বেলে-দোঁআশ। গাজর চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত এই মাটি। গাজর চাষাবাদের জন্য আশ্বিন-কার্তিক মাসে জমিতে বীজ বপন করেন কৃষকেরা। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে বিক্রয় উপযোগী হয়ে যায় গাজর।

স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে বিক্রয় উপযোগী হয়ে যাওয়ার আগেই জমি থেকে গাজর ক্রয় করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বাড়তি মুনাফার আশায় অনেক কৃষক আবার নিজ উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে বিক্রি করেন নিজেদের উৎপাদিত গাজর। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত জমি থেকে গাজর সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকেরা।

গাজর প্রক্রিয়া করছেন শ্রমিকরা
গাজর প্রক্রিয়া করছেন শ্রমিকরা। ছবি: বার্তা২৪.কম 

এরপর নির্ধারিত জায়গায় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাজর থেকে মাটি/ময়লা পরিষ্কার করা হয়। সেখান থেকে বস্তায় ভরে চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। গাজর উৎপাদনে কৃষকদের পাশাপাশি ভাগ্যবদল হয়েছে এলাকার কয়েক’শ কৃষি শ্রমিকেরও।

জানা গেছে, প্রতিদিন সাড়ে ৪৫০-৫৫০ টাকা দৈনিক মুজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন এসব কৃষি শ্রমিকেরা। সিংগাইর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার সবজি ব্যবসায়ীদের পদচারনায় এখন মুখোরিত সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশেও সিংগাইর উপজেলার গাজর রফতানি করা হয় বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিংগাইরে এক হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৩৮ হাজার ৫৭১ টন গাজর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ১১০ হেক্টর জমি থেকে সংগ্রহ করা হয় ৪২ হাজার ১৮০ টন গাজর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ১১৭ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদন হয় ৪২ হাজার ৭২৫ টন। চলতি বছরে এক হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে জমি থেকে গাজর উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার টন।

উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের মানিকনগর এলাকার কৃষক আলম মিয়া বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গাজর চাষাবাদে ১৯-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ও বাজারদর স্বাভাবিক থাকলে ওই জমি থেকে ৬৫-৭০ হাজার টাকার গাজর বিক্রি করা যায় অনায়াসে। তবে জমি থেকে সরাসরি পাইকারদের নিকট বিক্রি করলে মুনাফা আরেকটু কম হয়।’

উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের পশ্চিম ভাকুম এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে গাজরের চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও ঢাকার পাইকারদের নিকট সিংগাইরের গাজরের বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া অল্প খরচে মাত্র আড়াই থেকে তিন মাস সময়ের মধ্যে অন্যান্য ফসলের তুলনায় গাজর চাষাবাদে মুনাফাও বেশি।’

উপজেলার জয়মন্টপ এলাকায় আলাপ হলে ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সিংগাইরের গাজরের প্রতি পাইকারদের নজর বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার থেকে সিংগাইর উপজেলার গাজর মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। সবমিলিয়ে গাজর চাষাবাদে কৃষকদের সাথে পাইকারেরাও বেশ লাভবান হন।’

শ্রমিক আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘জমি থেকে গাজর উঠানো এবং পরিষ্কার করার কাজ করি। গাজর উঠানো এবং পরিষ্কারের কাজে কষ্ট বেশি বলে পারিশ্রমিকও বেশি।’

সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. টিপু সুলতান স্বপন বলেন, ‘গাজর চাষাবাদের জন্য জাপানের অরেঞ্জ কিং জাতের বীজ নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করে বপন করেন স্থানীয় কৃষকেরা। এক বিঘা জমিতে স্বাভাবিকভাবে ১৫০-১৬০ মণ গাজরের ফলন পাওয়া যায়। তবে ফলন ভালো হলে ২২০-২৩০ মণ গাজরও পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যার কারণে সিংগাইরে গাজর আবাদের পরিমান কিছুটা কমেছে। এছাড়াও পেঁপে চাষাবাদের জমি বাড়ছে। তবে গাজর আবাদের জমি কমলেও চলতি মৌসুমে ৪৩ হাজার টন গাজর উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

   

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নওগাঁর সাহাগোলার ‘মটকা চা’



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ আত্রাই উপজেলার সাহাগোলার মোড় স্টেশন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মটকা চা’। দুধ, চিনি ও বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে তৈরি এ চা খেতে প্রতিদিন স্টেশনে ভিড় করেন চা-প্রেমীরা। মাটির ছোট্ট হাড়িতে পরিবেশন করা হয় এই মটকা চা।

সরেজমিনে শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে সাহাগোলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মাটির তৈরি ছোট্ট পাতিল প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে জ্বলন্ত চুলায় গরম করা হচ্ছে, এবং উত্তপ্ত গরম হয়ে গেলে সেটিকে আবার নামিয়ে ভেতরে দুধ ঢালা হচ্ছে, এরপর বিভিন্ন ধরনের মসলা ও শেষে দেওয়া হচ্ছে দুধের সর। এভাবেই পরিবেশন করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের মসলা দিয়ে তৈরি মটকা চা।

জানা গেছে, দেশে প্রথম মটকা চায়ের আবির্ভাব ঘটে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ‘মটকা চা এবং মোমো’ ক্যাফেতে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এটির যাত্রা শুরু হয়। মাটির পেয়ালায় পরিবেশন করা হয় এই মটকা চা। এই চায়ের মূল আকর্ষণ হলো মাটির পেয়ালা। ভিন্নধর্মী স্বাদের এই চা পান করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে যেতেন চা-প্রেমীরা। তবে এখন এই মটকা চায়ের বিস্তার দেশের অনেক প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। চায়ে নিজস্ব অনেক ইতিহাস থাকলেও মটকা চায়ের স্পষ্ট কোনো ইতিহাস অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই মটকা চা প্রথমে রাজস্থান থেকে এসেছে। ভারতে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ মটকায় চা পান করে। ভারতের মটকা চা ব্যাপক জনপ্রিয়। মূলত উৎপত্তিস্থল ভারতে।

মটকা চা খেতে আসা ছামিউল (২৮) বলেন, আমার বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলায়। শুনেছি সাহাগোলার মটকা চায়ের অনেক স্বাদ তাই কয়েক বন্ধু মিলে আজকে খেতে চলে এসেছি। চায়ের পাশাপাশি এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর। তবে স্থায়ী জায়গা যদি করা যেত তাহলে আরও দূর থেকে মানুষজন এসে নিরাপদে খেতে পারতো।


আফরিন বলেন, আজকেই প্রথম এসেছি এখানে। জায়গাটা অনেক সুন্দর, আর পাশেই রেল-স্টেশন আছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। মটকা চা আমি আগেও খেয়েছি, তবে এটির আলাদা মজা পেলাম খেয়ে। আবারো আসবো খেতে।

খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেক ভিড় এবং দোকানিও অনেক। আমার কাছে পরিবেশ ভালো লেগেছে, তবে চায়ের মান আরও উন্নতি করা দরকার।

এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আকমল বলেন, আমাদের এখানে এতো লোকসমাগম হতো না, কিন্তু যখন থেকে মটকা চা আর মালাই চা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই এলাকাটা বেশ পরিচিত হয়ে গেছে। আমাদেরও ভালো লাগে, যখন দেখি দূর থেকে মানুষ চা খেতে আসে।

দোকানী আতাউল ইসলাম বলেন, প্রায় ২ বছর আগে সাহাগোলায় সর্বপ্রথম মটকা চা আমি বানানো শুরু করি। এখন ১৫টির অধিক দোকান আছে সেগুলো তখন ছিল না। আমরা সব সময় চেষ্টা করি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চা পরিবেশন করতে। ভালো লাগে বলেই অনেক দূর থেকে মানুষ এসে আমাদের চা খায়।

আরেক দোকানি রনি বলেন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার বেশি ভিড় হয় এবং বিক্রি ভালো হয় বিধায় লাভও থাকে। এটি আমি ১ বছর ধরে বিক্রি করি। আতাউল ভাই শুরু করেছিল। লাভ মোটামুটি ভালোই হচ্ছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সাহাগোলা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে, যেহেতু অনেক লোকজন আসেন। এখানে শুধুমাত্র চা বিক্রি হচ্ছে না, পাশাপাশি দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন বেড়াতেও আসছেন। এটা নিয়ে আমরা ভাবছি।

;

শাহ আমানত বিমানবন্দর

যাত্রীদের সামনে অপেক্ষা করে ‘আকাশ সমান’ হয়রানি!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
লাগেজ সংগ্রহ করতে এসে যাত্রী দেখেন তার ৭৪ হাজার টাকার মালামাল হাওয়া

লাগেজ সংগ্রহ করতে এসে যাত্রী দেখেন তার ৭৪ হাজার টাকার মালামাল হাওয়া

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ আরমান থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরবেন। সেজন্য আত্মীয়-স্বজনের জন্য নামিদামী উপহারসামগ্রী নেন প্রবাসী এই ব্যবসায়ী। দেশে আসার দুই সপ্তাহ আগেই এসব মালামাল বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইনসের একটি ফ্লাইটে পাঠিয়ে দেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আর তিনি ফেরেন ৩ মার্চ। এরপর ৪ মার্চ বিমানবন্দরে নিজের পাঠানো লাগেজ সংগ্রহ করতে হাজির হন এই সৌদি প্রবাসী।

অতিরিক্ত মালামাল বহনের ভাড়া এবং শুল্কযুক্ত পণ্য আনায় আরমানকে দিতে হয় অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকাও। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শাখায় টাকা জমা দেওয়া শেষে লাগেজ বুঝে নিতেই চোখ কপালে ওঠে আরমানের। কারণ তার লাগেজ কাটা-ছেঁড়া! পরে দেখেন তার লাগেজ থেকে ৭৪ হাজার টাকার ৭ কেজি মালামাল হাওয়া। পরে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেও পাননি কোনো সদুত্তর।

দৃশ্যপট-২. চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সকালে এই বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইট এফ জেড-৫৬৪-যোগে দুবাই যাওয়ার পথে ৮ যাত্রীকে (সকাল ৬টা থেকে ১০ টার মধ্যে) আটকে দেন সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে নানান অজুহাত দেখিয়ে এই যাত্রীদের কাছে থাকা ৫ হাজার ৮০০ বাংলাদেশি টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। সেদিন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার সময় কয়েকজন যাত্রী তাকে বিষয়টি জানান। তবে টাকা ফেরত পাননি এই যাত্রীরা। বিষয়টি পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানায় ফ্লাই দুবাই।

দৃশ্যপট-৩: গত বছরের ৬ নভেম্বর ঘুষের টাকা না পেয়ে বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসআই রাজীবের নেতৃত্বে নুরুল আমিন নামের এক সৌদি আরবগামী যাত্রীকে বিমানবন্দরের একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ সময় তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। এই কারণে তিনি ওইদিন তার ফ্লাইটে বিদেশ যেতেও পারেননি। অবশ্য ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে এপিবিএনের দুই সদস্যকে প্রত্যাহার করে দায় সারা হয়।

এভাবেই চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর যেন যাত্রীদের কাছে দিন দিন হয়ে উঠেছে বিভীষিকাময়। এই বিমানবন্দর দিয়ে ভ্রমণ করেছেন, আর ভোগান্তিতে পড়েননি-এমন যাত্রী যেন পাওয়া যাবে খুব কমই। অথচ এটি কিনা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর, যেদি দেশের প্রায় ২১ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন। গত এক বছরে এই বিমানবন্দর দিয়ে ভ্রমণ করেছেন ১৬ লাখ যাত্রী। আর এতে রাজস্ব আয়ও হয়েছে বিপুল পরিমাণ, ২২৫ কোটি টাকা। কিন্তু যে যাত্রীদের কল্যাণে এত এত আয়-সেই তারাই যেন এখানে হয়ে পড়েন ‘অবহেলার পাত্র’! গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনেও এই বিমানবন্দরের নানা অনিয়ম, যাত্রীদের হয়রানির চিত্র উঠে আসে।

এই বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাত্রীরা এই হয়রানি-দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চেয়েছেন। গত ৮ মে বিমানবন্দরে আয়োজিত বিমানবন্দরে সেবার মান উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে নানা অভিযোগ তুলে ধরে দ্রুত এসব থেকে পরিত্রাণ চান তারা।

কী আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে:

গত ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির সবিস্তার তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বেবিচক অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (অ্যাভসেক) শাখার দুর্নীতি নিয়ে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ভৌত নিরাপত্তা নিশ্চিতে অ্যাভসেক শাখার নিজস্ব সিকিউরিটি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে অ্যাভসেক শাখার সদস্যরা বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশের নামে টাকা নেওয়া, স্বর্ণ ও ইয়াবা চোরাচালান, হুন্ডি পাচার, বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের কর্ণধার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল দেওয়ার নামে অর্থ আদায়সহ নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েছেন। অ্যাভসেক শাখার সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের প্রশ্রয়ে এসব অনিয়ম করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

বেবিচকের এস্টেট শাখার দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের এস্টেট শাখার সাবেক শাখাপ্রধান মো. মশিউর রহমানের দায়িত্বকালীন এই শাখায় সাতটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়। বিমানবন্দর টার্মিনালের কোনো স্পেসের ইজারা নিতে বা নবায়ন করতে ঘুষ নেওয়া, ইজারাপ্রাপ্তদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর নির্মাণকালে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বরাদ্দ করা প্লটের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় ঘুষ বাণিজ্য, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মতো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন মশিউর রহমান। তাকে ঢাকা বিমানবন্দরে বদলি করা হলেও তার সহযোগীরা এখনো একই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া এস্টেট শাখার বর্তমান সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল বিভিন্নভাবে ঘুষ নিচ্ছেন।

বেবিচক ইএম শাখার দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, ইএম শাখা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ করে। ইএম শাখার সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আজিম উদ্দীন এবং মো. আশরাফুল হোসেন শাহিন শাখার কাজে টেন্ডারে কাজ পাওয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত ঘুষ নেন। এ ছাড়া এই শাখার মেকানিকস দেবপ্রিয় সিংহ, সহকারী মেকানিকস মো. ইউনুস, ওয়্যারম্যান মো. আবদুল কাদের, হেলপার মো. ফিরোজ, অফিস সহায়ক ওসমানের সহায়তায় এ শাখায় অনিয়ম-দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে।

বেবিচক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার দুর্নীতিও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী আবদুল আলিম বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি বিমানবন্দরে যেকোনো উন্নয়ন কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন।

আনসারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর টার্মিনালের আগমন/বহির্গমনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অন্তত ২০০ আনসার সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে এরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেশি জড়িত। যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশ আদায় করেন তারা। কোনো কোনো সময় বিমানবন্দরের ড্রাইভওয়েতে প্রবেশের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। এসব বকশিশের টাকার অংশ শাখার ইনচার্জও পেয়ে থাকেন।

এপিবিএনের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এপিবিএনের সদস্যরা বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মূল্যবান মালামাল আত্মসাৎ করা হয়।

এছাড়া কাস্টম এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের দুর্নীতিও তুলে ধরা হয়।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। পাশাপাশি যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করতে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিএ-১ অধিশাখা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২৩ নভেম্বর বেবিচককে নির্দেশ দেয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর বেবিচকের বোর্ড সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান খান চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে খাতওয়ারি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা বেবিচককে অবহিত করার জন্য গত ২৬ নভেম্বর নির্দেশনা দেন।

হয়রানির শিকার যাত্রীদের বক্তব্য:

বাড়তি অর্থ দেওয়ার পরও নিজের লাগেজটা ঠিকঠাক না পাওয়ার দুঃখ এখনো পোড়ায় সৌদি আরব প্রবাসী মোহাম্মদ আরমানকে। আফসোস নিয়ে বললেন, ‘কর্মকর্তাদের সামনেই লাগেজ মেপে দেখা যায় ৭ কেজি মালামাল কম ছিল। বাংলাদেশি টাকায় ৭৪ হাজার মালামাল চুরি হয়ে যায়। অথচ লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলেও কেউই আর এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরে কোনো উপায় না পেয়ে আমি বাড়ি চলে আসি। আত্মীয়দের জন্য শখ করে কেনা মালামালগুলো আর তাদেরও দেওয়া হলো না।’

যদিওবা লাগেজে কাটা থাকলেও সেটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে হয়নি বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের হারানো ও প্রাপ্তি শাখায় কর্মরত মোহাম্মদ ইকবাল খসরু।

তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ লাগেজ কাটার ঘটনা যে দেশ থেকে আসে ওই দেশে হয়ে থাকে। কেননা ইলেক্ট্রনিক পণ্য থাকলে তা স্ক্যানে আটকে যায়। তখন ওই দেশের এয়ারপোর্টেই তা কেটে রেখে দেওয়া হয়। এখানে কাটার সুযোগ নেই। কেননা বিমানবন্দরের সবখানেই ক্যামেরা আছে।’

আরেক সৌদি আরব প্রবাসী নুরুল আমিন তো এপিবিএনের সদস্যদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো আৎকে উঠেন। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়।

নুরুল আমিন বলেন, ‘ওইদিন বিকেল ৫টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে যাই। গাড়ি পার্কিং নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হলে এপিবিএনের এক এএসআইয়ের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। কাছ থেকে বাঁচতে চিৎকার শুরু করলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা অন্য কক্ষে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। সেই কারণে আমার ফ্লাইটও মিস হয়।’

এই বছরের ৬ জানুয়ারি যে আটজন যাত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক বাংলাদেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাদের একজন হাফেজ মো. খায়রুল বাশার। তার কাছ থেকে সেদিন এক হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বলে বাংলাদেশি টাকা যা আছে দিয়ে দেন। প্রতিবাদ করলে নানা নিয়মের ভয় দেখান। বাধ্য হয়ে টাকাটা দিয়ে দিই।’

এই বিমানবন্দর দিয়ে বহুবার আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আসা-যাওয়া করেছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির বাসিন্দা সাইদুল হক। দুবাই-প্রবাসী সাইদুল বলেন, ‘কয়েক বছর পর পর দেশে আসতে পারি। দেশে যাওয়া যে কোনো প্রবাসীর কাছেই আনন্দের। কিন্তু আমাদের সেই আনন্দ মাটি হয়ে যায় শাহ আমানত বিমানবন্দরে এলে। এখানে যেন আমাদের সামনে আকাশ সমান ভোগান্তি অপেক্ষা করে। লাগেজ টানাটানি, লাগেজ থেকে মালামাল চুরি, নানা অজুহাত ও ভয় দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ঘুষ না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হয়রানি-কোনো কিছুই যেন বাকি থাকে না।’

ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইনও যাত্রীদের হয়রানি-দুর্ভোগের বিষয়ে সোচ্চার। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের যেসব ভাই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকেন, দেশে রেমিটেন্স পাঠান-তাদের বেশি হয়রানি হতে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একটা মানুষ রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে কষ্ট করে দেশে রেমিটেন্স পাঠান, আর তাকে কোথায় বিমানবন্দরে একটু আতিথিয়েতা দেওয়া হবে উল্টো পদে পদে হয়রানি আর ভোগান্তি উপহার দেওয়া হয়। বিমানবন্দর হলো সেবা সংস্থা। সেখানে কেন যাত্রীকে দুর্ভোগে পড়তে হবে?’

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ:

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিবেদনের পর শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তপক্ষ নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। প্রতিবেদন পাঠানো নিয়ে তখন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানিয়েছিলেন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য সংস্থার অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া চুরি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আনসারদের ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’

সম্প্রতি হওয়া গণশুনানিতে যাত্রীদের অভিযোগ দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তাসলিম আহমেদ। জানান ছয় মাস পর পর আনসার সদস্যদের বদলি করা হয়। অন্যায় করলে সাজাও দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে যাত্রীদর সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান বিমানবন্দরের এই পরিচালক। বলেন, ‘যাত্রীদেরও কিছু অসচেতনা রয়েছে। আমি প্রায় সময় সিসি ক্যামরা দেখি। সেখানে দেখতে পেয়েছি কিছু যাত্রী দুহাতে টাকা ছিটাচ্ছেন। এর সুযোগ নেয় কেউ কেউ। এসব থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

;

ট্রাক খাদে পড়ে দুই ধান কাটা শ্রমিক নিহত, আহত ১০



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরার তালায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক খাদে পড়ে দুই ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন শ্রমিক।

শনিবার (১৮ মে) ভোরে সাতক্ষীরার তালা-পাইকগাছা সড়কের হরিশচন্দ্রকাটি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, খুলনার কয়রা উপজেলার বগা গ্রামের তালেব গাজীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩৮) ও একই উপজেলার মাদারবাড়ীয়া গ্রামের তোফাজ্জল সরদারের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩০)।

আহত শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম জানান, তারা গোপালগঞ্জে ধান কাটতে গিয়েছিলেন। কাজ শেষে পারিশ্রমিক হিসেবে পাওয়া ধান নিয়ে ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথিমধ্যে হরিশচন্দ্রকাটি এলাকায় পৌঁছে ট্রাকটি উল্টে যায়। এতে ধানের বস্তা চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, সড়কের দুই ধারে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য খুঁড়ে রাখায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তালা থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

;

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ১৭



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ। মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ছয়টা থেকে শনিবার (১৮ মে) সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ তাদেরকে আটক করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯৪ পিস ইয়াবা, ২০ গ্রাম হেরোইন, ৬ কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা ও ৮ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জা‌নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

ডিএমপির নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অ‌ভিযান প‌রিচালনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৪টি মামলা রুজু হয়েছে বলেও জানানো হয়।

;