গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে হামলায় তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীরা জড়িত দাবি করে তাঁদের গ্রেফতার, বিচার ও নিষিদ্ধ করার দাবিতে আগামী ১০ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শুরায়ি নেজাম বা বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা।
একই সঙ্গে যদি তাঁদের এসব দাবি মানা না হয় তবে ২৫ জানুয়ারি দেশের সকল পর্যায়ের ‘প্রতিনিধিত্বশীল আলেমদের’ নিয়ে সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইল মারকাজ মসজিদে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ এবং দাওয়াত ও তাবলীগের সাথীবৃন্দ আয়োজিত 'গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে সাদপন্থী কর্তৃক টঙ্গী ময়দানে অতর্কিত হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবী এবং দাওয়াত ও তাবলীগের চলমান ইস্যুতে' এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন জোবায়েরপন্থী হিসেবে পরিচিত মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী।
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এর আগেও সাদপন্থীরা হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দাবি করে নাজমুল হাসান কাসেমী বলেন, ২০১৮ সালেও টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার বিচার হলে, ২০২৪ এর ডিসেম্বরে হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটতো না। এবারও যদি হামলাকারীরা ছাড় পেয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে আবারও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাদপন্থীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ‘অপশক্তির যোগসাজশ’ আছে দাবি করে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নাজমুল হাসান কাসেমী।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত। এর এক ভাগে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা, অন্য ভাগে শুরায়ি নেজাম বা বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা। ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ইজতেমা ময়দানে জোবায়েরপন্থীদের সঙ্গে সাদপন্থীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাদ কান্ধলভির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক শ জনকে আসামি করে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন জোবায়েরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এস এম আলম নামের এক ব্যক্তি। এ মামলায় ১৯ ডিসেম্বর রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানার মুফতি মুয়াজ বিন নূরকে রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসা থেকে গ্রেফতারর করে পুলিশ। এদিকে টঙ্গীতে হামলা ও হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন সাদপন্থীরা। পাশাপাশি মুয়াজ বিন নূরের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন তাঁরা।
তাবলিগ জামাতের একটি পক্ষ জোবায়েরপন্থীদের সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত ও খেলাফত মজলিসের নেতাদের উপস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, এখানে তাঁরা হেফাজতের নেতা হিসেবে নয়, আলেম-ওলামা হিসেবে এসেছেন। তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম যদি ইসলাম ধর্মের কাজ হয়ে থাকে, তবে কোরআন ও সুন্নাহর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আলেমরাই দেবেন। তাবলিগের দুই পক্ষের সমস্যা সমাধানে আলেমেরা মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছেন। সরকারও চেষ্টা করছেন।
মামুনুল হক বলেন, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। হামলা ও হত্যার শাস্তি হওয়া উচিত। তাবলিগের কাজ নিয়ে ভারতের একজন ব্যক্তির বিতর্কিত মন্তব্যে সে দেশে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের এই সমস্যা যেন বাংলাদেশে টেনে আনা না হয়। এখন বাংলাদেশে সবাই মিলেমিশে কাজ করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে যারা হত্যায় জড়িত তাঁদের বিচার হতেই হবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার বিচারের জায়গায় আর আলোচনা আলোচনার জায়গায়।
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে প্রথম পর্বের ইজতেমা ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, প্রথম পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠানের কাজ চলমান আছে। এটি যথাসময়ে হবে। তবে ১৭ ডিসেম্বরের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে দাবি করে মামুনুল হক বলেন, সাদপন্থীরা ইজতেমা অনুষ্ঠানের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামির আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা খলিল আহমদ কোরাইশী, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুর হক।