মিলছে না ভিক্ষা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারের মানবেতর জীবন
একে তো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তার ওপর বয়সের কারণে শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম। স্ত্রীর সহযোগিতায় চলতে হয় তাকে। অন্ধ ভিক্ষুকের ভিক্ষার আয়ে চলে দুই প্রতিবন্ধীসহ ৬ সদস্যের সংসার। ভিক্ষা থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে চলত তাদের জীবন। কিন্তু গত তিন দিন ধরে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে পরিবারটি। ভিক্ষা করতে না পারায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
পরিবারের তিন প্রতিবন্ধীই সরকারি ভাতা পাওয়ায় আর কোন অনুদান তাদের ভাগ্যে জোটে না। তিনমাস পরপর ২২ শত টাকা করে ভাতা পান জনপ্রতি। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের প্রতিমাসে চিকিৎসা বাবদ জনপ্রতি প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা লাগে। ফলে ভাতার অর্থেই তাদের জীবন চলে না। বেঁচে থাকার তাগিদে মাঝে মাঝে পরিবারের সবাইকে ভিক্ষা করতে হয়।
শুক্রবার(১৬ এপ্রিল) বিকালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমত চর গ্রামের বাসিন্দা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুক নামে পরিচিত মোন্নাফ আলীর(৫৮) সঙ্গে কথা হয়।
তিনি জানান, তিনিসহ পরিবারের তিন প্রতিবন্ধীই সরকারি ভাতা পাওয়ায় আর কোন অনুদান তাদের ভাগ্যে জোটে না। তিনমাস পর পর ২২ শত টাকা করে ভাতা পান জনপ্রতি। কিন্তু তিনিসহ তার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই ছেলে-মেয়ের প্রতিমাসে চিকিৎসা বাবদ জনপ্রতি প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ লাগে। ফলে শুধু সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থেই তাদের জীবন চলছে না। পাঁচ শতাংশ বসত ভিটা ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এই জমি টুকু থাকায় সরকারি ঘরও তাদের কপালে জোটেনি বলে আক্ষেপ করেন মোন্নাফ আলী।
তিনি আরো জানান, গত কয়েক দিন ধরে অলস সময় পার করছেন। প্রতিদিনেই তাকে ভিক্ষা করতে হয়। একদিন ভিক্ষা না করলে অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হয় পরিবারের ৬ সদস্যকে। ফলে নিত্যদিনেই ভিক্ষা করতে হয় তাকে। একাই চলার সামর্থ না থাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা করেন। মাঝে মাঝে বেশি ভিক্ষার আশায় মোন্নাফ আলী তার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষায় বেরিয়ে পড়েন। লকডাউনের প্রথম দিনে পীরগাছা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে অধিকাংশ দোকানপাঠ বন্ধ থাকায় তেমন আয় হয়নি। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন। ভিক্ষা করতে না পাড়ায় স্ত্রী ও ৪ সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
ক্ষুধার যন্ত্রণায় অন্ধ দুই সন্তানসহ স্ত্রী ও শারীরিকভাবে অসুস্থ্য সন্তানরা মোন্নাফ আলীকে ভিক্ষার জন্য বাইরে বের হতে কাকুতি মিনতি করেন। কিন্তু বাইরে তেমন লোকজন নেই এবং আইনশৃঙ্খলার ভয়ে বাইরে বের হতে পারছেন না অন্ধ মোন্নাফ আলী। এছাড়া তার শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পরায় বেশি সময় হাঁটতেও পারেন না তিনি।
বর্তমানে তার সংসারে স্ত্রী অমিলা বেগম, চার সন্তান রবিউল ইসলাম (২৬), আমেনা (১৬), জামেলা (১৫) ও রেজাউল(১২)।
এদের মধ্যে জন্মান্ধ আমিনা ও রেজাউল বলেন, বাবা তো হাঁটতে পারে না। তাই আমরাও মাঝে মাঝে বাবার সাথে ভিক্ষা করতে যাই। অনেক সময় আমরা না খেয়ে থাকি। কেউ আমাদেরকে সহযোগিতা করে না।
মোন্নাফ আলীর স্ত্রী অমিলা বেগম বলেন, অন্ধ স্বামীকে নিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে ভিক্ষা করতাম। স্বামীর সামান্য ভিক্ষায় আয়ে খেয়ে-পড়ে চলছিল সংসার। কিন্তু করোনায় লকডাউনে বাড়িতে বসেই আছি দু'জনই। কয়েক দিন ধরে ঘরে খাবার না থাকায় অর্ধাহারে আনাহারে থাকতে হচ্ছে।
পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহেব উদ্দিন জানান, ওই পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তাই তাদেরকে আর অন্য কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।