রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: এখনো আতঙ্ক কাটেনি আহত দম্পতির

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: এখনো আতঙ্ক কাটেনি আহত দম্পতির

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: এখনো আতঙ্ক কাটেনি আহত দম্পতির

জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু বেদনাবিধুর স্মৃতি, যা কখনই মুছে ফেলা যায় না। আট বছর আগের এইদিনে সাভারের রানা প্লাজা হয়ে উঠেছিলো দুঃখ-বেদনার এক শোকগাঁথা। এ প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাণে উদ্ধার হয়েছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম নামের এই দম্পতি। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনো কাটেনি এ দম্পতির।

সরেজমিনে শনিবার (২৪ এপ্রিল) উপজেলার দামোদপুর ইউনিয়নের দামোদরপুর (বুড়িরভিটা) গ্রামের বাসিন্দা ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত দম্পতি জিয়াউর ও মনিফা জানালেন সেই ট্র্যাজেডির এক বেদনা বিজড়িত ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ওই গ্রামের জিয়াউর রহমান তার স্ত্রী মনিফা বেগমকে নিয়ে দরিদ্রতার কষাঘাতে জীবনযাপন করছিলেন। বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলেন তারা। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে নানাভাবে স্বপ্ন দেখেন তারা। একপর্যায়ে উভয়ের সম্মতিতে দুজনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকার সাভার এলাকায়। এ এলাকার রানা প্লাজা নামক বহুতল ভবনের গার্মেন্টসে চাকুরি নেয় স্বামী-স্ত্রী দুজনে। ভবনটির তৃতীয় তলার সুইং সেকশনের এ-লাইনে হেলপার হিসেবে কাজ করছিলেন মনিফা বেগম। একই তলায় ফিনিসং সেকশনে প্যাকিংম্যানে কর্মরত স্বামী জিউয়ার রহমানও। সেখানে বেশ কয়েকমাস চাকুরি করার পর ঘটে যায় ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ঘটনা।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল পৌনে নয়টার দিকে রানা প্লাজাটি ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। সেইদিনর এ ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন তার মাকে, কেউ তার বাবা, কেউ তার ভাই, কেউ বোন, কেউ তার স্ত্রী, কেউ আবার স্বামীকে। আর ইট-কংক্রিটের ধ্বংস্তুপের চিপায় আটকা পড়ছিলেন হাজার হাজার শ্রমিক। তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী মনিফা বেগমও আটকা পড়ছিলেন। আর ইট-খোয়ার আঘাতে মাথা ফেঁটে যায় জিউয়ার রহমানের। তখন ধসে পড়া ছাদের ফাঁকে কোনোমতে শুয়ে ছিলেন তারা। সেখানে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। যেন বুকের উপরে লেগে রয়েছে ছাদটি। সকাল থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত এক অন্ধকার অবস্থায় শুয়ে থাকতে হয়েছে তাদেরকে। জীবন বাঁচাতে কোনদিকে যাবেন, এমন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে উদ্ধার কর্মীদলের এক লোকের আওয়াজ শুনতে পান। কর্মীর কথামতে শুয়ে শুয়ে এগুতে থাকে জিউয়ার ও মনিফা। এরপর একটা ফাঁকা যায়গার ভেতর দিয়ে হাত উঠিয়ে দেয় তারা। এরমধ্যে উদ্ধার কর্মীরা তাদেরকে টেনে উপরে উঠায়। এভাবে প্রাণে বেঁচে যায় আহত দম্পতি জিয়াউর ও মনিফা।

এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেদে ফেলছিলেন। তারা বলেন, যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা। ভয়াবহ ওই ধ্বংসস্তুপের বেঁচে থাকা এক আশ্চর্য ব্যাপার। সয়ং আল্লাহপাক ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব হয়নি। সেই ঘটনার আট বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কাটেনি তাদের আতঙ্ক।