যত দোষ, সাংবাদিক ঘোষ!
অনেকের কাছে মনে হতে পারে, সাংবাদিকদের বুঝি অনেক ক্ষমতা। তারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকেন। সেই উত্তাপে বুঝি তারাও ক্ষমতাবান হন। সাধারণ মানুষের কাছে যারা দূর আকাশের তারা, সাংবাদিকদের কাছে তারাই নিত্যদিনের খবরের উৎস। যারা ক্রীড়া সাংবাদিকতা করেন, তাদের কাছে সাকিব-তামিম-মাশরাফি প্রতিদিনের সোর্স। যারা সিনে সাংবাদিক শাকিব-মাহির সাথে তাদের নিত্যদিনের আড্ডা। রাজনৈতিক রিপোর্টারদের কাছে মন্ত্রী-এমপি ডালভাত। ক্রাইম রিপোর্টারদের কাজই পুলিশের সাথে। সাংবাদিকতাকে যারা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে, তারা অবশ্যই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার সুবাদে নিজেরাও ক্ষমতার অপব্যবহার করে। বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তবে এটাও সত্যি বেশিরভাগ সাংবাদিকই সততার সাথে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত কয়েকবছরে আমার মনে হয়েছে, দেশের যা কিছু খারাপ কাজ হচ্ছে, সব দায় বুঝি সাংবাদিকদেরই। যত দোষ, সাংবাদিক ঘোষ। আমার আরেকটা উপলব্ধি হলো, সাংবাদিকরাই সবচেয়ে নিরীহ। তাদের ইচ্ছামত গালি দেয়া যায়। রাজনীতিবিদদের গালি দিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয় আছে। পুলিশকে গালি দিলে কোন মামলায় আপনাকে ফাঁসাবে ঠিক নেই। ডাক্তারদের গালি দিলে সব ডাক্তার মিলে আপনার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করবে। কিন্তু সাংবাদিকদের মনের সুখে গালি দিন, কেউ আপনাদের কিছু বলবে না। নিজের যত অপ্রাপ্তি, অক্ষমতা, রাগ, ক্ষোভ, ঝাল- সব মিটিয়ে সাংবাদিকদের গালি দিন। তারা কিচ্ছুটি বলবে না। ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা সব ঠিকঠাক হচ্ছে, এমন অলীক দাবি আমি করবো না। কর্পোরেট পূঁজি সাংবাদিকদের স্বতস্ফুর্ততা, নীতি-নৈতিকতার অনেকটুকুই কেড়ে নিয়েছে। এই পতনটা হঠাৎ করে আজকে হয়নি। গত তিনদশক ধরেই গণমাধ্যমে পূঁজির নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। সাংবাদিকদের স্বচ্ছলতা যত বেড়েছে, সাংবাদিকতার মান তত কমেছে। এখন হঠাৎ করে চাইলেই সেই মান আবার আকাশে তুলে ফেলা যাবে না। পতনটা যত সহজ, টেনে তোলাটা ততটাই কঠিন। গণমাধ্যমকে পূঁজির বিষমুক্ত করবেন তেমন ওঝা কই? গরল ফেলে যে আপনি অমৃত নেবেন, সেটা পাবেন কই? লাগিয়েছেন মাকাল গাছ, দিনের পর দিন পরিচর্যা করেছেন; এখন সেই গাছে সুমিষ্ট আম চাইলে তো হবে না। তবে চারদিকে যেমন গেল গেল রব উঠেছে, আমি ততটা হতাশ নই। গোটা দেশ যেভাবে চলছে, সেই তুলনায় সাংবাদিকতা অনেক ভালোভাবেই চলছে। আপনি ঘুষ, খাবেন, দুর্নীতি করবেন, টাকা পাচার করবেন, লুট করবেন, রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বিল্ডিং বানাবেন, ঋণ নিয়ে ফেরত দেবেন না আর আশা করবেন সাংবাদিকরা চটি পায়ে ঝোলা কাঁধে নিয়ে ঘুরবে? ভাই সাংবাদিকরা তো এলিয়েন নয়, তারা তো এই সমাজেরই অংশ। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি আর অনৈতিকতা বাসা বেধে থাকলে সাংবাদিকদের উচ্চ নৈতিকতা আসবে কোত্থেকে? এত কিছুর মধ্যেও সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি এমন অনেক অনেক সাংবাদিকদের চিনি, বেতনের টাকায় সংসার চালাতে যাদের হিমশিম খেতে হয়। অনেক গণমাধ্যমে আবার নিয়মিত বেতন হয় না। তখন হিমশিম খেয়েও পেট ভরে না। তবে আমি বুঝি সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাই পান থেকে চুন খসলেই সবাই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। নির্বাচন দিনে না হয়ে রাতে হয় কেন? সাংবাদিকদের দোষ। ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুট হয় কেন? সাংবাদিকদের দোষ। নারীরা ধর্ষিত হয় কেন? সাংবাদিকদের দোষ? পুলিশ আসামি ধরে না কেন? সাংবাদিকদের দোষ। কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করে কেন? সাংবাদিকদের দোষ। আসলে সাংবাদিকদের দোষের কোনো শেষ নেই। সবার কথা শুনে মনে হয়, সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করে না বলেই সমাজের এই অবস্থা। বিপ্লবী ভাইয়েরা, সাংবাদিকদের কাজ প্রতিবাদ করা নয়। সাংবাদিকদের কাজ বস্তুনিষ্ঠভাবে সত্য তথ্য তুলে ধরা। সমাজের অসঙ্গতি, দুর্নীতি প্রকাশ করা। প্রতিবাদ করার কাজ রাজনীতিবিদদের, অ্যাক্টিভিস্টদের। গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন এক নয়, জার্নালিজম আর অ্যাক্টিভিজমও এক নয়। ফেসবুক স্ট্যাটাস আর রিপোর্ট এক নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব দিয়েও তোলপাড় তোলা যায়। গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাই করতে হয়, দায়িত্বশীল হতে হয়।
একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা যা ইস্যু নিয়ে আপনি তোলপাড় করছেন, তার সবগুলোর উৎস কিন্তু গণমাধ্যম। সকল দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক কেলেঙ্কারি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি- সবকিছু সাংবাদিকরাই ফাঁস করেছে। আপনি কিন্তু কোনো না কোনো গণমাধ্যমের লিঙ্ক শেয়ার করেই বিপ্লব করছেন। সব ইস্যুতে সব গণমাধ্যম একভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না; এটা গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু কেউ না কেউ তো দায়িত্বের বাতিটা জ্বালিয়েই রাখে।
গুলশানে এক কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের ওপর আরেকদফা ঢালাও আক্রমণ হয়েছে। কদিন ধরে মনে হচ্ছে, ফেসবুক হলো সাংবাদিকতার ক্লাশরুম, নৈতিকতার বিশ্ববিদ্যালয়। ফেসবুক দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের সবার মেরুদণ্ড স্টিলের তৈরি, কেবল সাংবাদিকদেরই কোনো মেরুদন্ড নেই। গুলশানে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার পর তার বোন বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা করেছেন। এই তথ্যটি আপনি কোথায় পেয়েছেন? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো গণমাধ্যমেই পেয়েছেন। আপনি নিজে তো সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সাংবাদিকরা রাতভর গুলশান থানায় বসে ছিলেন আপডেট পেতে। আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ইচ্ছা তাই লিখে দিতে পারেন। সাংবাদিকদের কিন্তু মামলা হওয়া পর্যন্ত, পুলিশের বক্তব্য পা্ওয়া পর্যন্ত, বাদীর বক্তব্য পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বসুন্ধরার মালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলো ছাড়া আগে আর পরে এই ঘটনায় অধিকাংশ গণমাধ্যমেই কিন্তু আসামির নাম পরিচয় ছাপা হয়েছে। আদালত যে আসামীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আদালত যে তার আগাম জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে; এই তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো গণমাধ্যমই আপনাকে দিয়েছে। আপনি তো আর থানায় বা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। সাংবাদিককতা শেখাতে গিয়ে আপনারা এও বলেছেন, মামুনুল হক আর আনভীরের অপরাধের ধরন তো একই। তাহলে গণমাধ্যম দুটি ঘটনায় একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখালো না কেন? অপরাধের ধরন একই হলেও দুটির প্রভাব কিন্তু এক নয়। মামুনুল একটি উগ্রবাদী সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। তার কথায় দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রভাবিত হয়, উত্তেজিত হয়, তান্ডব চালায়। তাই তার যে কোনো কাজের সামাজিক প্রভাব ব্যাপক। কিন্তু একজন ব্যক্তি আনভীরের অপরাধ সমাজে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবুও অপরাধ অপরাধই। আইন-আদালত ব্যবস্থা নেবে। সায়েম সোবহান আনভীর যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, এখন পর্যন্ত আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি- মামলা হয়েছে, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে, জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এখন পুলিশ তদন্ত করবে, প্রয়োজনে আসামীকে গ্রেপ্তার করবে। কেন এখনও আসামীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, এরজন্যও সাংবাদিকদের গালি খেতে হচ্ছে। যেন আসামী গ্রেপ্তারও সাংবাদিকদের দায়িত্ব।
কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার পর থেকে অনেকে ইনবক্সে, কমেন্টে বলছেন, এই ঘটনা নিয়ে লিখতে। অনেকে ইশরায় বলেছেন, শিল্পপতির ঘটনা নিয়ে লিখবেন না। নিজে নামটি লেখার সাহস দেখাতে পারছেন না। আর আশা করছেন, সাংবাদিকরা আসামী ধরে থানায় নিয়ে যাবে। আমি তাদের অনেককে বলেছি, দেখি আপনি কী লিখেছেন, আপনার স্ট্যাটাসটি আমি শেয়ার করবেো। তাদের অনেকের ফেসবুক আইডি লক করা। বেশিরভাগের আইডিকে ফুল-ফল, লতা-পাতা ছাড়া আর কিছু নেই। নিজের ওয়াল পরিষ্কার রেখে ওনারা আসেন সাংবাদিকদের উসকানি দিতে। জবাবে অনেকে বলেন, আমাদের কাজ তো লেখা নয়, আমরা তো লিখতে পারি না। সাংবাদিকদের গালি দেয়ার জন্য তারা কী-বোর্ডে ঝড় তোলেন। কিন্তু কোনো প্রতিবাদের প্রসঙ্গ এলেই, তারা বলেন, আমি তো লিখতে পারি না। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন যে আগের রাতে হয়ে গেছে, এই অভিযোগর পক্ষে যতটুকু তথ্য-প্রমাণ সেটুকু সাংবাদিকরাই তুলে ধরেছেন। হোক সেটা বিবিসি, ডয়েচে ভেলে বা প্রথম আলো। আপনি ধারণার ভিত্তিতে ফেসবুকে ঝড় তুলতে পারবেন। সাংবাদিকদের কিন্তু তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কথা বলতে হবে। আচ্ছা এবার বলুন তো, আপনি বা আপনার সংগঠন মধ্যরাতের নির্বাচনের প্রতিবাদে কয়দিন রাস্তায় নেমেছেন, কয়বার প্রতিবাদ করেছেন। আপনারা প্রতিবাদ করুন। সাংবাদিকরা অবশ্যই তা তুলে ধরবে। নিজে শামুকের মত গুটিয়ে থাকবেন, আর সাংবাদিকদের সিংহ হতে বলবেন কেন? আগে নিজে প্রতিবাদী সিংহ হন, তারপর আরেকজনের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলবেন। বালিশকান্ডের খবর আপনাকে কে দিয়েছে, পি কে হালদারকে আপনি কোত্থেকে চিনেছেন, বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুর নাম আপনাকে কে বলেছে? নিজে আগে এই প্রশ্নের জবাব খুজুন। তারপর সাংবাদিকদের নৈতিকতা, সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন।
মানছি, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা একটা কঠিন সময় পার করছে। কিন্তু এই সময়ের দায় তো সাংবাদিকদের নয়। সিনিয়র সাংবাদিক আফসান চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মিডিয়া বলে একক কিছু নাই। তিন গোষ্ঠী মিলে এটা ১. মালিক. ২. ঊর্ধ্বতন কর্মী/সাংবাদিক/সম্পাদক ৩. সাধারণ সাংবাদিক। প্রথমটা সকল ক্ষমতা রাখে, ঠিক করে কী যাবে কী যাবে না। তার উদ্দেশ্য ক্ষমতাবানদের খুশি করা, নিজের সম্পদ বাড়ানো। ২. এরা মিডিয়া চালায়, মালিককে তেল দেয়, কর্মীদের ওপর ছড়ি ঘোরায়, লাইন করে, একদিন পত্রিকার সম্পাদক হবার আশা রাখে। রাজনীতি করে কিন্তু এদের ওপর বাপ্ আছে।৩ নম্বর হচ্ছে চাকা ভাঙা সাইকেল, সংসার চালাতে ব্যস্ত, ক্ষমতাহীন অসহায় মানুষগণ। বেশির ভাগ ঢাকার বাইরে থেকে আশা, বিসিএস হতে পারবে না বা অন্য ভালো চাকরির সুযোগ কম বলেই সাংবাদিক। মিডিয়াকে গালি দিয়ে লাভ নেই কারণ মালিক, নেতা আর কর্মী তিন আলাদা দুনিয়ার প্রাণী। (কিছু ব্যতিক্রম তো আছেই কিন্তু তাতে মিডিয়ার চরিত্র বা কাঠামো পাল্টায় না)।‘ মোটা দাগে আমি আফসান ভাইয়ের সাথে আমি একমত। দেশে তিন নাম্বার গোত্রের সাংবাদিকই বেশি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে কোনো অব্যবস্থাপনার জন্য মানুষ ডাক্তারদের গালি দেয়। এমনকি হাসপাতালের বাথরুম ময়লা থাকলেও দোষ হয় ডাক্তারের। কারণ তারাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামনে থাকেন। মানুষ তাদেরই দেখতে পায়। তেমনি গণমাধ্যমে কোনো বিচ্যুতি হলে আফসান ভাইয়ের তালিকার তিন নম্বরে থাকা অসহায় সাংবাদিকদেরই সবাই গালি দেয়। কারণ তারাই মাঠে ময়দানে থাকে। তারা তো সংবাদ সংগ্রহ করে। কিন্তু ট্রিটমেন্ট দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত বা ক্ষমতা কিন্তু তার নয়। বরং একটি সত্য ঘটনা লেখার পরও সেটি ছাপা না হলে তার যে বেদনা, সেটা আমরা কেউ দেখতে পাই না, বোঝা তো অনেক পরের কথা।
গুলশানে কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ভালো সাংবাদিকতা হয়নি, সেটা মানছি। ভালো সাংবাদিকতা তো অনেক পরে কোখাও কোথাও অপসাংবাদিকতাও হয়েছে। এ ঘটনায় চার ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে গণমাধ্যমে। কিছু গণমাধ্যম ঘটনাটিকে সাধারণভাবে দেখে নির্মোহভাবে ট্রিটমেন্ট দিয়েছে। কিছু মিডিয়া, যাদের সাথে বসুন্ধরার সম্পর্ক খারাপ, তারা অতি উৎসাহ দেখিয়েছে। কিছু মিডিয়া, যাদের সাথে বসুন্ধরার সম্পর্ক ভালো, তারা উল্টো মরে যাওয়া মেয়েটির চরিত্র হননে নেমেছে নোংরাভাবে। আর বসুন্ধরার মালিকানাধীন মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে স্পিক টি নট। এখন এই চার ধরনের প্রতিক্রিয়ার কোনো সিদ্ধান্তই কিন্তু আফসান ভাইয়ের তিন নাম্বার তো বটেই, তালিকার দুই নাম্বারে থাকা সাংবাদিকরাও নেননি। এখানে পুরোটাই পূঁজির ব্যাপার। এখানে সাংবাদিকদের কিছু করার নেই। অনেকে বলছেন, কিছু করার না থাকলে চাকরি ছেড়ে দেন, তরমুজের ব্যবসা করেন। ভালো পরামর্শ। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করার প্রতিবাদে পদত্যাগ করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। কিন্তু বিপ্লবী ভাইয়েরা, সাংবাদিকদেরও কিন্তু সংসার আছে। তাদেরও বাসা ভাড়া দিতে হয়, বাজার করতে হয়। বসুন্ধরার মালিকানাধীন ৭টি গণমাধ্যমের হাজার তিনেক কর্মী যদি আজ পদত্যাগ করে, আপনি তাদের বাহবা দিতে পারবেন, ফেসবুকে ঝড় তুলতে পারবেন। কিন্তু এই করোনাকালে কয়জনকে চাকরি দিতে পারবেন? তরমুজের ব্যবসা করার মত পূঁজি বা বুদ্ধি তো সবার নাও থাকতে পারে। আর অভিযোগ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে। পুলিশ তদন্ত করবে, আদালত বিচার করবে। কিন্তু একজন ব্যক্তির দায় পুরো প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিতে হবে কেন?
আপনারা যে সাংবাদিকদের গাল দিচ্ছেন, এটাকে আমি প্রাপ্তি বলেই মানি। সাংবাদিকদের কাছে আপনাদের উচ্চ প্রত্যাশার কারণেই আপনাদের হতাশাও প্রবল। তবে খালি একটা অনুরোধ, আমাদের অসহায়ত্ব, সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করুন; ঢালাওভাবে আমাদের সততা, নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। সাংবাদিকরা কিন্তু আত্মসমালোচনা করতে জানে, নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে চেষ্টা করে, প্রয়োজনে ক্ষমা চাওয়ার সৎসাহসও সাংবাদিকদের আছে। এই ঘটনায় অপসাংবাদিকতা করা প্রতিষ্ঠান কিন্তু হাতে গোনা। আপনারা আমাদের ভুল ধরিয়ে দিন, গণমাধ্যমের পাশে থাকুন। গণমাধ্যম কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণেরই মাধ্যম। এখনও কিন্তু মানুষ কোথাও বিচার না পেলে শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমের কাছেই আসে।
লেখা শেষ করছি সুমন চট্টোপাধ্যায়ের একটি গানে তোলা প্রশ্ন দিয়ে-
যদি ভাবো কিনছো আমায়, ভুল ভেবেছো
কেনা যায় কণ্ঠ আমার দফা দফা
রুজি-রোজগারের জন্য করছি রফা
দু’হাতের আঙুলগুলো কিনতে পারো
আপসেও নেই আপত্তি, নেই আমারও
আমাকে না, আমার আপস কিনছো তুমি
বলো কে জিতলো তবে জন্মভূমি, জন্মভূমি?
লেখক: প্রভাষ আমিন,হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ