ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিশ্বকবির শিলাইদহ কাচারিবাড়ি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিশ্বকবির শিলাইদহ কাচারিবাড়ি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিশ্বকবির শিলাইদহ কাচারিবাড়ি

কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহে এসে যে কাচারীবাড়িতে বসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারীর খাজনা আদায় করতেন ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতিক সেই বাড়িতে এখন ঘুটে (গোবর) শুকানো হচ্ছে।

অযত্ম-অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কবির স্মৃতি বিজড়িত কালের সাক্ষী কাচারিবাড়ি। এরই মধ্যে চুরি হয়ে গেছে কাচারি বাড়ির জানালা দরজাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। এ অবস্থায় কুঠিবাড়ির মতো রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত এই স্থাপনাগুলোও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন রবীন্দ্র প্রেমী ও এলাকাবাসী।

রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পরিচিতি সারা দেশ, এমনকি বিশ্বব্যাপী। সরকারের প্রত্মতত্ব বিভাগ কুঠিবাড়িকে বেশ যত্মেই আগলে রেখেছে। তবে কুঠিবাড়ির খুব কাছেই বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য আরেক স্থাপনা কাচারীবাড়ি, যার খোঁজ রাখেনা কেউ। কাচারী বাড়িটি অনেকটা লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়েছে গেছে। অযত্ম-অবহেলায় দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই বাড়িটি। অথচ এই বাড়িটিকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে পর্যটনের এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠতে পারে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় রবীন্দ্র গবেষক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. সরওয়ার মুর্শেদ জানান, ১৮৯১ সাল থেকে প্রায় ৩০ বছর এই বাড়িতে বসে রবীন্দ্রনাথ জমিদারির খাজনা আদায় করেছেন।

তিনি আরও জানান, পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) মূলত শিলাইদহই ছিল রবীন্দ্রনাথের কেন্দ্রবিন্দু। কবি এখান থেকেই শাহাজাদপুর, পতিসর যাতায়াত করতেন। তাই সব কিছুর বিচারে রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের কাচারী বাড়ি বাঙ্গালীর জন্য এক অনন্য সম্পদ।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, কিছুদিন আগেও এখানে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজ চলতো। তবে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের ফলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস এখন সেখানে বসানো হয়েছে। এ কারণে কাচারী বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অপূর্ব কারুকাজ সমৃদ্ধ দোতলা কাচারী বাড়িটি আগাছা আর বন্য লতা-গুল্মে ছেয়ে গেছে। পাইক পেয়াদা আর বরকনদাজদের হাঁক ডাকে একদিন মুখরিত থাকতো যে বাড়ি আজ সেখানে সুনসান নিরবতা। স্থানীয় ঘুটে ব্যবসায়ীরা এই বাড়ির দেওয়াল ও দোতলার মেঝেকে ঘুটে শুকানোর (কাঁচা গোবর) আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। কাঁচারী বাড়ির ৫ একর জমির বেশ কিছুটা ইতিমধ্যে দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয় সাংবাদিক দীপু মালিক বলেন, কুঠিবাড়ির মত তো কাচারীবাড়ির পরিচিতি নেই, তাই দর্শনার্থীরা তেমন একটা আসেনা এখানে। তবে যে দুই এক জন আসেন তারা কাচারী বাড়ি জুড়ে গোবরের গন্ধে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননা।

স্থানীয়রা বলেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মতিথিতে প্রতি বছর শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে উৎসবরে আয়োজন করা হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে যোগ দিন। এখানে এসে কবির স্মৃতি চিহ্ন ছুঁয়ে দেখেন রবীন্দ্রপ্রেমিরা। এছাড়া সারা বছর কুঠিবাড়িতে বেড়াতে আসেন অনেক মানুষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্বও আদায় হয়। কবির কাচারী বাড়িটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করলেও এটিও দর্শনীয় স্পটে পরিনত হবে, বাড়বে সরকারের রাজস্ব।

বিশ্বকবির স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী রবীন্দ্র প্রেমী ও সুধীজনদের।