প্রশাসনের আশ্বাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার চলমান ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।
দীর্ঘ দুই ঘণ্টা আলোচনা শেষে রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টায় এ ঘোষণা দেন সংগঠনের আহ্বায়ক মঞ্জুর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের অনুরোধে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৪৮ ঘণ্টার চলমান ধর্মঘট আমরা স্থগিত করেছি। জেলা প্রশাসক আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছেন, সেজন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। পরবর্তীতে এরকম কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুনরায় ধর্মঘট দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। তা চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় জেলা প্রসাসক প্রসাশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আমাদেরকে ডেকেছেন। আমরা উনার ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছি এখানে। আমরা তার প্রতি সম্মান রেখে বলবো, চুয়েটে যে দুইজন ছাত্র নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং একজন আহত হয়েছেন তার জন্য আমরা মর্মাহত। ওই ছেলেদের আমাদের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা দিয়েছি। এরপর আমাদের তিনটা গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের তিনটা গাড়ির বিষয়ে প্রশাসন আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়িগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আমরা উনার আশ্বাসকে সাধুবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, 'আমরা গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবসা করি। আমাদের কাপ্তাই সড়কের চুয়েটের সামনে বর্তমানে যে বিবাদমান আন্দোলন, এই আন্দোলনে আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত। জানি না আবার গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবো কিনা। তারপরও ডিসি মহোদয় আমাদেরকে বলেছেন, উনার কথায় আস্থা রেখে আমরা গাড়ি ছাড়ব। আমাদেরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে, যদি আমাদের কোন গাড়ি যদি সেই দুর্ঘটনা বা আক্রমণের শিকার হয় অথবা আমাদের এবি ট্রাভেলস বা শাহ আমানতের কোন গাড়ি যদি ইচ্ছাকৃত কোন আক্রমণের শিকার হয়, উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা পুনরায় ধর্মঘট শুরু করব। জেলা প্রশাসকের আহবানে আমরা জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট স্থগিত করলাম।'
বৈঠকে মনজুর আলম বলেন, ‘কাপ্তাই সড়কে গাড়ি চললে চট্টগ্রামের সব সড়কে গাড়ি চলবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইনা। আমরা সবমসময় সরকারকে সহযোগিতা করেছি। আমরা গাড়ি চালাবো। আপনাতত আমাদের দাবিগুলো আপনি পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন আমরা আপনার আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
এর আগে সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা যে দাবিগুলো বলেছেন তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বিষয়ে আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা গাড়িগুলো চালান আমরা নিরাপত্তা দেব। প্রয়োজনে পুলিশ স্কোয়ার্ড ও আমাদের দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। আর হামলায় গাড়িগুলো কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি বিআরটিএ দেখবে। এরপর আমরা সেটির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবো। ক্ষতিপূরণের জন্য মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলব। যাতে আপনাদের তিন গাড়ির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায়।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, দুইজন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার পর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি সেখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গাড়িগুলো যাওয়া আসার সময় সামনে পেছনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ স্কোয়াড থাকবে।
এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ‘সড়কের মধ্যে দাড়িয়ে যে চাদাঁবাজি করা হচ্ছে সেটি বন্ধ করুন। না হয় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। সড়কে যত্রযত্র গাড়ি থামানো যাবে না। মামলা প্রত্যাহারের যে দাবি তোলা হয়েছে সেটি আসলে তদন্তের আগে জানানো সম্ভব নয়। আর গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে মামলা কেউ করতে চাইলে করতে পারবে।’
বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর মাথায় হেলমেট ছিল না। মোটরসাইকেলেরও নিবন্ধন ছিল না বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া যে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে, সেটা ছিল ফিটনেসবিহীন। চালকের লাইসেন্স ছিল না।’
সভায় পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ৪ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের এই ঘোষণা দেয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। পরে অবশ্য তিনটি পরিবহন সংগঠন ধর্মঘট প্রত্যাখানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু, এই সংগঠগুলো টেম্পো জাতীয় পরিবহন সংশ্লিষ্ট। ফলে তাদের প্রত্যাখানে তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর জের ধরে ওইদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন।
গত ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপরও ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।