যাত্রী সংকটে রিকশা ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়েও কম
দুই দিন আগের কথা। দেশজুড়ে চলছে সীমিত পরিসরে লকডাউন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খোলা থাকে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। ফলে অফিসগামীদের পড়তে হয় পরিবহন সংকটে। এ সময় সুযোগ লুফে নেয় রিকশা চালকেরা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভাড়া বেড়ে যায় দুই থেকে তিন গুণ। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্য যেতে যায় রাজধানীবাসীর। সামর্থ্য না থাকায় তখন অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান।
রাজধানীর চিত্র আজ অন্য রকম। লকডাউন আর শুক্রবার (২ জুলাই) হওয়ায় রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। যাত্রী কম থাকায় রিকশা ভাড়া স্বাভাবিক হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়েও কমেছে রিকশা ভাড়া। ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট, শাহাবাগ, পল্টন ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে খালি রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন চালকেরা। যে পরিমাণ রিকশার উপস্থিত রয়েছে তার তুলনায় যাত্রী অনেক কম। মাঝে মধ্যে দুই একজন যাত্রী আসছে আর যাত্রী পেতে প্রতিযোগিতা শুরু করছে রিকশাওয়ালারা। সুযোগ পেয়ে যাত্রীরাও ভাড়া কমানোর চেষ্টা করছে।
রাজধানীতে প্রায় ২০ বছর ধরে রিকশা চালান জামালপুরের মো. মানিক হোসেন। দুই সন্তানের জনক মানিক থাকেন যাত্রবাড়ী। বেলা আড়াইটার দিকে কথা হয় তার সাথে। তিনি বার্তা২৪.কম কে বলেন, আজ যাত্রী খুবই কম। দুপুর গড়িয়ে গেলেও সকাল থেকে ভাড়া মেরেছি ৩০০ টাকার মত। স্বাভাবিক সময়ে এতক্ষণে ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম হয়ে যেত। কোনো কোনো দিন আরো বেশি হত। গতকালও মোটামুটি ভালই আয় হয়েছিল।
কঠোর লকডাউনের আগের তিন দিনের ভাড়ার প্রসঙ্গ তুলতেই খুশি হয়ে যান মানকি। বলেন আগের তিনদিনে ভালো ভাড়া মেরেছি। তিন দিনে প্রায় ৬ হাজার টাকার মত ভাড়া মেরেছি।
শাহবাগ মোড় থেকে আগারগাঁওয়ে যাওয়ার জন্য ১২০ টাকা রিকশা ভাড়া ঠিক করেছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কম কে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে শাহবাগ মোড় থেক আগারগাঁওয়ে যেতে কমপক্ষে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা লাগত। আজ ১২০ টাকায় যেতে রাজি হয়েছে, এতে বোঝা যাচ্ছে যাত্রী না থাকায় ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাত দিনের কঠোর লকডাউন দিয়েছে সরকার। আজ শুক্রবার (২ জুলায়) কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন। রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে আছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার এবং সেনাবাহিনী।
বুধবার জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে কঠোর বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বৃষ্টি ও ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কম থাকলেও চলছে না অপ্রয়োজনীয় কোন গাড়ি। মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে।