চুরির পণ্য ফেরত পাওয়ার উপায় জানিয়ে চোর চক্রের চিরকুট
ঢাকার ধামরাইয়ে চুরির পণ্য ফেরত পাওয়ার উপায় জানিয়ে ফোন নাম্বরসহ চিরকুট রেখে গেছে চোরচক্র। আর এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধামরাইয়ে ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার চুরির হিড়িক পড়েছে। রাত জেগে সংঘবদ্ধভাবে পাহারা দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না এসব বৈদ্যুতিক মিটারগুলো। থানা পুলিশ ও পল্লীবিদ্যুৎ অফিস থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো সহযোগিতা। ফলে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন তাদের প্রকল্প নিয়ে।
এ ব্যাপারে গ্রহকের পক্ষ থেকে অসংখ্য অভিযোগ ও জিডি দায়ের করা হয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ও পুলিশের কাছে। এরপরও এর প্রতিকারে বা সংঘবদ্ধ মিটার চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। মিটার চুরির ফলে অনেক সেচ প্রকল্প ও মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
অপরদিকে সংঘবদ্ধ মিটার চোরচক্র চিরকুট লিখে অভিনব কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে মিটার ফেরত দেওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার পরও পুলিশ তাদের শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে পারছে না। ফলে ভুক্তভোগীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাদের প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে।
চোরচক্রের শর্তানুযায়ী বিকাশে টাকা না দেওয়ায় প্রায় শতাধিক মিল ও সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের মিটারগুলো আদৌ ফেরত পায়নি। মিটার প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা পেলেই মিটার ফেরৎ দিচ্ছে ব্যতিক্রমী এ চোরচক্র। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ধরণা দিয়ে নতুন করে মিটার পেতে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা খরচ লাগছে তাও আবার কয়েক মাস সময়ের ফের।
ফলে ভুক্তভোগীরা চোরচক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাদের ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক মিটার ফেরৎ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এর আরও কারণ রয়েছে। আর তা হলো নতুন মিটার সংযোগ লাগানোর পরও ঝুঁকিমুক্ত নন মিল বা সেচ প্রকল্প মালিকরা। নতুন মিটার লাগানোর পরও তা চুরি হয়ে যাবে ওই চোরচক্রের কথামতো কাজ না করলে। তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা দিলেই কেবল তাদের মিটার নিরাপদ। না হলে যতবার নতুন মিটার লাগাবে ততবারই তা চুরি করে নিচ্ছে ওই চোরচক্র।
ঢাকার ধামরাইয়ে করোনাকালীন ৬ মাসে প্রায় সহস্রাধিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায়। এদের অনেকেই বিকাশে টাকা পাঠিয়ে মিটার হাতে পেয়েছেন। আবার কেউ চোরের কথায় কান না দিয়ে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ধরনা দিয়ে মোটা অংকের ডেমারেজ গুণে নতুন মিটার সংযোগ নিয়েছেন প্রকল্প সচল রাখতে। পরক্ষণেই তা চুরি করে নিয়েছে ওই চোরচক্রের সদস্যরা।
এ নিয়ে বহু জিডি দায়ের হয়েছে ধামরাই থানায়। গত ১৩ জুন রাতে উপজেলার চরকুন্ড, নওহাটা, অমরপুর, ধলকুন্ড, শুলধন ও মহিষাশী এলাকায় শতাধিক মিটার চুরি হয়। ১৪ জুন এ ব্যাপারে ধামরাই থানায় জিডি করেন চরকুন্ড গ্রামের মো. আলমগীর হোসেনসহ শতাধিক ভুক্তভোগী।
এরপর ২১ জুন সোমবার দিবাগত রাতে নান্দেশ্বরী এলাকার সহিদ টিম্বার অ্যান্ড স-মিলে থ্রি ফেইজ মিটারসহ ৭৭টি মিটার চুরি করে ওই সংঘবদ্ধ মিটার চোরচক্র। চোরেরা রেখে যায় যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর। ফোন দেয়া হলে মিটার ফেরতের শর্তে ২০ হাজার টাকা বিকাশের নগদ একাউন্টে পাঠানোর দাবি করে সংঘবদ্ধ মিটার চোরচক্রের মূলহোতা। টাকা পাঠানোর পরই মিলবে মিটারের সন্ধান। টাকা না পাঠালে কোনদিনই তা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সহীদ স-মিল অ্যান্ড টিম্বার ট্রেডার্স মিলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে ধারণ হয়েছে চোরের চেহারাসহ চুরির বাস্তব চিত্র। ভুক্তভোগীদের অভিমত ওই ভিডিও ফুটেজ ও চোরচক্রের রেখে যাওয়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েই শনাক্ত করা যাবে সংঘবদ্ধ চোরচক্রের।
গত সোমবার রাতে বেলীশ্বর, বালিথা ও বাথুলী এলাকা থেকে ১২টি ও মঙ্গলবার বড় অমরপুর, জালসা, বড়হিস্যা ও বামীবিল জালসা এলাকা থেকে ১৮টি মিটার চুরি হয়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা এর দ্রুত প্রতিকার কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে থানায় জিডি হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের হাত থেকে কোন অপরাধীই শেষ রক্ষা পায় না। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা শিগগিরই ধরা পড়বে।