ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে নির্মাণাধীন ভবন
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ রীতিমতো বেড়েই চলছে। এতে বাড়ছে মৃত্যুও। ডেঙ্গু উপসর্গে এরই মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১০ জন। এর মধ্যে ঢাকার ১৮১ জন এবং ২৯ জন ঢাকার বাইরের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবনগুলোই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এতে ব্যর্থ হচ্ছে মশা নিধন কর্মযজ্ঞ। জরিমানা গুনলেও মশার লার্ভা ধ্বংসে অনীহা দেখা গেছে ভবন মালিকদের।
মশা নিধন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষার মৌসুমে ঘন ঘন বৃষ্টিপাতের কারণে ছাদবাগান, টব, টায়ার ও নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমার সুযোগ পায় বেশি। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বৃষ্টি হলে এসব ভবনের ভেতরে বাইরে আশপাশে নানা জায়গায় পানি জমে থাকে। ভবন মালিকরা পানি অপসারণ না করার কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি।
সিটি করপোরেশন বলছে, নির্মাণাধীন ভবনগুলোর মালিকদের বারবার সতর্ক করা হলেও তারা সচেতন হচ্ছেন না। নির্মাণাধীন ভবন মালিককে জরিমানা করার কিছুদিন পর সেই ভবনে গিয়ে আবারও এডিস মশার লার্ভা পাচ্ছেন সিটি করপোরেশনের পরিদর্শকরা। ফলে এডিস মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার হাজার ৭৫৩ জন এবং এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছে তিন হাজার ৮০৮ জন। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৯৩১ জন, যার মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৮৬৩ জন এবং ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে আরো ৬৮ জন।
এ ছাড়া প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২০০ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার চিত্র বেশ ভয়ংকর। এ পরিস্থিতিকে রীতিমতো উদ্বেগজনক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনার এই মহামারিকালে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহতা নগরবাসীর দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ৬৫ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনেই এডিস মশার লার্ভা ও মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য আমরা নির্মাণাধীন ভবনগুলোর দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। আমরা প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যাদের জরিমানা করছি, এর মধ্যে বেশিরভাগই দেখা যাচ্ছে নির্মাণাধীন ভবন।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত জানুয়ারি থেকে মোবাইল কোর্ট, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছি। আগে বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন করার জন্য একটা নামমাত্র ফি ধরা হয়েছিল। পরে সেটা ফ্রি করা হয়েছে। তার পরও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। নির্মাণাধীন ভবনগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মশক বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, এডিস মশার বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবন অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়। যেসব স্থানে পানি জমা পাত্র পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রায় সব ক'টিতেই এডিসের লার্ভা মিলছে। এখন শুধু নির্মাণাধীন ভবনের কথা বললে নজর কেবল একদিকেই চলে যাবে। তখন অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।