হাওরের পরিবেশ দূষণ: এমপি’র উদ্বেগের পরেও উদাসীনতা!

  • কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অনিন্দ্য সুন্দর জলমগ্ন হাওরে দূষণের থাবা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

অনিন্দ্য সুন্দর জলমগ্ন হাওরে দূষণের থাবা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বার্তা২৪.কম-এ প্রকাশিত কিশোরগঞ্জের হাওরে পরিবেশ দূষণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন হাওরের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। “হাওরের পরিবেশ দূষণকে ‘না’ বলুন: এমপি তৌফিক” শিরোনামে প্রতিবেদনের পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

বার্তা২৪.কমকে তিনি স্পষ্টত বলেছিলেন, ‘হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এর রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়েও আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের মানবিক বিবেক, সৌন্দর্যবোধ ও পরিবেশ চেতনা জাগ্রত করে জাতীয় সম্পদ হাওরকে নির্মল, নিষ্কলুষ ও অটুট রাখতে হবে। ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত সামগ্রী নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। কোনও অবস্থাতেই হাওরের পানিকে দূষিত ও আবর্জনায় পূর্ণ করা যাবে না।”

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম-এ প্রকাশিত সংসদ সদস্যের উদ্বেগ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগালেও বাস্তবে হাওরের পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসলেও অনেকেই পরিবেশ সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের জলজ প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র, প্রাণময়তার সংরক্ষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব হলেও তা পালন করছেন না অনেকেই। বরং দূষণ ও পরিবেশ হানিকর অপতৎপরতায় হাওরের পরিবেশ নির্মল ও মুক্ত থাকছে না। বিভিন্ন ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ, বিশেষত অপচনশীল প্লাস্টিকের বোতল, ঠোঙ্গা, প্যাকেট, পলিথিন বা ব্যবহার্য সামগ্রী কাজের শেষে হাওরের পানিতে যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়ার, পানির প্রবাহে বিঘ্ন ঘটার এবং মৎস্য প্রজনন ও উদ্ভিদ সম্পদের বিকাশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বার্তা২৪.কমকে জানান, নিকলি থেকে শুরু করে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম টুরিস্ট হটস্পটে। অনিন্দ্য সুন্দর জলবেষ্টিত প্রকৃতিতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বিমোহিত হচ্ছেন সবাই হাওরের অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। কিন্তু সবাই পরিবেশ রক্ষায় সচেতন নন। অনেকেই হাওরের দূষণ বৃদ্ধি করছেন।

বিস্তীর্ণ হাওরের নির্মম জলরাশিতে আবজর্না ও বর্জ্য ফেলায় ফলে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। পানিতে ভাসমান পলিথিন, খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল দেখা যাচ্ছে। এসব অপচনশীল বর্জ্য জমে ভূমির উর্বর শক্তি নষ্টের ও প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

হাওরের মাঝি ছমিরউদ্দিন বলেন, ‘প্রায়-সবাই সাথে করে প্যাকেটজাত খাবার ও পানীয় নিয়ে আসেন। হাওরের বুকে সারাদিন নৌকা ভ্রমণের সময় তারা খাওয়া-দাওয়ার শেষে পরিত্যক্ত প্যাকেট ও পলিথিন পানিতে ছুঁড়ে ফেলেন। নিষেধ করা হলেও অনেকেই নিবৃত্ত হন না।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে ও ভ্রমণে নিয়োজিত শত শত নৌকায় ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা জরুরি। তাছাড়া পর্যটন বিভাগ ও পরিবেশ দফতরের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও দরকার। প্রয়োজনে পরিবেশ নষ্টকারী ও দূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে পরিবেশ হানিকর দূষণের থাবার ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ হাওর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হবে, যা পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য বিরাট বিপদ ও হুমকির কারণ হবে অচিরেই।