বাণিজ্যমেলায় জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল চক্রটির
বাণিজ্যমেলা, পশুর হাট, শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে জাল নোট তৈরি করত চক্রটি। চক্রের মূল হোতা মো. ছগির ও তার দুই সহযোগীকে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিরপুর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরির এই চক্রকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চক্রের মূল হোতা মো. ছগির হোসেন (৪৭), মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি (২০) ও মো. রুহুল মামিন (৩৩)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ৩টি প্রিন্টার, ১টি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গেল ২৮ নভেম্বর র্যাব-৪ মিরপুর মডেল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ চক্রের সক্রিয় ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রটির মূলহোতা ছগির ও অন্যান্য সহযোগীদের সম্পর্কে জানা যায়। ফলশ্রুতিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে গত রাতে তাদের ঢাকার মিরপুর পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
মঈন জানান, এই চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করত।
র্যাব জানায়, ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। ১ বছর জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করে। তৈরিকৃত জাল নোটগুলো চক্রের রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে সে বিক্রি করে আসছিল। জাল নোট ছগির নিজেই তৈরি করত এবং পুরান ঢাকা থেকে এর সরঞ্জামাদি নিজেই সংগ্রহ করত। প্রতি ১ লাখ জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সে বিক্রি করত। তার সহযোগিরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করত। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতিমাসে তার সহযোগীদেরকে বোনাসও দিত বলে জিজ্ঞাসাবাদে ছগির জানায়।
চক্রটি সাধারণত কোনও মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বিপুল পমিাণ জাল টাকা তৈরির পরিকল্পনা করে তারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে গ্রেফতারকৃত ছগির জাল নোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সেজন্য ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করত বলে জানান মঈন।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে সে জেলে আছে। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সাথে তার পরিচয় হয় এবং সে নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করে। অপর আসামি রুহুল আমিন এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী।