সিজারের সময় প্রসূতির খাদ্যনালী কেটে ফেলল চিকিৎসক

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

যশোরে স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাজমা খাতুন (৩০) নামে এক প্রসূতির সিজার করতে গিয়ে খাদ্যনালী কেটে ফেলেছেন ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ডা. মোছা. মাহফুজা মনির। এমন অবস্থায় ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন বর্তমানে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। একই সঙ্গে মায়ের বুকের দুধের অভাবে মৃত্যুপাঞ্জা লড়ছে ১৫ দিন বয়সী নবজাতকও।

ভুক্তভোগী প্রসূতি নাজমা খাতুন মনিরামপুর উপজেলার সদর বাজার এলাকার ফরিদ আহমেদের স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

নাজমা খাতুনের ভাই রনি (৩২) অভিযোগ করে বলেন, তার বোন নাজমা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা উঠলে গত ৭ জানুয়ারি সকাল দশটার দিকে যশোর সদর হাসপাতালের বিপরীত পাশে স্ক্যান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়। ভর্তির পরের দিন ৮ জানুয়ারি সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মোছা. মাহফুজা মনি ও তার সহোযোগিরা নাজমার অবস্থা খারাপ বলে তৎক্ষণাৎ সিজার করাতে চায়। এসময় আমি ও আমার পরিবারের লোকজন নাজমার অবস্থা খারাপ শুনে সিজার করতে সম্মতি দেই। সিজারের পর নবজাতক বাচ্চা সুস্থ হলেও আমার বোন নাজমা আর সুস্থ হয় নাই। পরে আমাদের রিলিজ দিয়ে দিলে বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর অবস্থার অবনতি দেখে আবারও স্ক্যান হাসপাতালে ভর্তি করাই।

এসময় চিকিৎসক মাহফুজা মনি বলেন, ৭-৮ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও দিন দিন আমার বোন নাজমার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। এ সময় আমাদের চাপে চিকিৎসক মাহফুজা মনি স্বীকার করেন যে সিজার করার সময় তার খাদ্যনালীর নাড়ি কেটে গিয়েছে। এমন ঘটনা শোনার পর আমরা উত্তেজিত হলে আমাদের সকল খরচ বহন করার মৌখিক অঙ্গীকার করে এবং আমাদের সেখান থেকে অনত্র চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলে।

বিজ্ঞাপন

নাজমা খাতুনের ভাই রনি আরও বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি বোন নাজমাকে নিয়ে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানকার যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া চিকিৎসক মাহফুজা মনি দেন। কিন্তু তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করার কথা থাকলেও তিনি পরে আর আমাদের ফোন রিসিভ করেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিভিন্নভাবে ক্ষয়ক্ষতির ভয়ভীতি দেখান। অতপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক নাজমাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন আমার বোনের খাদ্যনালীর নাড়ি কেটে গেছে এবং পচন ধরেছে। এমতাবস্থায় জরুরি অপারেশনের জন্য কয়েক লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আমরা অপারেশন করাতে পারছি না। আমার বোন তো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সেই সাথে ১৫ দিনের বাচ্চাটাও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

এদিকে নাজমা খাতুনের ভাই রনি বাদী হয়ে স্ক্যান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক ডা. মোছা. মাহফুজা মনিসহ আরও কয়েকজন সহকারীকে অভিযুক্ত করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে সরেজমিনে স্ক্যান হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মাহাফুজা মনির সাথে কথা বলতে গেলে রিসিপশন থেকে জানায় তিনি ওটিতে। পরবর্তীতে একাধিকবার তার ভিজিটিং কার্ডে থাকা অফিসিয়াল নম্বর এবং পার্সোনাল নম্বরে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমার কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। আমি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।

এদিকে অভিযুক্ত স্ক্যান হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহাফুজা মনির ভিজিটিং কার্ডে সরকারি মনোগ্রাম ও যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন উল্লেখ থাকায় যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ বলেন, ডা. মাহাফুজা আক্তার নামে একজন চিকিৎসক আছেন। তার চোখের সমস্যা। আমার জানামতে তিনি কোনও চেম্বার করেন না।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গেলে স্ক্যান হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক কাজী আশরাফ হাসান বক্তব্য দিতে রাজি হননি।