বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৭৩ চেয়ারম্যান!
চলমান দশম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত ৩৫২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। এছাড়াও ষষ্ঠ ধাপে ১২ জন এবং সপ্তম ধাপে আরো ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে চলেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানের সংখ্যা হচ্ছে ৩৭৩ জন। একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এত বেশিসংখ্যক প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা দেশের ইউপি নির্বাচনের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৭১ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৮১ জন, তৃতীয় ধাপে ১০০ জন, চতুর্থ ধাপে ৪৮ জন এবং পঞ্চম ধাপে ৫২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া গতকাল শনিবার সপ্তম ধাপের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে একক প্রার্থী হিসেবে ৯ জনের বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোটের আগেই ১২ জনকে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৩ জানুয়ারি।
সপ্তম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া ৯ জন চেয়ারম্যান হচ্ছেন—পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউপির জাহাঙ্গীর হোসেন; চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউপির মো. ওচমান আলী, সাতকানিয়া সদর ইউপির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, পুরানগড় ইউপির আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার ও মাদার্শা ইউপির আবু নাঈম মোহাম্মদ সেলিম; বান্দরবান সদর ইউপির অংচাহ্লা মারমা, জামছড়ি ইউপির ক্যচিং শৈ মারমা; রাঙামাটির বাঘাইছড়ি সদর ইউপির অলিভ চাকমা ও রুপকারী ইউপির জেসমিন চাকমা ধনেশ্বর (স্বতন্ত্র)।
এদিকে আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া ১২ জনের মধ্যে ১১ জনই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার। কিন্তু তাদের মধ্যে তিনজনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ঝলম উত্তর, লক্ষ্মণপুর ও সরসপুর ইউপির চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই চারজন প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পেলে ষষ্ঠ ধাপে বিনা ভোটের চেয়ারম্যানদের সংখ্যা ৯ জনে নেমে আসবে। এক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৭০ জন।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নবম ইউপি নির্বাচনে ২১২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। পাশাপাশি সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য পদেও বিনা ভোটে জয়ের রেকর্ড হচ্ছে এবার। এ ধরনের বিজয়কে গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয় বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন এই প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসায়িক লেনদেনের জায়গায় দাঁড় করানো হয়েছে। স্থানীয় সরকারকে কলুষিত করা হয়েছে। এর ফল মঙ্গলজনক হবে না।