চলছে শেষ প্রস্তুতি, কোরবানির ঈদে দেশবাসীর উপহার ‘পদ্মা সেতু’!

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু

যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিতে পদ্মা সেতুতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চার লেনের সড়ক প্রায় প্রস্তুত। পদ্মা সেতুতে এখন চলছে পিচ ঢালাই আর ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ। রঙ আর আলোকসজ্জার কাজ শেষ করে আগামী পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই সেতুটি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদ যাত্রা আনন্দময় করতে পদ্মা সেতু চালু করে দেশবাসীকে ঈদের ‘উপহার’ দিতে চাচ্ছে সরকার।

এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের ২৩ জুন পদ্মা সেতু চালু করা হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন, দলটির শীর্ষ নেতারা চাচ্ছেন, ওই দিনেই পদ্মা সেতু চালু হোক।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়- এখন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাকি সাড়ে তিন শতাংশ কাজের মধ্যে রয়েছে নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন বসানো, রেলপথের পাশে হাঁটার রাস্তা তৈরি। যানবাহন চলাচল করার জন্য দরকারি কাজ হচ্ছে পিচঢালাই ও সড়কবাতি বসানো। পাশাপাশি সড়কের সাইন-সংকেত ও মার্কিং বসাতে হবে। এর বাইরে নদীশাসনের কাজও কিছুটা বাকি থাকবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আর্কিটেকচারাল লাইটিং এবং নদীশাসনের বাকি কাজের জন্য যানবাহন চালু করতে কোনো বাধা নেই।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কোন তারিখে পদ্মা সেতু চালু হবে—এটা সরকারের নীতনির্ধারকেরা ঠিক করবেন। তবে জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে চালু করার লক্ষ্য নিয়ে সব কিছু এগোচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, জুনেই সেতু চালু হবে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, আগামী জুনে সেতুটি উদ্বোধন করা যাবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েক মাস আগেই জানিয়েছিল। তখন থেকেই উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অবশেষে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসেবে ২৩ জুন তারিখটি নির্বাচন করা হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জরুরি কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে এ তারিখই চূড়ান্ত থাকছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পিচঢালাই শেষ হলে সেতুতে সাইন–সংকেত এবং মার্কিংয়ের কাজ শুরু হবে। সেতুতে ৭১৫টি সড়কবাতি (ল্যাম্পপোস্ট) বসানো হবে। এর মধ্যে ১০০টি বসেছে। মে মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।

এছাড়া সেতুর দুই পাশে টোলপ্লাজা বসানোর কাজ ২০১৮ সালেই শেষ হয়েছে। তবে এতে সফটওয়্যার ও স্বয়ংক্রিয় অন্যান্য ব্যবস্থা যুক্ত করতে হবে। পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের (যৌথ) দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দর–কষাকষি চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কারিগরিভাবে জটিল আর কোনো কাজ বাকি নেই। ভারী যন্ত্রের ব্যবহারও নেই। সর্বশেষ বড় কাজ ছিল জোড়া বা মুভমেন্ট জয়েন্ট বসানো। সেতু ও ভায়াডাক্ট (ডাঙার অংশ) মিলে ২৮টি এমন জোড়া রয়েছে। এগুলোতে নানা ধরনের বিয়ারিং ও কলকবজা বসিয়ে জোড়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া সেতুতে ভূমিকম্প প্রতিরোধক বিয়ারিংও লাগানো হয়েছে। এসব বিয়ারিং প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও সেতুটিকে টিকিয়ে রাখতে পারবে।

পদ্মার মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। অবশ্য দুই পারে আরও প্রায় চার কিমি ভায়াডাক্ট নিয়ে সেতুটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

প্রসঙ্গত, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি আলাদা অংশে বাস্তবায়ন করছে এ প্রকল্প। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ।