চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাবলম্বী করছে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প
বরিশাল-চট্রগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় ১০৯টি ইউনিয়নের ছিন্নমূল, অসহায়, দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৫০০ সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিনামূল্যে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল ও ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের অনেকেই গড়ে তুলেছেন খামার। এমনটাই জানিয়েছেন উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম জিয়াউল হক রাহাত।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, প্রকল্পটি বরিশাল ও চট্রগ্রাম বিভাগের ৮টি জেলার ২০টি উপকূলীয় উপজেলার ১০৯টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ৫০০ জন করে মোট সুফলভোগী রয়েছে। এদের শতকরা ৯০ ভাগই নারী। প্রত্যেক সুফলভোগী শুরুতে ৩ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে হাঁস, মুরগি ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য, মেডিসিন, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ২১ হাজার জন সুফলভোগীকে ৪ লাখ ২০ হাজার হাঁস, ৮ হাজর ৯৫০ জনকে ১ লাখ ৭৯ হাজার মুরগি, ৮ হাজার ৩০০ জনকে ২৪ হাজার ৯০০ ভেড়া, ৩০ হাজার ৮০০ জনকে পশুখাদ্য এবং ৩৬ হাজর ৩০০ জনকে ১টি করে শেড দেয়া হয়েছে ।
ফেরদৌস আক্তার বেশকিছু হাঁসকে খাবার দিচ্ছেন, তাকে দেখেই যেগুলো একটু দূরে ছিল তাও এসে জড়ো হয়েছে। ঘিরে ধরেছে ফেরদৌসকে। মনের আনন্দে খাবার দিচ্ছেন। বলছিলাম কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হাঁস পালন গ্রুপের একজন সুফলভোগীর কথা।
তিনি প্রতিবেদককে জানান, প্রকল্প থেকে তাকে প্রশিক্ষণ ও ২০টি হাঁস দেয়া হয়েছিল। এখন তার খামারে ৮০০টি হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন ৫০০টির অধিক ডিম পান যা থেকে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় আট লাখ ৬০ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করেছেন। তার সফলতা দেখে আরও অনেকে তার মতো হাঁস পালন করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর কাজল ইউনিয়নে হাঁস পালন গ্রুপের সুফলভোগী কাজল জানান, ২০টি হাঁস দিয়ে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ২,১০০ পিস ডিম উৎপাদন ও বিক্রি করেছেন। এখন তার হাঁস ৪২টি। তিনি প্রায় ৪৫ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করেছেন। হাঁস পালন করেই তার এখন সংসার চলছে।
খামারি মো. মোখলেছুর রহমান জনান, প্রকল্প থেকে তাকে শেড, খাদ্য, মেডিসিন-ভ্যাকসিনসহ ৩টি ভেড়া দেয়া হয়েছিল। এ পর্যন্ত ১৩টি ভেড়া উৎপাদন করেছেন। পারিবারিক প্রয়োজনে ১১ হাজার টাকায় ৩টি ভেড়া বিক্রি করেছেন। রামগতি উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের ভেড়া পালন গ্রুপের সুফলভোগী এনামুল হক জানান, ৩টি ভেড়া পেয়েছেন। গত কোরবানিতে ২টি ভেড়া বিক্রি করেছেন ১৬ হাজার টাকায়।
ডা. এস এম জিয়াউল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত অংশ বিশেষ করে উপকূলীয় চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে এই প্রকল্প কাজ করছে। প্রকল্পভুক্ত ৫৪ হাজার ৫০০ জন সুফলভোগীর ৯০ শতাংশই নারী অর্থ্যাৎ ৪৯ হাজার ৫০ জনই নারী। তারা ঘরে বসে হাঁস, মুরগি ও ভেড়া পালন করে পরিবারের উন্নতি তথা গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন।
নারীর ক্ষমতায়ন, চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বেকারত্ব মোচন ও গুণগত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে মেধাবী জনগোষ্ঠী গঠনে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।