গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের দুই কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের কবলে পড়ছে। একই সাথে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই দুই সড়কের এক কিলোমিটার শহর পার হতে একেকটি যানবাহনের সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘন্টা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দূরপাল্লার যাত্রীরা।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল সোমবার দুপুর থেকে যানজটের এই তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। নানা জটিলতায় গোবিন্দগঞ্জে অধিগ্রহণকৃত জমির উপরস্থ অবকাঠামো দেরীতে অপসারণ, চলমান ছয় লেন সড়ক নির্মাণ কাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া এবং যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে আগের সংস্কারবিহীন ও খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক দিয়েই যানবাহন চলাচল চালু রাখায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া চলমান টানা বৃষ্টির পানিতে সড়কের খানাখন্দগুলো ডুবে থাকায় যানবাহন চালকরা তুলনামূলক অনেক ধীর গতিতে যানবাহন চালানো এবং সড়কে যানবাহন বিকলই শহর এলাকায় তীব্র যানজটের বড় কারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে গোবিন্দগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বোয়ালিয়া মোড় থেকে বকচর আলু স্টোর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কের থানা মোড় থেকে তরফকামাল পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার তীব্র যানজটের কবলে পড়ছে।
গোবিন্দগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী গোপাল মহন্ত জানান, রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়কের গাইবান্ধার ৩২ কিলোমিটার অংশের বেশিরভাগই চলাচলের উপযুক্ত হয়েছে। কিন্তু গোবিন্দগঞ্জের আই হাসপাতাল থেকে হিমাদ্রী কোল্ড স্টেরেজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে যানজট লেগেই থাকছে। এখানে ১২০ ফিট সড়ক থাকলেও ৩০ ফিটের মত জায়গা দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। ফলে তীব্র জ্যামে আটকে সময় অপচয়ের পাশাপাশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। তার উপর বৃষ্টিতে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে সব থেকে বিপাকে পড়ছে দূরপাল্লার যাত্রীরা।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাইবান্ধাগামী অরিন পরিবহনের যাত্রী সিরাজ জানান, গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ী বাসে যেতে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। সেখানে তিন ঘন্টা লেগেছে। তাহলে দুর্ভোগ কতটা ভয়াবহ একবার চিন্তা করে দেখেন।
তিনি বলেন, এক ঘন্টায় ২০০ গজও এগোতে পারেনি বাস। দ্রুত এ রাস্তার কাজ শেষ হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সড়কে সৃষ্ট গর্ত পানিতে ডুবে থাকায় ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। যে কারণে শহর এলাকায় যানজট হচ্ছে। হাইওয়ে থানা পুলিশ যানজট নিরসনে গতকাল সোমবার থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর শাহ আলম মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, যানজট মোকাবিলায় আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও কাজ করছে। মূলত চলমান ছয় লেন সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলেই যানজট থেকে মুক্তি মিলবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক গাইবান্ধার দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফাঁসিতলা থেকে উত্তরে সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার। দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগের মহাপরিকল্পনার ‘সাউথ এশিয়ান সাব–রিজিওনাল ইকোনমিক করপোরেশন’ (সাসেক) প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের এই ৩২ কি.মি. সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে ধাপেরহাট পর্যন্ত এই ৩০ কি.মি. অংশে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ (সিএসসিইসি)।