বিলুপ্তির পথে বাংলাদেশের প্রথম রেল স্টেশন ‘জগতি’



এস এম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের প্রথম রেল স্টেশনের নাম ‘জগতি’। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রথম রেলগাড়ি চলেছিল। ১৫৮ বছর বয়সী রেল স্টেশনটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ রেলস্টেশনে দু’টি লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কোনও ট্রেন থামে না।

ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির তৈরি সেই সময়ে ব্রডগেজ রেলপথ ধরে রানাঘাট থেকে দর্শনা হয়ে একটি ট্রেন এসে থেমেছিল কুষ্টিয়ার এই জগতি রেলস্টেশনে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কাজের জন্য রেলপথ চালু করে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ অঞ্চল বেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এই জগতিতে রেলপথ ও স্টেশন নির্মিত হয়। পরবর্তীতে এখানে ‘কুষ্টিয়া চিনিকল’ প্রতিষ্ঠিত হলে আখ সরবরাহ ও অর্থনৈতিক কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এই রেলস্টেশন।

যে স্টেশন জুড়ে থাকত মানুষের ব্যস্ততা, জ্বলেছে চকচকে আলো, সেখানে এখন ভুতুড়ে পরিবেশ। পরিত্যক্ত দ্বিতল ভবনটি এক সময়ের বিখ্যাত জগতি রেলস্টেশন। ভবনে ফাটল ধরায় ওপর তলাতে যাওয়া নিষেধ। ভেঙে পড়েছে ওয়েটিং রুম আর ক্ষয়ে গেছে প্ল্যাটফর্ম। ১৯৮৪ সালেও যেখানে ২৬ জন কর্মকর্তা ছিল এখন সেখানে মাত্র একজন কর্মকর্তা পাহারা দিয়ে রেখেছেন স্টেশনটি।

জগতি রেলস্টেশন দেখাশোনার জন্য দায়িত্বে নিয়োজিত পিম্যান বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি এখানে আট বছর আছি। এই সাত বছর আগেও এখানে ছয়জন স্টাফ ছিলাম। এখন শুধুমাত্র আমি স্টেশনটি পাহারা দিয়ে রেখেছি। স্টেশনের পাশ দিয়ে একটি রেল গেট রয়েছে মাঝে মাঝে সেটিও আমাকে দেখতে হয়। ট্রেন আসলে আমি ঘণ্টা দেব, নাকি রেল গেট ফেলবো, একা এসব করা যায় না। তারপর সন্ধ্যা হলে এখানে কুকুর বিড়ালও আসে না, বিদ্যুৎ নেই, হারিকেনে তেল থাকে না, মাঝে মাঝে অন্ধকারে থাকি। সন্ধ্যার পরে ভুতুড়ে পরিবেশ হয়। এ সময় নেশাখোররা এসে এটা ওটা চুরি করে নিয়ে যায়। বাথরুম নেই, গোসলখানা নেই, এভাবে এখানে থাকা যায় না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বললে তারা বলেন, ইচ্ছে হলে চাকরি করেন না হলে করবেন না। বৃদ্ধ বয়সে পেটের দায়ে চাকরি করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখন সারাদিনে মেইল ও স্যাটল ট্রেন দুইবার করে থামে। এর আগে বিল্লাল হোসেন ‘৮৪ সালে এখানে চাকরি করে গেছেন। তিনি বলেন, সেই সময়ে ২৬ জন স্টাফ ছিল। তখন ঈগল পাখির পাখার মতো দেখতে সিগন্যাল দিয়ে গাড়ি এখানে ঢোকা ও বাইরে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ হতো। টিকিট কাউন্টার ছিল, সেইসব কিছুই নেই। সেইসব যন্ত্রাংশ কিছুই নেই। আরো কিছু আছে যা পড়ে থেকে থেকে নষ্টের খাতায় চলে যাচ্ছে।

গেল ৩০ বছর ধরে রেল স্টেশনে চায়ের দোকান দিয়ে বসে আছেন ফিরোজ আলী। তিনি বলেন, জগতি হেভি স্টেশন, ছোট বেলায় মানুষের আর রেল গাড়ির ভিড়ে এখানে আসা যেত না। রেল গাড়ির নিচ দিয়ে এখানে আসতাম। স্টেশন তারকাটা দিয়ে ঘেরা থাকতো, আমরা দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম। স্টেশনে লোকজন বোঝাই থাকতো। মানুষের ভিড়ে অনেক সময় ট্রেনে উঠাই যেত না। এখন স্টেশনে কিছুই নেই। স্টেশনটি ভালো হলে শুধু আমাদের নয়, সবারই ভালো হবে। সরকারের আয় বাড়বে, এ এলাকারও উন্নয়ন হবে।

এলাকাবাসী বজলুর রশিদ বলেন, এই সেদিনের কথা তখনও দু’টি ইন্টারসিটি রেল গাড়ি এখানে দাঁড়াত। ডাবল রেল লাইন ছিল। এখন আর ইন্টারসিটি দাঁড়ায় না, ডাবল লাইন উঠে গিয়ে এখন সিঙ্গেল লাইন হয়েছে। যাত্রীদের অসুবিধে হয়। কখন কোন রেলগাড়ি দাঁড়ায় আমরা টেরও পাই না। এ জন্য যাত্রীও কমে গেছে। তিনি বলেন, দেশের প্রথম রেল স্টেশন এটি কিন্তু এ পর্যন্ত এর গায়ে হাত দেয়া হয়নি (উন্নয়ন কাজ হয়নি)। বাথরুম, গোসলখানা থেকে শুরু করে এখানে সবই ছিল। আস্তে আস্তে এগুলোর কিছুই এখন নেই। ব্রিটিশ আমলে তৈরি রেলের দৃষ্টিনন্দন বিল্ডিংও পরিত্যক্ত হয়েছে। যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়তে পারে।

বয়সে প্রবীণ আফতাব উদ্দিন বলেন, জগতি খুব বড় স্টেশন ছিল। এরকম দোতালা স্টেশন আমার জানামতে আর নেই। এর সবই নষ্ট হয়ে গেল। বহু বছর হলো বৃট্রিশ আমলে তৈরি বিল্ডিংটিতে কেউ যায়নি। ভেতরে গাছ জন্মেছে। ওয়াল ফেটে ভেঙে গেছে। মানুষ এখন এখানে ১০ মিনিট বসবে সেই জায়গাও নেই। মাঝে পাথরের দিতে রেল গাড়ি এসে দাঁড়ায়। পাথরওলারা যেটুকু জায়গা রয়েছে সেটিও দখল করে রেখেছে।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি দেশের সব স্টেশনে কাজ হচ্ছে বা হয়েছে তবে, দেশের প্রথম এই রেল স্টেশনের কাজ কেন হয় না, কেন এখানে ইন্টারসিটি দাঁড়াবে না? এর ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, অন্যকোন দেশ হলে ইতিহাসের অংশ হিসেবে এই জগতি রেলস্টেশনকে ঐতিহাসিক স্থানে রূপ দিত। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এখানে ট্রেন না থামা, শহর গড়ে না ওঠা, সড়ক পরিবহনের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন চক্রান্তের ফলে গুরুত্ব হারিয়েছে দেশের প্রথম রেলস্টেশনটি। যে কারণে এটি উন্নয়ন বঞ্চিত।

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান বলেন, কেন এই স্টেশনের কাজ হয়নি, মূলত এটি আমাদের একটি যন্ত্রণার কারণ। অন্যান্য দেশ হলে এই জগতি রেল স্টেশনটি হতো বিশ্ব হেরিটেজের অংশ। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারিনি। দেশের প্রথম রেল স্টেশন হিসেবে এটির আরও উন্নয়ন করা দরকার ছিল। কিন্তু কোনও সরকারই এটি করেনি। এর ফলে রেলের ইতিহাসই নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটিকে হেরিটেজের অংশ করা উচিত ছিল।

ড. আমানুর আমান জগতি রেল স্টেশনের গুরুত্ব হারানোর পেছনে সরকারের উদ্যোগ না দেয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সেই সময়ে এটির উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হলে কুষ্টিয়া শহরটিই হয়তো জগতি কেন্দ্র করে গড়ে উঠতো। তিনি আরও বলেন, এখনও সময় আছে আমি মনে করি দ্রুত বর্তমান সরকার সেই উদ্যোগ নেবেন।

এসব বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে জগতি রেলস্টেশনের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে জায়গা দখলমুক্ত করা হবে এবং স্টেশনটি আধুনিকায়ন করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।

   

পদ্মা নদী বাঁচলে রাজশাহী বাঁচবে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পদ্মা নদী রক্ষায় দূষণ ও দখলমুক্ত করে বাঁচানোর দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী কমিটি।  

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি হয়।

পদ্মা নদী বাঁচলে রাজশাহী বাঁচবে, পরিবেশ দূষণ থেকে রাজশাহী রক্ষা পাবে মন্তব্য করে কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, যারা পদ্মা নদীকে বিনোদনের জন্য তৈরি করেছে তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। এছাড়া কর্মসূচি থেকে, পদ্মা নদী ছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের ছোট ছোট নদ-নদী, খাল-বিল পুকুল জলাশয় দখল ও দুষণ মুক্ত করার দাবি জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, পদ্মা নদীর বেশির ভাগ এখন দখল হয়ে গেছে। পদ্মার ভেতরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক স্থাপনা, ক্লাব, বিভিন্ন গোষ্ঠীর অফিস দোকানপাট। গত এক দশকে রাজশাহী নগরের অসংখ্য পুকুর জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। এখন এসব ভরাট অব্যাহত রয়েছে। পুকুর ও নদী খেকোদের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ প্রশাসনে বারবার আবেদন করা হলেও কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। ফলে রাতারাতি পুকুর জলাশয় ও নদ নদী দখলে চলে যাচ্ছে। এসব অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহীর সভাপতি জামাত খানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, বাপার উপদেষ্টা দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আফজাল হোসেন, নাচোল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবু তাহের খোকন, আদিবাসী নেতা সুভাষ চন্দ্র হেমব্রন, নারী নেত্রী ডা. সেলিনা বেগম প্রমুখ।

;

রাজশাহীর যুবলীগের দ্বন্দ্ব মিডিয়ার সৃষ্টি!



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। যার কোনো ভিত্তি নেই এবং এটি মিডিয়ার সৃষ্টি বলে দাবি করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।

নেতারা বলেন, যুবলীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে তা মিডিয়ার সৃষ্টি হতে পারে বা ব্যক্তি কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের কারণেও হতে পারে। এর কোনো ভিত্তি নেই। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে একটি সুন্দর নেতৃত্ব গঠন করা হবে। ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ত্যাগী, পরীক্ষিতরা মূল নেতৃত্বে আসবে বলে জানান তারা।

দীর্ঘ ৭ বছর পর রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নগরীর পাঠানপাড়া শিমুলতলা মোড়ে সকাল ১০টায় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। ইতোমধ্যে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে।

এর আগে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ মার্চ রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি পদে রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোশাররফ হোসেনকে মনোনীত করা হয়।

;

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যা আতঙ্কে মানুষ



আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে তিস্তাসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সে.মি, বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরীর বদরগঞ্জে ১৪ সে.মি ও পুনর্ভবার দিনাজপুর পয়েন্টে ১ সে.মি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিকাল তিনটার দিকে পানি কিছুটা কমেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

পাউবো জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, কুলিখ, টাঙ্গন, যমুনেশ্বরী এবং পুনর্ভবা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করায় ইতিমধ্যে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির স্রোতের কারণে নিয়ম অনুযায়ী তিস্তা ব্যারেজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। নদীর অববাহিকা, চর, দ্বীপচরের মানুষদের সতর্ক থাকাসহ প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুর, গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়ন, নীলফামারীর ডিমলার কালিগঞ্জ, ঝাড়সিংহেশ্বর, খগারচর, জুয়ার চর, বাংলাপাড়া, উত্তর খড়িবাড়ী, বাইশপুকুর ও জলঢাকার ফরেস্টের চর, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়ী, লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারীর মহিষখোচা, পলাশী ও সদরের ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের কেল্লাপাড় এলাকার এনাম ইসলাম বলেন, কয়েক দিন থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উজানের ঢল। এতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতিমধ্যে আঙিনায় হাঁটুপানি হয়েছে। বড় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মিটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ জন্য চরাঞ্চলের মানুষকে সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌলা জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়ায় সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

;

বগুড়ায় রাতারগুলের সৌন্দর্য



মাহবুবা পারভীন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর বাজারে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটি কালভার্ট। কালভার্টে দাঁড়িয়ে দেখা মেলে স্বচ্ছ মিষ্টি নদীর পানি। চারদিকের পরিবেশ দেখে মনে হয় এ যেনো এক টুকরো রাতারগুল।

কালভার্ট থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে দেখা মিলল স্বচ্ছ জলে নৌকা বাইতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের একটি দল। তারা মুরাদপুর ভদ্রাবতী নদী  ও বগুড়ার বুকে এক টুকরো রাতারগুলের নাম শুনেছেন ইউটিউবে। সেখান থেকেই তাদের ইচ্ছে হয় এই ভদ্রাবতী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তাই শহর থেকে ছুটে আসেন মুরাদপুর গ্রামে। আরও খানিকটা এগোতেই চোখে পড়ল এই গ্রামের বাসিন্দারা কেউ মাছ ধরছেন, কেউ আবার স্বচ্ছ পানিতে ঝুপ করে নাইতে নেমেছেন।

দুই ধারে গাছপালা তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রাবতী নদী। নদীর দুই ধারের গাছগুলো বেশ ডালপালা ছড়িয়ে আছে। গাছগাছালির ভেতর দিয়ে নদীতে ঘুরতে মনে হচ্ছে এ যেনো রাতারগুল। আহ! রাতারগুল বগুড়ায়! সুন্দর সবুজ মনোরম পরিবেশে ভদ্রাবতী নদী যেনো সেজেছে তার অলৌকিক রূপে। নৌকার তলায় ঢেউয়ের শব্দে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হলো। নীরব প্রকৃতি আর মৃদুমন্দ বাতাসে এরই মধ্যে নিস্তব্ধতা ভাঙে গাছে বসে থাকা পাখির ডাকে, হঠাৎ ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয় একঝাঁক পাখি।


কোলাহলহীন শান্ত-স্নিগ্ধ ভদ্রাবতী ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করে চলে। এই ভদ্রাবতী নদীর উৎপত্তি নিয়ে কল্প কাহীনিও শোনা যায় এলাকাবাসীর মুখে। নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে রয়েছে ভদ্রাবতী নদী। বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুল বিল থেকে উৎপত্তি ভদ্রাবতী নদীর।

এই নদীর সঙ্গে সিংড়ার চলনবিল ও যমুনা নদীর সংযোগ রয়েছে। বুড়ইল ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর কুদ্দুসের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, দাদার মুখে শুনেছি রাজার শাসন আমলে শাবরুল দিঘীর বুক চিরে ভদ্রানদীর আবির্ভাব ঘটে। সেন বংশের অচিন্ত কুমার নামের শেষ রাজার আমলে তার কন্যা ভদ্রাবতীর নাম অনুসারে নদীর নামকরণ। আগে বর্ষা মৌসুমে ভরা পানিতে নদী থৈ থৈ করতো। এখন নদীতে পানি থাকেনা। এলাকার মানুষ হিসেবে কুদ্দুসের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভদ্রাবতী খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও একটি সুইচ গেট।

ভদ্রাবতীর সৌন্দর্য দেখতে এসেছেন শেরপুর উপজেলা থেকে শামিম নামের এক ছাত্র। শামিম বলেন,  ইউটিউবে দেখলাম বগুড়ায় রাতারগুল, রাতারগুল সিলেটে অবস্থিত হওয়ার কারণে এবং অনেক খরচের জন্য আমি যেতে পারিনি তাই এলাকার পাশে হওয়ায় দেখতে চলে এলাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। ইউটিউবে দেখেছি সিলেটের রাতারগুল, আর এখানে এসে দেখলাম অনেকটাই মিল আছে। এটা আমার কাছে গরিবের রাতারগুল বললে ভুল হবে না।


শামিম হোসেন নামের এক মাঝি বলেন, আমাদের এলাকায় এই ভদ্রাবতী নদী একটি দর্শনীয় স্থানের মত হয়ে গেছে।

বুড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জবায়ের আহমেদ বলেন জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ এই তিন মাস পানি থাকে তারপরে আর পানি থাকে না নদীতে। পানি কম হওয়ার কারণে বাকি সময় নৌকাও চলে না। ১৩ কিলেমিটার জুড়ে নদীটির দুই পাশে সবুজ গাছ পালা দিয়ে যে সুন্দর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেটি দেখতে ছুটে আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনাথীরা।

;