যমুনার চরে ভাসমান পাটের হাট
সিরাজগঞ্জে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে নৌকায় বসেছে ভাসমান পাটের হাট। শত বছরের এই ব্যতিক্রমী পাটের হাট এখন সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নৌকাতেই হাঁক ডেকে বিক্রি হচ্ছে পাট।
নদীপথে ক্রেতা বিক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধার কারণে ভাসমান এ হাট সরগরম হয়ে ওঠে ভোর থেকেই। চলে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। শত বছর ধরে বসছে জেলার কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়ার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনায় জটলা বেধেছে অনেকগুলো নৌকা। দূরদূরান্ত থেকে নৌকা যোগে এ ভাসমান পাটের হাটে পাট কেনা-বেচা করতে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়েও প্রচুর পাট কেনা বেচা হয়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম একটু কম। এই জনপ্রিয় হাটটি বসে সপ্তাহের শনি ও বুধবার।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ভাসমান পাটের হাটে গিয়ে দেখা যায়, কাজিপুরসহ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, বগুড়ার ধুনট, শেরপুর ও সারিয়াকান্দির ক্রেতা বিক্রেতারা ভাসমান এই হাটে পাট কেনা-বেচা করতে এসেছেন নৌকা যোগে। তীর থেকে এক শ গজ ফাঁকে নোঙর ফেলে নৌকা থামিয়ে অর্ধশতাধিক নৌকায় কেনা বেচা হচ্ছে পাট। নৌকাতেই হাঁকডাক চলছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারীরা। নৌকার পাশাপাশি চরাঞ্চলের একমাত্র পরিবহন ঘোড়ার গাড়িতেও পাট বোঝাই করে স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করতে আসেন।
নাটুয়ারপাড়া ভাসমান পাটের হাটে পাট বিক্রি করতে আসা বগুড়ার হোসেন আলী বলেন, চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। ১৬ শ থেকে ২১ শ টাকা মণ পাট বিক্রি করেছেন। পাটের দাম খুব কম।
সারিয়াকান্দির আবুল হোসেন বলেন, পাট কাটা ও ধোয়ার কামলার দাম বেশি। পাটের দাম খুব কম। ৭ মণ পাট ১৫ শ টাকা মণ বিক্রি করছি। খরচা ওঠাই জুলুম। পাট কাটার পর পানির অভাবে জাঁক দিতে দেরি হয়েছিল। তাই পাটের মানও খারাপ একটু খারাপ ছিল।
ভাসমান হাটে পাট কিনতে আসা জামালপুরের ব্যাপারী হারিজ মিয়া বলেন, এখানে পাটের আমদানি বেশি। নৌপথে যাতায়াত খরচ কম তাই এখানে আছি। আজ ৩১২ মণ পাট কিনছি। আগের থেকে অনেক কম দাম। এগুলো আবার নৌকাতেই নিয়ে যাবো।
সারিয়াকান্দির ব্যাপারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতি বছরই এ হাটে পাট কিনতে আসি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যাতায়াত খরচও অনেক কম।
নাটুয়ারপাড়া হাটের ইজারাদার ও কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেফাজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, দূর দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৯ হাজার মণ পাট কেনা-বেচা হয় বলে তিনি জানান।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, এবছর অতিরিক্ত খরার কারণে পাটের আবাদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছি। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাঁক দিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও মোটমুটি বিঘা প্রতি আট-নয় মণ পাট পেয়েছেন কৃষকরা।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা ও নৌ ডাকাতি এড়াতে হাটের দিন যমুনায় পুলিশের বিশেষ টহল থাকে বলে জানিয়েছেন কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত।