অপহরণের দুইদিন পর শিশু উদ্ধার, অপহরণকারী আটক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ভালুকায় অপহরণের দুই দিন পর শিশু ফারিয়া আক্তারকে উদ্ধার করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। শনিবার রাতে অপহরণকারী আসাদ মিয়া নামে একজনকে কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করা হয়। আসাদ কিশোরগঞ্জ সদর এলাকার রাজকুন্তি গ্রামের আছর আলীর ছেলে। 

রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে অপহরণকারী আসাদকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ফারিয়ার বয়স সাত বছর। সে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের শহিদুল্লার মেয়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের শহিদুল্লার স্ত্রী রহিমা খাতুন ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় শিশু ফারিয়াকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় বাদশা টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। একই এলাকায় রহিমার চাচাতো ননদ নাজমা আক্তার তার স্বামী আসাদকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। 

ঘটনার দিন (১৪ নভেম্বর) নাজমা আক্তার ও তার স্বামী আসাদের মাঝে পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া হলে নাজমা তার বাবার বাড়িতে চলে যান।

আসাদের স্ত্রী নাজমার বাবার বাড়ী চলে যাওয়ায় আত্মীয়ের দোহায় দিয়ে আসাদ ফারিয়ার মা রহিমাকে গালমন্দ করে। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে আসাদ মিয়া শিশু ফারিয়াকে মজার খানা খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে। ঘটনার সন্দেহ হলে, ফারিয়ার বড় ভাই শাহ আলম আসাদের ফোনে কথা বললে ১৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে আসাদ।

এ ঘটনায় রহিমা খাতুন বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিশু ফারিয়া অক্তারকে কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে উদ্ধার করে এবং আসাদ মিয়াকে আটক করে। 

ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, অপহরণের খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে দুইদিন পর শিশু ফারিয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে।

   

কুষ্টিয়ায় চাচাতো ভাইকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ঘরের জানালা-দরজা বানানোকে কেন্দ্র করে আপন চাচাতো ভাইদের হাতে মনিরুল ইসলাম মনির মিস্ত্রি (৪৮) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলেও গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের হালসা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মনিরুল ইসলাম মনির মিস্ত্রি উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের হালসা গ্রামের মৃত রহিম মিস্ত্রির ছেলে।

নিহতের মেয়ে মিলি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই আব্দুল্লাহ ঘরের দরজা এবং জানালা তৈরি করতে দেয় চাচা আমিরুলের কাছে। গতকাল রাতে জানালা নেবে না বলে বাক-বিতণ্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে মনিরুল ইসলামের চাচাতো ভাই আমিরুল তার ভাই নাজমুল, এনামুল, মিনা ও কালু লাঠি নিয়ে বাড়িতে এসে আমার ভাই আব্দুল্লাহকে মারধর করেন। এ সময় আমার বাবা ঠেকাতে গেলে তাকেও মারধোর করেন। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই আমার বাবা মারা যান। এবং আমার ভাই আব্দুল্লাহকে (২৫) গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা করেন।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চাচাতো ভাইদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মনিরুল ইসলাম মনির মিস্ত্রি নামের একজন নিহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন।

;

চট্টগ্রামে ডাম্পার-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক-সহকারী নিহত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাটে ডাম্পার-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে। এতে আরও একজন শুরুতর আহত হয়েছেন।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে নাজিরহাট নতুনরাস্তা মাথা এলাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ট্রাকের চালক ভূজপুর থানার ঝিলতলী এলাকার মো. মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মো. রুবেল (২৬) এবং তার সহকারী ও একই এলাকার আব্দুর রশীদের ছেলে মো. আলমগীর (২৮)। এই ঘটনায় আহত হন ডাম্পারে চালক নূর মিয়া। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিষয়টি বার্তা২৪.কম-কে নিশ্চিত করেছেন নাজিরহাট হাইওয়ের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘রাতে নাজিরহাট নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় ডাম্পার-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এরমধ্যে ডাম্পারটি খাগড়াছড়িমুখী ও অন্যটি চট্টগ্রাম শহরমুখী ছিল। দুর্ঘটনায় শহরমুখী ট্রাকের চালক ও তার সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। ডাম্পার চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে তৎক্ষনাৎ স্থানীয়রা উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। ডাম্পার ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।'

;

ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেফতার ৬



md.nazrul
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর মতিঝিল থানার অফিস পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা তুলে বের হওয়া গ্রাহককে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ে ছয় ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।

ডিবি বলছে, এই ডাকাত দলটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিলো। সম্প্রতি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় দলটি জড়িত থাকার তথ্য ছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার (৩ ডিসেম্বর) অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৭), মো. শরিফুল ইসলাম (৪০), মো. আরিফ (৩৪), মো. আলাউদ্দিন (৪৩), আরিফুল ইসলাম আরিফ (৩৬) ও মো. জসিম (৪৩)। অভিযান টের পেয়ে জাকির হোসেন ওরফে বাবু (৪৩) নামের এক ডাকাত সদস্য পালিয়ে যায়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি গোয়েন্দা পুলিশের পোশাক (ডিবির জ্যাকেট), এক জোড়া হাত কড়া, একটি সিলভার রংয়ের হায়েস গাড়ি, একটি কালো রংয়ের খেলনা ওয়াকিটকিসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, ডিবি উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিমের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিলো একটি ডাকাত দল গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়া এক গ্রাহককে তুলে নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ডাকাত সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এক গ্রাহক বড় অংকের টাকা তুলে বের হবেন এমন তথ্যে তারা অপেক্ষা করছেন।

ডিবি প্রধান বলেন, এই চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বড় লেনদেন করা ব্যাংকের গ্রহকদের টার্গেট করে। পাশপাশি ব্যাংকের ভেতরে তাদের সোর্স থাকে। তারাও লেনদেনের তথ্য দেয়। তখন তারা ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের সামনে ওঁত পেতে থাকে। একইভাবে তারা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সামনে ওঁত পেয়ে ছিলো। এই টাকা তোলার তথ্য তাদের কাছে আগে থেকে ছিলো। গাড়িতে ডিবি লেখা, ডিবি লেখা জ্যাকেট পড়িহীত ছিলো। তখন হাতে নাতে ডিবি উত্তর বিভাগ তাদের হাতে নাতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলো উল্লেখ করে হারুন বলেন, এই ডাকাত দলটি নাটোরের বড়াই গ্রামে মোটা অংকের টাকা ছিনতাই করেছে কিন্তু এই ঘটনায় কোনো মামলা হয় নি। ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় ১৬ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছিলো কিন্তু গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। তারা অনেক স্থানে ডাকাতি করেছে যা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, অনেক সময় ডিবির পোশাক দেখতে তাদের কেউ চ্যালেঞ্চ করে না। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় ডাকাতির ঘটনা ঘটলে চুরির মামলা হয়। এটা করা যাবে না। ডাকাতির ঘটনা ঘটলে সেই মামলাই করতে হবে। তাহলে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।

;

তিতাস কেনো আবাসিকের গ্যাস বিল বাড়াতে চায়!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমাটিয়ার বাসিন্দা ডা. মনিরুল ইসলাম গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন। মাসে ৫০০ টাকার গ্যাসেই শেষ করতে পারেন না। মিটার ভাড়াসহ কোন কোন মাসে ৪০০ টাকাতেই চলে যায়।

ডা.মনিরুল ইসলামের আরেকটি বাসা রয়েছে সাভারের অরুনা পল্লীতে। সেখানে কেউ না থাকলেও প্রতিমাসে ১০৮০ টাকা করে বিল দিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। অথচ তার দু’টি সংযোগেই একই বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি অধীনে। মাত্র কয়েক মাইলের ব্যবধানে তার এই দুই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বার্তা২৪.কমকে। আবার তার বাসার উল্টোদিকে ধানমন্ডিতেই মিটারবিহীন গ্রাহকদের বাড়তি বিল দিতে হচ্ছে গ্রাহককে।

তিনি বলেন, আমার লালমাটিয়ার বাসায় ৫ জনের রান্না হয়। কখনই ৫০০ টাকার বেশি রিচার্জ করতে হয়নি। আর যেখানে আমরা থাকি না তারজন্য টানা ৩ বছর ধরে বিল দিয়ে যাচ্ছি। তাও আবার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।

মনিরুল ইসলাম আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, পত্রিকায় নিউজ দেখি গ্রাহকের পকেট কেঁটে প্রফিট বোনাস নেওয়া হচ্ছে। পত্রিকায় দেখেছিলাম কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতবছর প্রত্যেকে ১৮ লাখ টাকা করে বোনাস পেয়েছে। আমরা বিল দিয়ে মরি আর তারা টাকার পাহাড় গড়ছে।

প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী রূপনগর আবাসিক এলাকার (রোড ১৯) বাসিন্দা আবেদ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। সাড়ে ৩’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকার রিচার্জে মাস পার হয়ে যায়। গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা কমবেশি এমনই। যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি তাদের সর্বোচ্চ ৬’শ টাকা খরচ হচ্ছে।

মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বিল আদায় করা হয়। যা বর্তমানে দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার ও এক চুলা ৫৫ ঘনমিটারের সমান। গ্রাহক ব্যবহার করুক, না করুক অথবা বেশি ব্যবহার করলেও । গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলো দশকের পর দশক ধরে বলে আসছে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস বেশি পুড়ছে। এ কথা বলে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়। তাদের বক্তব্য ছিল মিটার স্থাপন করলে তাদের রাজস্ব বেড়ে যাবে। কিন্তু লালমাটিয়া (২০১৬ সালে) এলাকায় প্রথম প্রিপেইড মিটার বসানো হলে রেজাল্ট এলো উল্টো। দেখা গেলো প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারিদের বিল আসছে দেড়’শ থেকে আড়াই’শ টাকা (তখন মিটারবিহীন গ্রাহকদের বিল ছিল দুই চুলা ৪৫০ টাকা )।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেছিলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পাইলট প্রকল্পের রেজাল্ট ভালো। দুই চুলায় মাসে ৩৩ ঘন মিটার গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। তখন দুই চুলায় ৭৭.৪১ ঘনমিটারের বিল নির্ধারিত ছিল। অর্থাৎ ৪৫ ঘনমিটার গ্যাস পুড়ছে গ্রাহকরা।

পাইলট প্রকল্পের আগে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। কিন্তু এখন যতটা পারা যায় বিলম্বিত করার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। ৩৮ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে ৮ বছরে মাত্র ৪ লাখের মতো মিটার স্থাপন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর ধীরে চলো নীতির কারণে গ্রাহক যাতে নিজে কিনে বসাতে পারে সে জন্য চাপ দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

বিইআরসি-২০১৮ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের দ্রুত করার আদেশ দেন। গ্রাহক যাতে নিজেরা মার্কেট থেকে মিটার কিনে স্থাপন করতে পারে সেই সুবিধা উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০২১ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে গ্রাহক নিজের পছন্দমতো দোকান থেকে মিটার ক্রয় করে বিতরণ কোম্পানিতে জমা দেবেন। বিতরণ কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করে গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপন করবে। তবে নানা জটিলতা দেখিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। বাজারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে মিটার স্থাপন করছে কোম্পানিগুলো। তাও আবার ঢিমেতালে। কোম্পানিগুলো একে লুটপাটের নতুন খাত হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে।

বিইআরসি গত বছরের মার্চে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উপর গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।

তিতাস গ্যাস বিদ্যমান এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার (১৩৭৯.৭০ টাকা), দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার (১৫৯১.৯২) করার আবেদন করেছে বিইআরসির কাছে। আবেদনটি চলতি বছরে মে মাসে জমা দিলেও ব্যাপক বিতর্কের পর বিষয়টি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে সম্প্রতি বেশ গোপনে এ বিষয়ে আবার তৎপরতার শুরুর কথা জানা গেছে।

তিতাসের গ্যাস বিল বাড়ানোর প্রস্তাব শিগগিরিই কমিশনের সভায় তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।

তিতাস দাবি করেছেন, নির্ধারিত পরিমাণের (৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার) চেয়ে মিটারবিহীন গ্রাহকগন বেশি গ্যাস ব্যবহার করে। ফলে সিস্টেম লস বৃদ্ধি পেয়েছে। এক চুলা ৭৬.৬৫ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৮৮.৪৪ ঘনমিটার করার আবেদন করা হয়েছে। বিইআরসি আগে যে আদেশ দিয়েছে তা বাস্তব সম্মত ছিল না।

বিইআরসির সাবেক সদস্য (তৎকালীন সদস্য- গ্যাস) মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমারতো মনে হয় ৫০ ঘনমিটারের নিচে করা উচিত ছিল। প্রথমবার জন্য যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়েছিল। তখন শর্ত দেওয়া হয়, প্রিপেইড মিটার বসানো এবং পরবর্তীতে কমিয়ে আনার।

কিসের ভিত্তিতে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের যে সাড়ে ৩ লাখ প্রিপেইড মিটার ছিল সেখানে দেখা গেছে গড়ে ৪৫ এর নিচে ব্যবহৃত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাড়ে ৩ লাখ মিটারকে বিবেচনা করবেন, নাকি তাদের (তিতাস গ্যাস) ১০০ মিটারকে। কোন বিশেষ এলাকায় যদি বেশি গ্যাস ব্যবহার হয়, তাহলে সেখানে দ্রুত মিটার বসিয়ে দিলেই হয়, তার জন্য ৩৪ লাখ গ্রাহকের বিল বাড়ানো যৌক্তিক হবে না।

মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস বিল বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে বিইআরসি। দু’একজন কর্মকর্তা তিতাস ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগসাজসে মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। তারা চান দ্রুততার সঙ্গেই তিতাসের আবেদন বাস্তবায়ন করতে।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তিতাসের ওই আবেদনে সাড়া দিতে গেলে বিইআরসিকে অবশ্যই গণশুনানি করতে হবে। গণশুনানি ছাড়া বিল বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। গণশুনানি শুরু হলে সেখানে এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত দিয়ে কথা বলা হবে। বিল বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা দেখি না।

 

;