পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা করে মাটিচাপা, ঘাতক গ্রেফতার

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাঘাশুর পশ্চিম পাড়া এলাকার সিংহ নদী থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সংস্থাটি বলছে, পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার পরকীয়া প্রেমিকার পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরবর্তীতে ঘাতকরা সিংহ নদীতে মরদেহ মাটিচাপা দিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন

হত্যা ও লাশ গুমে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। তারা হলেন-আঁখি আক্তার (২৪) ও আলাল মোল্লা (৩৫)। এই ঘটনায় আঁখির স্বামী ওমর ফারুক আগেই থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

গ্রেফতার দুই আসামি রুমান শিকদারকে (৩৯) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। নিহত রুমান শিকদার একই এলাকার আবু শিকদারের ছেলে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কুদরত-ই-খুদা এ তথ্য জানান।


ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার কুদরত বলেন, ঘাতক আঁখি আক্তার ও নিহত রোমান শিকদার প্রতিবেশী। আঁখির স্বামী ওমর ফারুক প্রবাসী। এই সুযোগে প্রতিবেশী রুমানের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন আঁখি। বিদেশ থাকাবস্থায় স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি জানতে পেরে দেশে চলে আসেন ওমর ফারুক। দেশে এসে আঁখিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে দুই স্বজনদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা করে আঁখি ও ওমর ফারুক সংসার শুরু করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আঁখি আবারও রুমানেরব সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রুমানের হাত ধরে পালিয়ে অন্যত্র কিছুদিন বসবাস করেন আঁখি। পরবর্তীতে ফারুক অনেক খোঁজাখুঁজির পর আঁখি ও তার প্রেমিক রুমানের সন্ধান পায়। পরে স্বজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা রুমানকে তার প্রেমিকা আঁখিকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রুমান তা অস্বীকার করেন। যার ফলে আঁখি আক্তার তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য স্বামী ফারুকের নিকট ক্ষমা চেয়ে সংসারে ফিরে যান। আঁখি আক্তার তাদের বাসাভাড়া করে থাকা ও পরকীয়ার বিষয়টি রুমানকে গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। রুমান অনুরোধ উপেক্ষা করে বিষয়টি এলাকায় বিভিন্ন জনের কাছে বলাবলি করে আসছেন। আর এতে আঁখি ও ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে রুমান হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ মার্চ গভীর রাতে মোবাইলে আঁখি আক্তার প্রেমিক রুমানকে ঘরে ডাকে। এরপর কথা বলার একপর্যায়ে পিছন থেকে লোহার রড দিয়ে রুমানকে আঘাত করে হত্যা করেন আঁখি ও তার স্বামী ফারুক। নিহতের লাশ বস্তাবন্দি করে গুমের উদ্দেশে প্রতিবেশী আলাল মোল্লার সহযোগিতায় বাড়ির পাশের সিংহ নদীতে লাশটি মাটিচাপা দিয়ে দেয়।

যেভাবে লাশ উদ্ধার ও পরিচয় নিশ্চিত

রুমনকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়ার এক মাস পর চলতি বছরের ২১ মে সিংহ নদীতে নদী খননের কাজ চলার সময়ে নদীতে কাদামাটি কাটার সময়ে ভেকুতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কঙ্কাল উঠে আসে। বিষয়টা স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ জানালে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ কঙ্কালের সঙ্গে একটি অস্পষ্ট নেভীব্লু রংয়ের শার্টের অংশ বিশেষ পায়। কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে নিহতের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা গিয়ে প্রাথমিকভাবে কঙ্কালের সঙ্গে থাকা নেভি ব্লু রংয়ের শার্টের অংশবিশেষ দেখে এটি রুমানের বলে দাবি করেন।

পরবর্তীতে উপপরিদর্শক (এসআই) মাইদুল ইসলাম কঙ্কালের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য কঙ্কালটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে মর্গে পাঠায়। পাশাপাশি এসআই মাইদুল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ৫ মাস থানা পুলিশ তদন্ত শেষে দায়িত্ব পায় পিবিআই। গত আগস্টের ২২ তারিখ মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই'র ঢাকা জেলার একটি দল।

এর আগে কঙ্কাল উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। পরবর্তীতে নিহতের মেয়ে নুছরাত (১২) ও ছেলে সাইফের (৬) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষায় রুমানের পরিচয় নিশ্চিত হয়।