শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকে পরিবহন স্ট্যান্ড, জনজীবনে দুর্ভোগ

  • আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘিরে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা। এর চারপাশে রয়েছে নিম্ন আদালত, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, রাজধানীর ৭টি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটক ও ক্লাসরুমের নিকটবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছে ঢাকা সিটির দশটি গণপরিবহন স্ট্যান্ড।

সার্বক্ষণিক শব্দ দূষণের মধ্যে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বাসগুলো পার্কিং করা থাকে যত্রতত্র। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। অতিরিক্ত শব্দদূষণ বিরূপ প্রভাব ফেলছে জনজীবনে। গণপরিবহণের ধোঁয়া বায়ুদূষণ করছে। জনবহুল এলাকা হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ফটকের মধ্যে তিনটি ফটক ঘিরে রয়েছে দশটি পরিবহনের স্ট্যান্ড। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কবি নজরুল সরকারী কলেজ, গভঃমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল, বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহানগর মহিলা কলেজ, হীড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে একই অবস্থা।

বিজ্ঞাপন

দশটি কোম্পানির নামে এ বাসগুলো রেজিষ্ট্রেশন করা সদরঘাট থেকে ঢাকার বিভিন্ন রোডে। তার মধ্যে রয়েছে- সাভার পরিবহন, আজমেরী গ্লোরী, ভিক্টর ক্লাসিক, বিহঙ্গ পরিবহন, তানজিল পরিবহন, আকাশ পরিবহন, বাহাদুর শাহ্ পরিবহন, সাত নম্বর বাস সার্ভিস, পোস্তগোলাগামী জিপ সার্ভিস ও ঘোড়ার গাড়ি। সদরঘাট থেকে ঢাকার বিভিন্ন রোডে চলাচল করা এসব গাড়ি একেকটি কোম্পানির একাধিক মালিকানায় রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভিক্টোরিয়া পার্কের চারপাশে গণপরিবহনের স্ট্যান্ড ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। এতে করে দীর্ঘ যানযট লেগেই থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে। পাশাপাশি অহেতুক হর্ণ বাজিয়ে এসব এলাকার শব্দদূষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এসব গাড়িতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পথচারীদের আহত হওয়া ও নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও ঘটেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটা গেটেই গাড়ির অবাদ চলাচল ও এসব পরিবহনের স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব গাড়িগুলো যেখানে সেখানে পার্কিং, অহেতুক হর্ণ বাজানো ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো তাদের চলাচল থেকে শুরু করে পড়াশোনার পরিবেশকে বিঘ্ন সৃষ্টি করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, আমরা যখন রাস্তা পারাপার করি তখন আমাদের খুবই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয়।

তারা বলেন, বিশেষ করে বাহাদুরশাহ পরিবহন, ঘোড়ার গাড়িগুলোর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। রাস্তা পার হতে গিয়ে আমরা প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হই। আমাদের প্রধান ফটকের সামনে কোনো স্পিড বেকার নেই। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিরাপদ সড়কের কথা ভেবে শুধু আশ্বাস নয়, একটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বার্তা২৪-কে বলেন, ভিক্টোরিয়া পার্ক দিয়ে পার হওয়ার সময় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বুলিংয়ের শিকার হই। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ পরিবহণ শ্রমিক ও ভাসমান মানুষ। রাস্তায় ভীড়ের কারণে বেশিরভাগ সময় এদের আইডেন্টিফাই করা যায় না। ভীড়ের মধ্যে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করে এসবের বিচার দিতে সাহস হয় না। বাড়িতে জানাজানি হলে এখানে পড়তেও দিবে না। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা পড়তে আসি। প্রশাসনও যেন নারীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে নির্বিকার।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, কলেজের মেইন গেটের সামনে সবসময় জ্যাম লেগেই থাকে। রিক্সা, সিএনজি, প্রাইভেটকারের পাশাপাশি গণপরিবহনের বাসগুলো এখানেই পার্কের পাশ ধরে স্ট্যান্ড করে থাকে। কলেজে ঢুকতে বের হতে, চলাচল করা খুবই কষ্ট। আমাদের বিপরীত পাশেই গভঃ মুসলিম হাইস্কুল। একটু সামনে ২০গজ আগালেই সেন্ট ফ্রান্সিস, সেন্ট গ্রেগরি স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এই মোড় দিয়ে এত এত শিক্ষার্থীর যাতায়াত করা খুবই কষ্ট।

কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান বলেন, ‘স্কুলের সামনে সবসময় ঘোড়ার গাড়ী থাকে। ঘোড়ার মলমূত্রে সবসময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এখানে দাঁড়ানো যায়না বেশিক্ষণ। পাশাপাশি বাহাদুরশাহ পরিবহনের গাড়িগুলো খুব দ্রুত আসে। আমরা অনেক ভয়ের মধ্যে রাস্তা পারাপার করি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বার্তা২৪-কে বলেন, ভিক্টোরিয়া পার্কের চারপাশে বাস স্ট্যান্ড বহুবছর ধরে। এগুলো সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা মেট্টোপলিটন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমাদের ভর্তি পরীক্ষার সময়েও এই বাসগুলো সরাতে পারিনা। এসব বিষয়ে ডিএমপি ও সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে কোতয়ালী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) পিয্যুশ রায় বার্তা২৪-কে বলেন, যে কয়টি গণপরিবহন ঢাকার ভিতর থেকে এখানে আসে, সবাই পার্কের পাশ দিয়ে ঘুরে চলে যায়। এছাড়া বাস ঘুরানোর কোনো জায়গা নেই। এখানে বাস দাঁড়িয়ে থাকা নিষেধ। যদি কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে, ওখানে আমাদের ট্রাফিক আছে তারা সমাধান করবে।