সিলেটে শ্রমিক ধরে নিয়ে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া, নেপথ্যে কী?

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সিলেটে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ (র‍্যাব) কর্তৃক চার শ্রমিকনেতাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ায় পর প্রায় ৫ ঘণ্টা  ছিল অবরোধ।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করেন সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা। আর সেই অবরোধ প্রত্যাহার হয় রাত পৌনে ১০টার দিকে। 

বিজ্ঞাপন

র‍্যাব ওই চার শ্রমিক নেতাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। শুরু থেকেই শ্রমিক নেতারা বলছিলেন কী কারণে, কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তাদের নেতাকর্মীদের তারা সেটা জানেন না। এবার জানা যাক শ্রমিক নেতাদের ধরে যাওয়ার নেপথ্যে কী ছিল।

নেপথ্যে যা ছিল

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়কে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেটসহ সারাদেশের খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। পাইকারি ও খুচরা দামের মধ্যে পার্থক্য দেখা গেছে, উৎপাদনের স্থান থেকে পাইকারি বাজারে পরিবহনের ওপর চাঁদার কারণে সবজির দাম বেড়েছে। তেমনই সিলেটেও বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই প্রেক্ষিতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ (র‍্যাব) অভিযান চালিয়ে শ্রমিক নেতাদের আটক করে নিয়ে যায়।

যদিও শ্রমিক নেতারা বলছেন, ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় র‍্যাব। যাদেরকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ধরে যাওয়া হয়েছে তারা মূলত শ্রমিক ইউনিয়নের কল্যাণে কয়েকটি পয়েন্ট থেকে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে ৩০ টাকা করে তুলতেন।  

আর র‍্যাব বলছে, টাকা তোলার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে না পারায় তারা ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায় এবং মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থেকে ২ জন ও গোলাপগঞ্জ থেকে ২ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দক্ষিণ সুরমার এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

শ্রমিক নেতাদের ভাষ্যমতে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা থেকে পৃথকভাবে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের উপ-কমিটির ৭ নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। কী কারণে কোথায় ধরে নিয়ে গেছে তা কেউই বলতে পারছে না।

এদিকে, সন্ধ্যার পরপরই টিলাগড়-মেজরটিলায় সিলেট-তামাবিল সড়ক, এয়ারপোর্ট রোড, গোলাপগঞ্জে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে ফেলেন শ্রমিকরা। এতে এসব সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে র‍্যাব ও সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের মধ্যকার বৈঠকের পর মুচলেকা নিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে রাত পৌনে দশটার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, র‍্যাব অফিসে রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করছে না বা পণ্যবাহী পরিবহন থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা পয়সাও নেন না।

তিনি বলেন, পরিবহন থেকে যে টাকা তোলা হয় সেগুলো জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়। কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কেউ দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে চিকিৎসা বাবদ ৫-৭ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়াও শ্রমিকের ছেলে-মেয়ের বিয়ের অনুদান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মাজারে অনুদান দেওয়া হয় এখান থেকেই।

এ ব্যাপারে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯ (র‍্যাব) মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউর রহমান সোহেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযানে নামে র‍্যাব। বিভিন্ন স্থানে প্রতিটি ট্রাক থেকে টাকা তোলা হয় বলে জানা যায়। অভিযানের সময় চারজনের কাছে টাকা তোলার কাগজ-পত্র দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেনি এবং কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় ধরে নিয়ে আসা হয়।  

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে রাতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা যোগাযোগ করে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং তারা জানান ট্রাক থেকে তোলা টাকা তাদের অফিসিয়ালি অনুমোদন প্রাপ্ত। বিভিন্ন পয়েন্ট টাকা না তুলে আগামীতে নির্দিষ্ট স্থানে টাকা তুলবেন বলে জানিয়ে মুচলেকা দিয়ে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।