এবার প্রবেশ পত্র দিতে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন সেই প্রধান শিক্ষক

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তির সরকারের বিরুদ্ধে আবারও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এবার তিনি টাকার বিনিময়ে এসএসসির প্রবেশপত্র বিতরণ করছেন।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) স্কুল চত্বরে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি, যেসকল শিক্ষার্থী ফরম পূরণের টাকা বকেয়া রেখেছে শুধু তাদের কাছে টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রধান শিক্ষকের এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। স্কুল সূত্র জানায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে সর্বমোট ২৪৭ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। প্রবেশপত্র দেওয়ার বিনিময়ে প্রতি পরীক্ষার্থীর নিকট গড়ে ৫০০ টাকা করে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সহকারী শিক্ষকদের আপত্তি আমলে নেননি তিনি।

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার ও অফিস সহকারী আহমদ হোসেন প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে টাকা নিয়ে যেতে বলেছেন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ৫২০ টাকা এবং মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ৪৯০ টাকা দিতে বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার স্কুল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিনামূল্যে প্রবেশপত্র দেওয়ার দাবিতে স্কুল চত্বরে অপেক্ষা করছে। অপেক্ষারত বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা জানায়, টাকা ছাড়া প্রবেশপত্র দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক। ৫২০ টাকা করে দিয়ে অফিস সহকারীর কাছে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলেছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা ফরম পূরণের সময় পুরো টাকা দিয়েছি। তবুও আমাদের কাছে ৫২০ টাকা করে দাবি করা হচ্ছে। অনেকে টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নিয়ে গেছে। আমরা টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নেবো না।’

বায়েজিদ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছোট বোন পরীক্ষা দেবে। আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রবেশপত্র নিতে গেলে তিনি ৫০০ টাকা দাবি করেছেন। বলেছেন, ১০ টাকা কম দিও।’

অফিস সহকারী আহমদ হোসেন কয়েকজন পরীক্ষার্থীর কাছে টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র বিতরণের সত্যতা স্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে তিনি টাকা নিয়েছেন বলে জানান। তিনি দাবি করেন, ‘যে পরীক্ষার্থীরা ফরম পূরণের সময় টাকা বকেয়া রেখেছিল তাদের কাছে টাকা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তবে পরে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর টাকা নিতে নিষেধ করে দিয়েছেন। আমরা এখন টাকা ছাড়াই প্রবেশপত্র দেবো।’ অফিস সহকারীর এই দাবিরও সত্যতা মেলেনি।

স্কুলে উপস্থিত সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সামনে কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, তারা ফরম পূরণের কোনও টাকা বাকি রাখেননি। তবুও তাদের কাছে ৫২০ টাকা নিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে। এসময় সহকারী শিক্ষকরা নিরুত্তর থাকেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, ‘এমনটা শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন।’

প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পাশের জনতা ব্যাংক শাখায় তার সাথে দেখা হলে তিনি বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়টা সঠিক নয়। যাদের টাকা বাকি ছিল তাদের কাছে টাকা নেওয়া হয়েছিল। পরে সেটা নিতেও নিষেধ করেছি।

সকল পরীক্ষার্থীর কাছে টাকা দাবি করা ও অনেকের কাছে আদায় করা প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন,‘এমন হয়ে থাকলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’

ফরম পূরণের পর প্রবেশপত্র জিম্মি করে টাকা আদায় বিধিসম্মত কি না, ‘এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, মোটেও বিধিসম্মত নয়।’

দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষার্থীরা বিনামূল্যে প্রবেশপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছে। তবে অবশিষ্ট পরীক্ষার্থীদের কাছে আবারও টাকা আদায় করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, ‘এভাবে টাকা আদায়ের কোনও সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষককে নিষেধ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম এবং নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে মামলাও চলছে আদালতে।